ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম ওয়ানডেতে জয় দিয়ে শুরু চায় আজ বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড দু’দলই

টাইগারদের ইংলিশ পরীক্ষা শুরু

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ৭ অক্টোবর ২০১৬

টাইগারদের ইংলিশ পরীক্ষা শুরু

মিথুন আশরাফ ॥ এ মুহূর্তে ক্রিকেট ঐতিহ্যেই শুধু ইংল্যান্ডের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। অভিজ্ঞতা হোক কিংবা শক্তিমত্তা, কিংবা ইমেজ; সবদিকেই বাংলাদেশ এগিয়ে। তাহলেতো আজ দুপুর আড়াইটায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া প্রথম ওয়ানডেই শুধু নয়, সিরিজই বাংলাদেশের জিতে নেয়ার কথা! দুই দলের মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি জিতে অবশ্য দুই দলই চায় সিরিজে এগিয়ে থাকতে। এরপর রবিবার দ্বিতীয় অথবা ১২ অক্টোবর তৃতীয় ও সিরিজের শেষ ওয়ানডে জিতলেইতো সিরিজ মুঠোবন্দী হয়ে যাবে। নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে আসেননি ওয়ানডের নিয়মিত অধিনায়ক ইয়ন মরগান। একই কারণে এ্যালেক্স হেলসও সিরিজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। ব্যাটসম্যান জো রুটকে রাখা হয়েছে বিশ্রামে। এ তিনজনই হচ্ছেন ম্যাচ উইনার। তারা কেউ বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে নেই। স্বাভাবিকভাবেই ইংলিশ ওয়ানডে দলটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। সেই দুর্বলতার সুযোগ এখন বাংলাদেশ দল নিতে পারলেই হয়ে যায়। পারবে বাংলাদেশ সেই সুযোগ নিতে? ঐতিহ্য, অভিজ্ঞতা, শক্তিমত্তা, ইমেজের কথা বলা হচ্ছিল। এ চারটি দিকেই আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল। তাতে করে প্রথম দুই ম্যাচে ভুগলেও, প্রথম ওয়ানডে ও তৃতীয় ওয়ানডে জিতে সিরিজ জিতে নিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ঐতিহ্য সেই তুলনায় বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাস ১৩৯ বছরের পুরনো। সেই তুলনায় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস ৩০ বছরের পুরনো। দুই দলের ক্রিকেট ইতিহাসে পার্থক্য ১০৯ বছর! আর তাই ক্রিকেট কাঠামোতেও ‘যোজন-যোজন’ পিছিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট। এক কাউন্টি ক্রিকেট দিয়েই ক্রিকেটের ভিত মজবুত করেই চলেছে ইংল্যান্ড। ক্রিকেট ঐতিহ্যে, ইতিহাসে যদি ইংল্যান্ড এগিয়ে থাকে; তাহলে এ মুহূর্তে অন্য সব দিকেই কিন্তু ইংল্যান্ডকে মাত দিচ্ছে বাংলাদেশ। অভিজ্ঞতা, শক্তিমত্তা, ইমেজÑ সবদিকেই ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলছে বাংলাদেশ। প্রশ্ন উঠতে পারে, কিভাবে? অভিজ্ঞতার বিষয়টিতেই আগে আসা যাক। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের জন্য যে দল আছে ইংল্যান্ডের, সেই দলে একজনও নেই যে ১০০ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। তিনজন ক্রিকেটার শুধু পঞ্চাশ উর্ধ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। এরমধ্যে অধিনায়ক জস বাটলার ৭৮ ওয়ানডে, পেসার স্টিভেন ফিন ৬৫ ওয়ানডে ও আরেক পেসার ক্রিস ওকস ৫২ ওয়ানডে খেলেছেন। বাকি সব ক্রিকেটারই ৫০ ওয়ানডের নিচে খেলেছেন। সেই তুলনায় বাংলাদেশের ৬ জন ক্রিকেটার শুধু ৫০ ওয়ানডের নিচে খেলেছেন। আটজনই ৫০-এর উপর ম্যাচ খেলেছেন। আবার পাঁচজন ক্রিকেটার ১০০ ওয়ানডে ম্যাচের উপরে খেলেছেন। এরমধ্যে তামিম ইকবাল (১৫৬ ওয়ানডে), সাকিব আল হাসান (১৬০ ওয়ানডে), মুশফিকুর রহীম (১৬১ ওয়ানডে), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (১২৮ ওয়ানডে) ও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা (১৬৩ ওয়ানডে) আছেন। এ ক্রিকেটাররা আবার বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই ভরসা। দুই দলের ক্রিকেটারদের হিসেব করলেতো ইংল্যান্ড বহু পিছিয়ে। এ সিরিজের দলে থাকা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের সবার ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা মিলিয়ে যেখানে ১০১৮ ওয়ানডে খেলা হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকে-টারদের, সেখানে ইংল্যান্ড ক্রিকেটার-দেরটা মেলালে দাঁড়ায় ৪৩৬ ওয়ানডে। অর্ধেকেরও বেশি ওয়ানডে কম খেলা হয়েছে। ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতায়তো বাংলাদেশই এগিয়ে থাকছে। শুধু অভিজ্ঞতায় নয়, শক্তিমত্তায়ও এ মুহূর্তে বাংলাদেশই এগিয়ে। ওপেনিংয়ে বাংলাদেশ দলে তামিম ইকবাল (১৫৬ ওয়ানডে), ইমরুল কায়েস (৫৯ ওয়ানডে) ও সৌম্য সরকার (১৯ ওয়ানডে) আছেন। তিনজন মিলে যেখানে ২৩৪ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, সেখানে ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় ৩০ ওয়ানডে ও জেমস ভিঞ্চ ২ ওয়ানডে খেলেছেন। বেন ডাকেটেরতো জাতীয় দলের জার্সিই পরা হয়নি এখনও। এরপর তিন নম্বরে সাব্বির রহমান রুম্মন (২৬ ওয়ানডে) আছেন। ইংলিশদের আছেন বেয়ারস্টো (১৯ ওয়ানডে)। এরপর এক এক করে সাকিব (১৬০ ওয়ানডে), মুশফিকুর (১৬১ ওয়ানডে), মাহমুদুল্লাহ (১২৮ ওয়ানডে), মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (২ ওয়ানডে), নাসির হোসেন (৫৬ ওয়ানডে) আছেন। ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস (৪৪ ওয়ানডে), জস বাটলার (৭৮ ওয়ানডে), মঈন আলী (৪৩ ওয়ানডে), সেম বিলিংস (৫ ওয়ানডে) ও ডেভিড উইলি (২০ ওয়ানডে) রয়েছেন। পার্থক্য বোঝাই যাচ্ছে। শেষে গিয়ে বাংলাদেশের মোশাররফ হোসেন রুবেল (৪ ওয়ানডে), মাশরাফি (১৬৩ ওয়ানডে), আল আমিন (১৪ ওয়ানডে), শফিউল ইসলাম (৫৩ ওয়ানডে) ও তাসকিন আহমেদ (১৭ ওয়ানডে) রয়েছেন। সেখানে ইংল্যান্ডের লিয়াম ডওসন (১ ওয়ানডে), লেগ স্পিনার আদিল রশিদ (৩৪ ওয়ানডে), জেক বল (ওয়ানডেই খেলেননি), স্টিভেন ফিন (৬৫ ওয়ানডে), লিয়াম প্লাঙ্কেট (৪৩ ওয়ানডে) ও ক্রিস ওকস (৫২ ওয়ানডে) আছেন। শক্তিমত্তার পার্থক্য সবদিকেই বোঝা যাচ্ছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে যে ৫ ওয়ানডে ম্যাচের সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে জিতেছে ইংল্যান্ড, সেখানে একমাত্র এক শ’র বেশি ওয়ানডে খেলা মরগান ছিলেন। সেই সঙ্গে হেলস ও রুটও দুর্দান্ত পারফর্ম করে সিরিজ জেতান। এবার তারা কেউই নেই। শক্তিতেতো বাংলাদেশই এগিয়ে থাকছে। শক্তিমত্তার সঙ্গে ইমেজেও এগিয়ে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বর্তমান দলের এমন কেউ নেই যে বিশ্ব কাঁপানো ক্রিকেটার। সেই তুলনায় বাংলাদেশে তামিম, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, মাশরাফি, তাসকিনরাতো বিশ্ব মাতাচ্ছেন। সাকিবতো সবাইকেই ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে চলে গেছেন। এখন এই এগিয়ে থাকা কাজে লাগাতে পারলেই হলো। সিরিজ জেতা গেলেই হলো। সর্বশেষ দুই ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে জিতেছে বাংলাদেশ। পুরোশক্তির ইংল্যান্ড দল থাকার পরও জিতেছে। এবারতো সেই তুলনায় দুর্বল দলই ইংলিশরা। আজ প্রথম ম্যাচে জয় দিয়েই সিরিজ জেতার মিশন শুরু হোক বাংলাদেশের, সেই প্রত্যাশাই এখন সবার।
×