ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মণ্ডপে মণ্ডপে ধূপ ধুনো, ঢাকের বাদ্য শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন

আজ ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে ৫ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৭ অক্টোবর ২০১৬

আজ ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে ৫ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বোধন শেষে আজ শুক্রবার ষষ্ঠী পুজার মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটছে শারদীয় দুর্গোৎসবের। বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপুজা। শেষ হবে আগামী ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ-উলুধ্বনি আর ভক্তকুলের আবাহনের মন্ত্রোচ্চারণে দেবি দুর্গার স্বর্গ থেকে মর্তে আগমন ঘটেছে। পুজোর মন্ত্রোচ্চারণ, মন্দিরে মন্দিরে ধূপ-ধুনোয় ভক্তদের নৃত্য, আরতি, আর ঢাক-ঢোল, কাঁসর-মন্দিরার পাশাপাশি মাইকের আওয়াজ আর বর্ণাঢ্য আলোকচ্ছটায় আজ সারাদেশের পুজোম-প উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে দুর্গতিনাশিনীর আগমন আনন্দে বিহ্বল বিশ্বের কোটি কোটি হিন্দু ধর্মাবলম্বী। প্রতিমা তৈরি শেষ। বাহারি রং চড়েছে প্রতিমার গায়। নিপুণ শিল্পী তার তুলির আলতো ছোঁয়ায় জাগিয়ে তুলেছেন মা দুর্গাকে। জেগে উঠবেন সরস্বতী। গণেশের গায় উঠেছে নকশীদার কুচির দুধসাদা ধুতি। মা লক্ষ্মীর হাসি ঝরে পড়ছে ম-পগুলোতে। আজ ষষ্ঠী পুজোর মধ্য দিয়ে খুলে যাবে মা দুর্গার স্নিগ্ধ-শান্ত চোখ। জেগে উঠবেন দশভুজা। আশীর্বাদ দেবেন মনোবাঞ্ছা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পূজারীকে। শারদীয় দুর্গোৎসবকে বর্ণাঢ্য ও আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সারাদেশে এখন উৎসবের আমেজ। শারদোৎসবে মাতোয়ারা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি মানুষ। পুজো উপলক্ষে সারাদেশে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এবার সারাদেশে ২৯ হাজার ৩৯৫ পুজোম-পে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে; যা গতবারের তুলনায় ৩শ’টিরও বেশি। দুর্গতিনাশিনী দুর্গা এসেছেন বিশ্ব শান্তির জন্য তথা সবার মঙ্গলের তরে। কিন্তু অসুরবিনাশিনী জগজ্জননী দেবি দুর্গা বাঙালীগৃহে আসেন অন্যভাবে। কৈলাস ছেড়ে প্রতিবছর তিনি আসেন বাবার বাড়িতে কন্যা উমারূপে। দেবিদুর্গার সঙ্গে প্রতি শরতে মর্তে আসে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ। এই চালচিত্রে দেবাদিদেব শিবও বাদ যান না। লক্ষ্মী সমৃদ্ধি ও সরস্বতী জ্ঞানের প্রতীক। কার্তিক হচ্ছে দেবসেনাপতি, শত্রুবিনাশকারী। আর গণেশ হচ্ছেন সর্বসিদ্ধিদাতা অর্থাৎ মানুষের কামনা পূরণকারী। বাঙালী হিন্দুরা যে কোন শুভ কাজে ইষ্টনাম হিসেবে দেবি দুর্গাকে স্মরণ করে থাকেন। সনাতন বিশ^াস ও পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবিদুর্গা এবার ঘোড়ায় চড়ে আসছেন, এতে রবিশস্য ভাল হবে। দেবি বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। এতে দূর হবে সকল অসুখ-বিসুখ। পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবিদুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি পুজোর আয়োজন করায় দেবির এ পুজোকে বাসন্তীপুজো বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লঙ্কা যাত্রার আগে শ্রী রামচন্দ্র দেবিদুর্গার পুজোর আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবস্যা তিথিতে, যা শারদীয় দুর্গোৎসব নামে পরিচিত। দেবির শরৎকালের পুজোকে এজন্যই হিন্দুমতে অকালবোধনও বলা হয়। শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রথম দিনে আজ শুক্রবার ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবিদুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। আগের দিন বৃহস্পতিবার সায়ংকালে ম-পে ম-পে বেলশাখায় বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবিদুর্গার নিদ্রা ভাঙ্গার জন্য বন্দনা পুজো করা হয়েছে। আজ দেবির আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হবে মূল দুর্গোৎসব। আগামীকাল শনিবার মহাসপ্তমী, রবিবার মহাষ্টমী ও কুমারী পুজো, সোমবার মহানবমী এবং মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে পুজো শেষে বিজয় শোভাযাত্রাসহকারে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হবে। দুর্গোৎসব চলাকালে পুজোর প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতির আয়োজন করা হবে। এছাড়া দেশজুড়ে দুর্গোৎসব চলাকালে ম-পে ম-পে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, নাটক, নৃত্যনাট্যসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পুজোম-পের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার ও র‌্যাব সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। পুুলিশ এবং র‌্যাবের পাশাপাশি প্রতিটি ম-পে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকেশ^রী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল জানান, শারদীয় দুর্গাপুজো কেবল হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, গোটা বাঙালীর সর্বজনীন উৎসব। এই উৎসব সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতো এবারও প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
×