ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের পথ উন্মুক্ত হলো

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৭ অক্টোবর ২০১৬

নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের পথ উন্মুক্ত হলো

সংসদ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘদিন প্রশাসকের পরিবর্তে এবার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের পথ উন্মুক্ত হলো। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল-২০১৬। বিলটি পাসের ফলে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর কোন বাধা রইলো না। তবে পাসকৃত বিল অনুযায়ী, নির্বাচিত কোন জনপ্রতিনিধি পদে থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। নির্বাচনের জন্য তাদের পদত্যাগ করতে হবে। আর নির্বাচিত চেয়ারম্যান বা সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার চার্জশীট গ্রহণ হলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে মন্ত্রণালয়। সরকারের নীতিনির্ধারক সূত্রগুলো আগেই আভাষ দিয়েছে, আগামী ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হতে পারে দেশের সকল জেলা পরিষদের নির্বাচন। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিলটি উত্থাপন করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। তবে তাদের আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদ হবে ২১ সদস্যের। যার মধ্যে একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও ৫ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকবেন। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ভোটে তারা নির্বাচিত হবেন। আরও বলা হয়েছে, আয়তন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলা পরিষদকে ১৫টি ভাগ করা হয়েছে। একভাগে একজন করে সদস্য ও প্রতি তিনটি ভাগে একজন করে সদস্য সংরক্ষিত আসন বিবেচনায় নির্বাচিত হবেন। বিলের ৬ ধারার ‘চ’ উপ-ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বর্তমান প্রশাসক এবং নির্বাচিত এমপিসহ অন্যদের বর্তমান পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। আর ১০ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের কোন সদস্য ফৌজদারি মামলায় চার্জশিট প্রাপ্ত হলে তিনি বরখাস্ত হবেন। বিলে অরও বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে চেয়ারম্যানের কাছে। তবে তার অনুপস্থিতিতে কাউন্সিলরদের মধ্যে থেকে একজন বা সরকারী কর্মকর্তারাও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। সরকার গেজেট করে সরকারী কোন কর্মকর্তাকেও এ দায়িত্ব দিতে পারবে। উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। এর আগে ৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেন। গত ৪ অক্টোবর বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। ওই দিনই কমিটির বৈঠক ডেকে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে সংসদীয় কমিটি। যা গত ৫ অক্টোবর সংসদে উত্থাপন করা হয়। বৃহস্পতিবার পাস হওয়া এই বিলটিতে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলে আইনে রূপ পাবে। এই আইনের আলোকে আগামী ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অধ্যাদেশ নিয়ে সংসদে ক্ষোভ ॥ এদিকে জেলা পরিষদ আইনটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করায় তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী। সংসদ অধিবেশনে বিধি ১৪৪-এর আওতায় সিদ্ধান্ত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এর আগে এই প্রস্তাবের উপর আলোচনার সুযোগ নিয়ে ডাঃ ফরাজী বলেন, সংসদকে পাস কাটিয়ে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়। নির্বাহী ক্ষমতার প্রয়োগ করতে এটা করা হয়েছে। না হলে দেশে কি এমন জরুরী পরিস্থির সৃষ্টি হলো যে সংসদ অধিবেশন আহ্বানের একদিন আগে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। এটা সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য খারাপ দৃষ্টান্ত। তাই আমি অধ্যাদেশটি সংসদে অননুমোদন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত প্রস্তাব দিয়েছি। জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, গণতন্ত্রের জন্য জরুরী প্রয়োজনেই অধ্যাদেশটি জারি করা হয়। ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে মাত্র তিনটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছে। তাহলে উনি নির্বাহী ক্ষমতা দেখানোর প্রবণতা কোথায় দেখলেন? তিনি বলেন, এই সরকারের একটি ভিশন আছে। সরকার গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে চায়। অথচ একমাত্র জেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই। গণতান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী দ্রুত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার জন্য এই অধ্যাদেশটি জারি করা প্রয়োজন ছিল।
×