ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সব শঙ্কা কাটিয়ে আজ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড ওয়ানডে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৭ অক্টোবর ২০১৬

সব শঙ্কা কাটিয়ে আজ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড ওয়ানডে

মিথুন আশরাফ ॥ সব জল্পনা-কল্পনা, নিরাপত্তা শঙ্কা দূর করে অবশেষে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ দুপুর আড়াইটায় প্রথম ওয়ানডে দিয়ে সিরিজ শুরু হচ্ছে। ম্যাচটি বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল গাজী টিভি (জিটিভি) সরাসরি দেখাবে। সিরিজটি নিয়ে অনেক শঙ্কা ছিল। জুলাইয়ে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ইংল্যান্ড দল বাংলাদেশে খেলতে আসবে কিনা, সেই শঙ্কা ছিল। অবশেষে তা দূর হয়ে যায়। ইংল্যান্ড দল ঢাকায় এসে একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে। আজ ওয়ানডে খেলতেও নামবে। যদি বৃষ্টি কোন বাধা তৈরি না করে, তাহলে ঠিকঠাকমতোই ম্যাচটি হবে। পুরো ৫০ ওভার খেলা হবে। আর যদি বৃষ্টির বাগড়া হয়, তাহলে ওভার কেটে খেলা হবে। দিনটিতে যদি খেলা নাই হয়, তাহলে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যাবে। কারণ নেই কোন ‘রিজার্ভ ডে’। অবশ্য বৃষ্টির ভাবনা কেউই করছে না। সবাই চায় ম্যাচটি পুরোটাই হোক। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেটই হোক। তাতে শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ জিতুক, সেই আশাও করা হচ্ছে। পারবে বাংলাদেশ জিততে? বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বৃহস্পতিবার সিরিজ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের ফেবারিট মানতে নারাজ। তবে সিরিজ জয়ের যে স্বপ্ন আছে, সেই ইঙ্গিত ঠিকই দিয়েছেন। বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডের ব্যাক আপ ক্রিকেটাররাও অনেক ভাল। যারা এসেছে, ওরা অভিজ্ঞ। ওদের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো অনেক শক্তিশালী। যারা এসেছে তারা যথেষ্ট যোগ্য ও ভাল বলেই এসেছে। একই সঙ্গে ওদের ম্যাচ উইনিং ক্রিকেটার অনেক আছে, যারা একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। আমাদের ফেবারিট বলা কঠিন। ভাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবং আমরা সেটির জন্য প্রস্তুত।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘তবে প্রতিটি সিরিজ থেকে আমাদের অবস্থান ও পারিপার্শ্বিকতা যদি চিন্তা করেন, আমরা এখন ভাল খেলছি। আমাদের কাজ এখন ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। আমাদের কাছে প্রতিটি সিরিজই গুরুত্বপূর্ণ। সেদিক থেকে আলাদা করে দেখছি না এই সিরিজ। কেউই দেখছে না। আরেকটি নতুন সিরিজ। সবাই খুব রোমাঞ্চিত। আমরা যদি ভাল খেলি, সিরিজ জিততে পারি।’ ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলারও সিরিজ জয়ের আশা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ‘আমরা প্রস্তুত। আমার মনে হয় প্রস্তুতি ম্যাচে আমাদের যে পরিস্থিতি ছিল, সেটাতে দারুণ অনুশীলন হয়েছে। আমরা সেই দিনটাতে অনেক গরমের মধ্যে মাঠে থেকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে ভালভাবেই উন্নতি করেছি। সবাই খুব ভাল ব্যাট করেছে। খুব ভাল হয়েছে যে জিতে এসেছি এবং সেটার প্রদর্শনীটা আরেকটা ওয়ানডেতে করতে চাই। জয় অভ্যাসে পরিণত করতে চাই। দারুণ জয় ছিল এবং আরও পাওয়ার দিকে মনোযোগী।’ প্রস্তুতি ম্যাচটি ইংল্যান্ডকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ দলকেও আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। বিসিবি একাদশের হয়ে খেলে ইমরুল কায়েস ১২১ রানের ইনিংস খেলেছেন। মুশফিকুর রহীমও ৫১ রানের ইনিংস খেলে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। যেটি বাংলাদেশ দলের জন্য স্বস্তিদায়কই। নাসির হোসেনও ৪৬ রানের ইনিংস খেলেছেন। আবার দলের স্কোরবোর্ডে ৩০৯ রানও জমা হয়। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের মনে, বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের মনে এমন বিশ্বাস জন্মে গেছেÑ ইংলিশ বোলারদের বিপক্ষে রান করা সম্ভব। আবার বোলাররাও আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন। বিশেষ করে স্পিনাররা। কারণ মিরপুরের উইকেটে স্পিনটা ভাল ধরছে। যদিও প্রস্তুতি ম্যাচে জেতা যায়নি। ২৩ বল বাকি থাকতেই বাটলারের অপরাজিত ৮০ ও মঈন আলীর ৭০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩১৩ রান করে জিতে যায় ইংল্যান্ড। তবুও ব্যাটিং ভাল হওয়ার আত্মবিশ্বাস আছে। একইভাবে ইংল্যান্ডেরও আত্মবিশ্বাস আছে ব্যাটিং নিয়েই। দলটি রান অতিক্রম করতে চায় যেন সব সময়। সর্বশেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের তিনটিতেই পরে ব্যাট করে দুটিতে জিতেছে। আগে ব্যাট করেও ৩০০ রানের নিচে করেনি। এমনকি ৪৪৪ রানও করেছে একটি ম্যাচে। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫ ম্যাচের সিরিজেও একই কাহিনী ঘটেছে। ৫ ম্যাচের চারটিতেই পরে ব্যাটিং করে সিরিজ জিতেছে। যে ম্যাচে আগে ব্যাট করেছে, সেই ম্যাচে ৩০০ রানের বেশি করেছে। ইংল্যান্ডের ব্যাটিংটা খুব শক্তিশালী। বাংলাদেশকে জিততে হলে মূলত ইংল্যান্ডের ব্যাটিংকেই ছন্নছাড়া করে দিতে হবে। নয়ত বিপত্তি ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। তবে বাংলাদেশের সামনে প্রেরণাও আছে। ২০১১ ও ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সর্বশেষ দুইবার ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। দুইবারই জিতে। যতই শক্তিশালী দল হোক ইংল্যান্ড, শেষ দুইবার জিতেছে বাংলাদেশই। গত চার ম্যাচের তিনটিতেই আবার বাংলাদেশ জিতেছে। সেই জয়ী ম্যাচগুলো থেকে প্রেরণা পেয়ে এখন আজ প্রথম ওয়ানডেতেও জয় মিললেই হয়ে যায়। তাহলে সামনে যে আরও দুটি ম্যাচ রয়েছে, সেখান থেকে আর একটি ম্যাচ জিতলেই তো সিরিজ জয় হয়ে যাবে। দেশের মাটিতে টানা সপ্তম সিরিজ জয় হবে বাংলাদেশের। আজ বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড প্রথম ম্যাচেই বোঝা যাবে আসলে কোন দল সিরিজ জিততে পারে।
×