ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নুরুল করিম নাসিম

জার্নাল

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ৭ অক্টোবর ২০১৬

জার্নাল

‘কালপুরুষ’-এর রফিক নওশাদ আমাদের সমসাময়িক যারা, যারা সত্তর দশকে লেখালেখির সাথে জড়িত ছিল, ‘কালপুরুষ’ কবিতাপত্রের সম্পাদক ও প্রকাশক রফিক নওশাদের কথা তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে। রফিক তখন বাংলা বিভাগের ছাত্র। একজন প্রাণবন্ত তরুণ সাহিত্য কর্মী। ‘কালপুরুষ’ কবিতা মাসিক পরে দৈনিক সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন।’ রফিক নওশাদকে এখন দেখলে অনেকেই চিনতে পারবেন না। মুখভর্তি দাঁড়ি মাথায় গোল টুপি, এখন সে আধ্যাত্মিকতার দিকে পরিপূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়েছে। হঠাৎ একদিন তার ছেলে পুকুরে পড়ে মারা যায়। তারপর থেকে রফিকের ভেতর এই পরিবর্তন এসেছে। চাকরি জীবনে ময়মনসিংহ ক্যাডেট কলেজ ছাড়াও দেশের অন্যান্য ক্যাডেট কলেজে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এখন অবসর জীবনে ‘বনশ্রীতে’ বসবাস করছেন। সেখানে একটি বেসরকারী ক্যাডেট কলেজে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করছেন। বেশ ক’বছর আগে রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের একটি সাহিত্যানুষ্ঠানে ওকে নিয়ে এসেছিলাম। অনুষ্ঠানের পর অনেক আড্ডা হলো। মনে হলো ঠিক আগের মতই প্রাণবন্ত আছে। শুধু বাইরের আবরণ বদলে গেছে। রফিক ছিল সেই সত্তর দশকে কবিতায় নিবেদিতপ্রাণ। দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমাদের সবার মনে স্বপ্ন, আমরা কেউ নাটকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি, কেউ কবিতায়, কেউ ছোট গল্পে। রফিক একক প্রচেষ্টায় ‘কালপুরুষ’ প্রথমে মাসিক, পরে বেশ কিছুদিন দৈনিক পত্রিকা সাইজে ৪ পৃষ্ঠার বের করলো। কবিতা, কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ, কবিদের সাক্ষাৎকার বইয়ের উপর সংক্ষিপ্ত অথবা চমৎকার সব আলোচনা পত্রস্থ হতে লাগলো। রফিকের প্ররোচনায় সেই সময় আমিও কবিতা লিখতে শুরু করি। আরো একটি কারণ ছিল। সেটা সমম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। সে এক অন্য গল্প। পরে এক সময় বলবো। ‘কালপুরুষ’ এর প্রথম থেকে শেষ সংখ্যাটির নির্বাচিত কবিতা নিয়ে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। যারা সৃজনশীল সম্পাদক ও লেখক, কিংবা গবেষক, সংখ্যাটি তাদের কাজে লাগবে। টেমস নদীর নিচে টানেলের ভেতর বাস ছুটে চললো লন্ডন থেকে নিউক্যাসেলে বাসে একদিন যাত্রা করলাম। আমার এক আত্মীয়া থাকেন সেখানে। মানচিত্রে দেখেছি শহরটির ছবি। অনেকদিন থেকে মনের ভেতর একটি সুপ্তবাসনা ছিল। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সময় ও সুযোগ করে উঠতে পারছিলাম না। টেলিফোনে আমার সেই আত্মীয়া মানে খালার কাছ থেকে রোড ম্যাপ জেনে নিয়ে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সকাল ৮ টায় যাত্রা শুরু করলাম। এদিকে একটি ব্যাপার ঘটে গেছে। আমাদের দেশে যেমন হয়, বাস এলে যাত্রীদের ভিড়, ব্যস্ততা, দৌড়ঝাঁপে মুখর হয়ে ওঠে বাসস্ট্যান্ড। এখানে তেমন একটা ব্যস্ততা লক্ষ্য করা গেল না। আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছি। বাসটি কখন চলে গেছে, বুঝতেই পারিনি। যাত্রীদের কোনো ব্যস্ততা নেই, ভিড় নেই, হৈ চৈ নেই। কেমন চুপচাপ সবকিছু। লন্ডন শহরে সেদিন বেশ ঠা-া পড়েছিল। আমি কাউন্টারে গিয়ে বিষয়টা আলাপ করলাম। কাউন্টারের দায়িত্বে যিনি আছেন তিনি আমাকে পরবর্তী বাস ধরতে উপদেশ দিলেন। এবার আমি খুব সচেতন। বাস এলো। যাত্রীরা একে একে নিঃশব্দে উঠে গেল বাসে। আমিও উঠলাম। বাসের ভেতরটা অনেকটা প্লেনের মতো। সিটের সামনে অনেক স্পেস। পা ছড়িয়ে বসা যায়। সিটগুলো আরামদায়ক। দূরের যাত্রার জন্য কোনো সমস্যা নয়। দীর্ঘ ৪/৫ ঘণ্টা ভ্রমণে কোনো ক্লান্তি লাগে না। কারণ কোনো জার্কিং নেই। এক সময় পৌঁছালাম নিউক্যাসেলে। টেমস নদীর নিচে দীর্ঘ টানেলের ভেতর দিয়ে বাস ছুটে চললো। বেশ শিহরিত এবং রোমাঞ্চিত হলাম। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের সভ্যতাকে কতদূর এগিয়ে নিয়েছে। নিউক্যাসেল বাসস্ট্যান্ডে খালাখালু দু’জনই এসেছিলেন। গাড়ি ড্রাইভ করে খালু তাদের বাসায় নিয়ে এলেন। খালা স্থানীয় একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। খালু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। তাদের একমাত্র মেয়ে প্রতিবন্ধী। কথা বলতে পারে, কিন্তু মেধা কাজ করে না। নিউক্যাসেল ছোট শহর। কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ। লন্ডনের মতো সব সুযোগ-সুবিধা এই নির্জন শহরটিতে রয়েছে। একদিন এয়ারপোর্টের দোতলা রেস্তোরাঁয় আমরা সবাই খেতে গেলাম। রেস্তোরাঁর দোতলা থেকে প্লেনের ওঠানামা দেখতে দেখতে আমার মন দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলো। খালু বললেন, নিউক্যাসেল শহরটিতে শান্তি এবং নিরাপত্তা ভালো। সাদাকালোর দ্বন্দ্বটা অত প্রকট নয়। লন্ডনে যেমন ন্যাশনালিস্ট মতবাদের হাতে অভিবাসী বাঙালীরা লাঞ্ছিত হচ্ছে, সেখানে তা নেই। মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের শাখা রয়েছে এই নির্জন ছোট শহরটিতে। একদিন খালা সেই ব্র্যান্ডেড দোকান থেকে কিনে আমাকে শার্ট উপহার দিলেন। বাংলাদেশে এই শার্টের বেশ দাম। দু’তিন দিন আরো কয়েকটি জায়গায় ঘুরে বেড়ালাম। লন্ডনের মতো ব্যস্ততা নেই, মানুষজনও কম, তবে দোকানপাট সব আছে। আধুনিক জীবনের সব সুযোগ-সুবিধা আছে এই শহরটিতে। শুধু লন্ডন শহরের ব্যস্ততা আর হৈ চৈ নেই।
×