ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জান্নাতুল রুহানী

রুখে দাঁড়ানো এক নারী

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ৭ অক্টোবর ২০১৬

রুখে দাঁড়ানো এক নারী

কোন বাধাই তাকে রুখতে পারেনি। অদম্য গতিতে সামনে এগিয়ে চলার মাঝে হাজারো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে।মুনা আক্তার। খুব সাধারণ পরিবারে তার জন্ম। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই বুঝতে হয়েছে কিভাবে বিভিন্ন ধরনের অভাব পরিবারটিকে ঘিরে রেখেছে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় দেখতে হয়েছে তার বড় বোনের বিয়ে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে। বিস্ময়ে হতবাক হলেও কিছুই তার করার ছিল না। বড় বোন ছিল নবম শ্রেণীর ছাত্রী। কিন্তু দুর্ভাগ্য বিয়ের মাত্র এক বছরের মধ্যে বোন তার স্বামীহারা হয়। ইতোমধ্যে ১৫ বছরে পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক সন্তানের জননী হয় সে। কোল আলো করে আসে এক ফুটফুটে শিশু সন্তান। বড় বোনের এই বিপন্ন অবস্থা তাকে অনেক বেশি সচেতন এবং সতর্ক করে দেয়। কারণ নিজের ব্যাপারে সে অনেক বেশি সাবধান হয়ে যায়। বুঝতে পারে অন্তত লেখাপড়ায় স্বাবলম্বী হওয়ার আগে জীবনের কোন বড় সিদ্ধান্ত নয়, বড় বোনের মতো নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় মা-বাবা তার বিয়ের জন্য তোড়জোর শুরু করে দেয়। বিবাহযোগ্য মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠালেই বুঝি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। স্নেহশীলা মাতৃহৃদয় ও কন্যাকে পাত্রস্থ করতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। কিন্তু বাবার সমর্থন আদায় করে মুনা তার লেখাপড়াকে দৃঢ়তার সঙ্গে চালিয়ে যায়। এসএসসি, এইচএসসি এবং বিএসসি পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়। এর পরেই মুনা সিদ্ধান্তে আসে নতুন জীবন গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার। স্বাপ্নিক আচ্ছন্নতায় বিয়েও হয়ে যায়। কিন্তু আশাহতের বেদনা এবং স্বপ্নচ্যুতির কষ্ট পেতেও তার দেরি লাগেনি। নতুন জীবনের আঁচ লাগার আগেই দেখা দেয় বিভীষিকাময় এক ঘোরতর অন্ধকার। বিয়ে তো কোন সমস্যার সমাধান নয় বরং নতুন অনেক বিপদকে টেনে আনা। অবশ্য সব ক্ষেত্রে এমনটি হয় না। ঋণগ্রস্ত স্বামীর অসচ্ছল জীবনের সঙ্গে গ্রন্থি বেঁধে আরও একবার উপলব্ধিতে আসে জীবনটা সংগ্রামের এবং অনেক বেশি বিপত্তিকে মোকাবেলা করে মুনা শেষ অবধি স্নাতকোত্তর ডিগ্রীও অর্জন করে। এরই মধ্যে মাতৃত্বের আস্বাদে তার জীবনটা অন্যভাবে ভরে ওঠে। কিন্তু চাকরিটা অন্যভাবে ভরেও ওঠে। কিন্তু চাকরি যেন সোনার হরিণ। ধরা দিয়েও দেয় না। স্বামী, সন্তান, সংসার সব ঝক্কি সামলিয়ে কিছু করতে পারা অত সহজ ব্যাপার নয়। কিন্তু না, মুনা আক্তার থেমে যাওয়ার মেয়ে নয়, সে স্বাবলম্বী হতে চায়। নির্ভরশীলতাকে সে ঘৃণা করে। ব্যবসায় সামান্য পুঁজি ব্যয় করে সে ‘বুটিকস হাউস এবং বিউটি পার্লার সাজিয়ে বসে। ক্রমান্বয়ে সে সফলতার মুখও দেখতে পায়। আজ সে তার জায়গায় একজন সফল ব্যবসায়ী। কোন পেশাই অযোগ্য কিংবা ঘৃণার নয়। মুনার জীবনই তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। আজ তার বুটিক হাউস এবং পার্লারে অনেকের রুজি রোজগারের সংস্থান হয়। সে আজ একটি পরিবারের তো বটেই নারী জাতিরও অহঙ্কার। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়ে হয়েও তার সফলতার কাহিনী প্রশংসার দাবি রাখে। অদম্য ইচ্ছা এবং শক্তির কাছে পর্বত প্রমাণ বাধা ও তুচ্ছ হয়ে যায়। মুনা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এভাবে নারীরাও কোনভাবেই হারবে না জোর কদমে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে পুরুষের সহযাত্রী হয়ে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণও বাড়তে থাকবে।
×