ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এক সপ্তাহে কেজিতে বেড়েছে ১৪ টাকা

বেড়েই চলেছে চালের দাম

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৭ অক্টোবর ২০১৬

বেড়েই চলেছে চালের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাজারে বেড়েই চলেছে চালের দাম। গত ২ মাসে কয়েক দফায় বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম। এই উর্ধমুখী প্রবণতার জন্য চালের আমদানি শুল্ক বাড়ানোকে দায়ী করেছেন রাজধানীর অধিকাংশ চাল ব্যবসায়ী। আবার কয়েকজন ব্যবসায়ীর মতে, গত বছরের তুলনায় এবার চালের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এর দামও বাড়ছে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে চালের উৎপাদন কমে যাওয়ায় এর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও দাবি করছেন কেউ কেউ। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাবুবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এবং সেখানকার চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা যায়। কারওয়ান বাজারের সোহেল রাইস এজন্সির মোঃ সোহেল বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে আমদানি চালের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেকে চাল আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে যোগান কমে যাওয়ায় চালের দাম বাড়ছে। তিনি আরও জানান, শুল্ক বাড়ানোর পর ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ রেখেছেন আমদানিকারকরা। ফলে বাজারে চালের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত শুল্ক আদায় বন্ধ করা হলে চালের দাম আবারও কমে যাবে। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের বিক্রমপুর ট্রেডিং কর্পোরেশনের ইসমাইল হোসেন বলেন, গত মৌসুমে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি চালের দাম ৩২ টাকা নির্ধারণ করেছিল সরকার। সে সময় খুব একটা লাভ করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। আর চলতি মৌসুমের শুরুতে মজুদ করা চাল বাড়তি দামে বিক্রি করছেন মিল মালিকরা। সেগুনবাগিচা বাজারের শিমুল রাইচের জাহাঙ্গীর বলেন, গত সপ্তাহে পাইকারিতে ২২-২৩ টাকা দরে বিক্রি করা মোটা গুটি চাল এখন ৩৬-৩৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে বেশি দাম দিতে হচ্ছে বলে খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে চালের উৎপাদন কমে যাওয়ায় এর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও দাবি করছেন অনেকে। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে স্বর্ণা, মিনিকেট, বিরি-২৮, পারিজাসহ প্রায় সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫-৭ টাকা করে বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে ৩৮-৪০ টাকা দরে স্বর্ণা, ৪০-৪১ টাকা দরে বিরি ২৮, ৫০-৫২ টাকা দরে মিনিকেট, ৩৮-৩৯ টাকায় পারিজা, ৫৩-৫৫ টাকায় নাজিরশাইল, ৫৪-৫৮ টাকায় বাসমতি, ৭০-৭৫ টাকায় কাটারিভোগ এবং ৯৫-১০০ টাকায় পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা গুটি চালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি হারে। কেজিতে ১০-১১ টাকা বেড়ে এ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৯-৪০ টাকা দরে। সরকারী বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, মাসের ব্যবধানে প্রতিকেজি মিনিকেটে ১ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং মোটা গুটি ও স্বর্ণা চালের দাম ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়েছে। পাইকারি পর্যায়ে যাই হোক না কেন- শেষ পর্যন্ত চালের জন্য বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে ভোক্তাদের। তাদের মতে, নিত্যপণ্যের বাজারেও এখন রাজনীতির ছোঁয়া। সংশ্লিষ্টরা বাজার তদারকি করছেন না। ফলে ইচ্ছে মতো চালের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে চালের বাজারে আসা বেসরকারী কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ জানান, গরিবদের মাঝে কেজিপ্রতি ১০ টাকা দরে চাল দিচ্ছে সরকার। দেশের বাজারগুলোতে প্রতি সপ্তাহে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম। তিনি অভিযোগ করেন, আসলে চালসহ সব নিত্যপণ্যের বাজারে রাজনীতির বাতাস লেগেছে। এর থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। নতুবা আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় করতে পারব না আমরা। জয়নাল আবেদীন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছেন। যে কোনভাবে একবার দাম বাড়লে, তা আর কমে না। এক্ষেত্রে মনিটরিং জোরদার করা হলে প্রতারণা থেকে রক্ষা পাবেন সাধারণ ভোক্তারা।
×