ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষ জনবলের অভাবে প্রতিবছর ৬০০ কোটি ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৭ অক্টোবর ২০১৬

দক্ষ জনবলের অভাবে প্রতিবছর ৬০০ কোটি ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের শিল্প-কারখানায় কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ জনবলের অভাবে প্রতিবছর ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশন চেম্বার্স অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ। তিনি বলেন, কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ জনবলের চাহিদা থাকলেও সাধারণ শিক্ষায় ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থীরা তা পূরণ করতে পারছে না। এতে বিদেশী দক্ষকর্মীরা বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ সম্মেলন কক্ষে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তি হস্তান্তর অফিস’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। বিশ্বব্যাংক এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের যৌথ উদ্যোগে এ অফিস স্থাপন করা হবে। মাতলুব বলেন, দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে প্রাইভেট সেক্টর। এই সেক্টরে দক্ষ জনবল বৃদ্ধিতে কারিগরি শিক্ষার উপর জোর দেন তিনি। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু দশের রফতানিমুখী শিল্পায়নের ধারা বেগবান করতে দক্ষতা ও উদ্ভাবন খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষের বয়স ৩৫ বছরের নিচে হলেও দক্ষতা ও কারিগরি জ্ঞানের অভাবে শিল্পায়নের সুফল কাজে লাগানো যাচ্ছে না। শিল্পমন্ত্রী বলেন, এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি ও সৃজনশীল উদ্ভাবনের প্রয়াস জোরদার করতে হবে। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প কারখানার মধ্যে কার্যকর সংযোগ গড়ে তোলা জরুরী। তিনি বলেন, প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি ও কাঠামোর দুর্বলতার কারণে ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থীদের অনেকেই কর্মজীবনে সাফল্য পাচ্ছেন না। এর সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়-শিল্প কারখানা-সরকার ত্রিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে হবে। পাশাপাশি শিল্প কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম ঢেলে সাজাতে হবে। পাঠ্যক্রমে সৃজনশীলতা, কর্মমুখী ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দক্ষ জনবলের চাহিদা পূরণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সেক্টর কর্পোরেশনগুলো ইতোমধ্যে বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই করেছে বলেও জানান শিল্পমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি অর্জনের দাবি করে আমু বলেন, এ অর্জন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে অন্যন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গত আট বছর ধরে অর্জিত ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রেখে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। দক্ষতা ও সৃজনশীলতার উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তি হস্তান্তর অফিসকে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেন তিনি। এ সময় অন্যান্য বক্তারা এ খাতে বিরাট অংকের অর্থ সাশ্রয়ের জন্য দেশেই সৃজনশীল উদ্ভাবন, গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দেন। পাশাপাশি তারা তরুণ উদ্ভাবকদের মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় মেধাসম্পদ আইনের আধুনিকায়নের পরামর্শ দেন। প্রতিবছর ২০ লাখ তরুণ-তরুণী চাকরির বাজারে আসলেও মাত্র ২ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তি হস্তান্তর অফিস প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ, ঢাকায় আমেরিকান সেন্টারের সংস্কৃতি বিষয়ক কর্মকর্তা জর্জ মেসথোজ, বিশ্ব ব্যাংকের উর্ধতন গবেষক মোখলেসুর রহমান প্রমুখ।
×