ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুর্গোৎসব ॥ কটিয়াদীতে ঢাকঢোল যন্ত্রীদের হাট

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৭ অক্টোবর ২০১৬

দুর্গোৎসব ॥ কটিয়াদীতে ঢাকঢোল যন্ত্রীদের হাট

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ, ৬ অক্টোবর ॥ কারো কাঁধে ঝুলছে ঢাক। কেউ হাতে বয়ে বেড়াচ্ছেন সানাই, নানা জাতের বাঁশি, করতাল ও মঞ্জুরিসহ নানা রকমের বাদ্যযন্ত্র। হঠাৎ করে দেখে মনে হতে পারে বাদ্যযন্ত্রের প্রদর্শনী দেখাতে এসেছেন সবাই। কিন্তু আদতে তা নয়। এদের সবাই এসেছেন শ্রম বেঁচতে। রীতিমতো হাট বসিয়ে চুক্তিবদ্ধ হন তারা। জেলার কটিয়াদী উপজেলায় শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে পুরাতন বাজারে ৫শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকঢোলের হাট বসেছে। প্রতি বছরের মতো এবারও বুধবার বিকেল থেকে শুরু শুক্রবার ভোরে এ হাট শেষ হবে। আয়োজকরা জানায়, এখানে ছাড়া দেশের কোথাও এ ধরনের বাদ্যযন্ত্রের হাট বসে না। তবে এ হাটে কোন কেনাবেচা হয় না। পূজাম-পে বাজনা বাজিয়ে আরতী দেয়া, দুর্গা মাকে খুশি করা আর দর্শক-ভক্তদের আকৃষ্ট করতেই যন্ত্রী বা ব্যান্ড পার্টি চুক্তিভিত্তিকভাবে এখান থেকে ভাড়া দেয়া-নেয়া হয়। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক দুর্গাপূজার আয়োজকরা এ হাটে এসে দরকষাকষি শেষে চুক্তিতে বাধ্যযন্ত্রীদের নিয়ে যায়। পরে দুর্গোৎসবের শেষদিন প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত বাদ্য বাজিয়ে যন্ত্রীদের বিদায় দেয়। মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের ভাটি অঞ্চল, কুমিল্লার হাওড়াঞ্চল থেকে শত শত বাদ্যযন্ত্রী এ হাটে আসেন। ঢাকঢোল, সানাই, বিভিন্ন ধরনের বাঁশি, কাঁসিসহ হাজার হাজার বাদ্যযন্ত্রের পসরায় হাট উপচে পড়ে। যন্ত্রীরা দলে দলে দফায় দফায় বাজায় বাদ্যযন্ত্র। বাজনার তালে তালে নাচ আর রং ঢঙয়ের অঙ্গভঙ্গিতে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে থাকে। একটি ঢাক ১০ হাজার, ঢোল ৭-৮ হাজার, বাঁশি প্রকারভেদে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার, ‘ব্যান্ডপার্টি’ ছোট ২৫ থেকে ৫০ হাজার এবং বড় ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ভাড়া দেয়া হয়। বাদ্যযন্ত্রীরা পূজাম-পে বাজনা বাজিয়ে দর্শক ও ভক্তদের আকৃষ্ট করে থাকেন। দুর্গাপূজা শুরুর দিন থেকে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত টানা ৫ দিন তাদের বাজনা বাজাতে হয়। জনশ্রুতিতে আছে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায়ই সর্বপ্রথম তার রাজপ্রাসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে চারিপাড়া গ্রামে ছিল রাজার প্রাসাদ। আজও রাজার আমলে খনন করা কোটামন দিঘীটির মনোরম দৃশ্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। গাইবান্ধায় ব্যস্ত কুম্ভকার পরিবার নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, শারদীয় দুর্গাপূজার মেলাকে সামনে রেখে এখন মাটির নানা ধরনের খেলনা তৈরিতে ব্যস্ত কুম্ভকার পরিবারগুলো। গ্রাম বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য একান্ত নিজস্ব কৃষ্টি এই গ্রামীণ শারদীয় মেলাগুলো। যেখানে পল্লীর চারু ও কারু শিল্প পণ্যের সমারোহ ঘটে, বেচাকেনা হয়। গাইবান্ধার এসব মেলার পণ্য সম্ভারের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। গাঁয়ের নিয়মিত হাট-বাজারগুলোতে এসব পণ্য পাওয়া যায় না। শুধু বৈশাখী ও শারদীয় দুর্গাপূজার মেলাতেই বিশেষ চিহ্নিত কিছু পণ্যের আমদানি হয়। সেজন্য সর্বশ্রেণীর ক্রেতাদের এসব পণ্য কেনার বা সংগ্রহের বিশেষ আকর্ষণ থাকে। তাই মেলার বিচিত্র বর্ণের এসব চারু কারু পণ্য কিনতেই নানা বয়সের মানুষের আগমনে মুখর হয় মেলাগুলো। গাইবান্ধায় নদী তীরে, ফসল কাটা ক্ষেতে, নয়তো পরিত্যক্ত কোন মাঠে বসে এই গ্রামীণ মেলাগুলো। চারু কারু পণ্যের পাশাপাশি মাটি, শোলা, বাঁশ ও তালপাতার তৈরি নানা খেলনা মেলাগুলোর অন্যতম আকর্ষণ। গাইবান্ধায় এসব খেলনা তৈরি করে গাঁয়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পেশাদার মৃৎশিল্পী ও খেলনা শিল্পীরা। জেলার সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ও খোলাহাটী ইউনিয়নের পালপাড়া, শিবপুর, কলাকোপা, ধুতিচোরা, ফুলছড়ির রসুলপুর, কঞ্চিপাড়া, সাঘাটার ঝাড়াবর্ষা, পুটিমারী, সুন্দরগঞ্জের বেলকা, পাঁচপীর, ধুবনী, চ-িপুর, কঞ্চিবাড়ী, শ্রীপুর, ধর্মপুর, সাদুল্যাপুরের রসুলপুর, দামোদরপুর, পলাশবাড়ীর হিজলগাড়ী এবং গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর, আরজিশাহপুর ও শক্তিপুর গ্রামে মাত্র ৪৪০টি পরিবার এখনও মৃৎশিল্প ও নানা খেলনা তৈরির কাজে নিয়োজিত রয়েছে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা এখনও এই পৈত্রিক পেশাকে আঁকড়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে।
×