ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ইসলামে দিন ক্ষণ মাস বছর গণনার গুরুত্ব

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৭ অক্টোবর ২০১৬

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ইসলামে দিন ক্ষণ মাস বছর গণনার গুরুত্ব

ইসলাম একটি প্রগতিশীল পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামে সময়ের অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সময়কে ধরে রাখা যায় না বটে, কিন্তু সময়ের দিন ক্ষণ মাস বছরের হিসাব সংরক্ষণের মাধ্যমে সময়ের অবিরত চলার মুহূর্তে সংঘটিত ঘটনাকে লিপিবদ্ধ করে রাখা যায়। সময়ের হিসাব রাখার জন্য দিবস-রজনী গণনা, মাস গণনা, বর্ষ গণনার রীতি চালু হয়েছে। সাধারণত কোন বিশেষ ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বর্ষপঞ্জিকার উদ্ভব হয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। ইসলাম দিন ক্ষণ মাস বছর গণনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। আমরা যে সন ও সাল শব্দ দুটি ব্যবহার করি এর মধ্যে সন শব্দটি আরবী থেকে এসেছে এবং সাল শব্দটি ফারসী। উভয়েরই অর্থ বর্ষ বা বছর। পৃথিবীতে নানা ধরনের সন প্রচলিত আছে-তার মধ্যে কোনটা চান্দ্র সন, কোনটা আবার সৌর সন। সূর্যের আনাগোনাকে হিসাবে এনে যে সন তাকে বলা হয় সৌর সন আর যে সনের গণনা চন্দ্রের গতি-প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত তাকে বলা হয় চান্দ্র সন। সৌর সনের হিসাবে বছর হয় মোটামুটি ৩৬৫ দিনে আর চান্দ্র সনের হিসাবে বছর হয় মোটামুটি ৩৫৪ দিনে। কিন্তু উভয় বর্ষ গণনায় মাস হচ্ছে ১২টি। বর্ষ গণনার ক্ষেত্রে আরেকটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে সব বর্ষপঞ্জিকার দিন, মাস বা বছরে শুরু কিন্তু এক সময় হয় না। যেমন : সৌর সনের অন্তর্গত ইংরেজী ক্যালেন্ডার বা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের শুরু হয় রাত বারোটার পর পরই, আবার বাংলা সনের শুরু হয় সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। আর চান্দ্র সনের অন্তর্গত হিজরী সনের শুরু হয় সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে। ইসলাম সৌর চান্দ্র উভয় প্রকারের বর্ষ গণনার ওপর সমান গুরুত্বারোপ করেছে। কুরআন মজীদে চন্দ্র ও সূর্য সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : সূর্য ও চন্দ্র আবর্তন করে নির্ধারিত কক্ষ পথে (সূরা আর রহমান : আয়াত ৫), তিনিই আল্লাহ, যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে তা দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করে দেন, যিনি পানির জাহাজকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তাঁর বিধানে তা সমুদ্রে বিচরণ করে এবং যিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন নদ-নদীকে, তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে, যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুবর্তী এবং তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি ও দিবসকে (সূরা ইবরাহীম : আয়াত ৩৩)। কুরআন মজীদে চান্দ্র সন ও সৌর সনের গুরুত্ব তুলে ধরে ইরশাদ হয়েছে : তিনিই (আল্লাহ) সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং ওর মঞ্জিল নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা বছরের গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পার। আল্লাহ্ এটা অনর্থক সৃষ্টি করেননি। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এ সমস্ত নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন। (সূরা ইউনুস : আয়াত ৫)। আরও ইরশাদ হয়েছে : আমি রাত্রি ও দিবসকে করেছি দুটি নিদর্শন, রাত্রির নিদর্শনকে অপসারিত করেছি এবং দিবসের নিদর্শনকে করেছি আলোকপ্রদ, যাতে তোমরা বর্ষ সংখ্যা ও হিসাব স্থির করতে পার এবং আমি সবকিছু বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল : আয়াত ১২)। বছর গণনায় মাসের সংখ্যা যে বারোটি হতে হবে সে সম্পর্কে কুরআন মজীদে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। আল্লাহ্ শানুহু ইরশাদ করেন : নিশ্চয়ই আকাশম-লী এবং পৃথিবীর সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর নিকটে আল্লাহর নির্ধারণ অনুযায়ী মাসের সংখ্যা বারোটি। (সূরা তওবা : আয়াত ৩৬)। সময়ের চাকা অবিরত ঘুরেই চলেছে। দিন আসে রাত যায়, রাত আসে দিন যায়- এই যে সময়ের গতিধারায় প্রতিটি মুহূর্ত অতীত হয়ে যাচ্ছে, পলে পলে আমাদের সময় অতিবাহিত হচ্ছে এটা আল্লাহর নির্ধারিত নিয়মেই হচ্ছে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : তিনিই (আল্লাহ) ঊষার উন্মেষ ঘটান, তিনিই বিশ্রামের জন্য রাতের সৃষ্টি করেছেন এবং গণনার জন্য সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন, এ সবই পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিরূপণ। (সূরা আন’আম : আয়াত ৯৬)। আরবীতে দিন, সাপ্তাহ, পক্ষ, মাস, সন, শতাব্দী ও কাল নিরূপণ বিদ্যা তারিখ হিসেবেও বিবেচিত হয়। ইসলামের একেবারে খাঁটি সন হচ্ছে হিজরী সন। এই সনটি প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লামের মক্কা মুকাররমা থেকে আল্লাহ্র নির্দেশে মদিনায় হিজরত করার সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করে আছে। আরব দেশে সুদূর প্রাচীনকাল থেকে যে বারোটি মাস ছিল সেগুলোর ক্রম বজায় রেখে প্রিয় নবী (সা.)-এর হিজরতের বছরের প্রথম মাস মহরম থেকে হিসাব করে হিজরতের ১৭ বছর পরে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ‘উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহ তা’আলা আনহু হিজরী সনের প্রবর্তন করেন। প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওহা সাল্লাম মদিনা মনওয়ারায় হিজরত করেন অধিকাংশের মতে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আওয়াল শুক্রবার। অবশ্য মদিনা মনওয়ারায় উপস্থিত হওয়ার কিছুদিন আগেই এক সোমবারে তিনি মদিনার উপকণ্ঠে অবস্থিত কুবা নামক স্থানে এসে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা আজও কুবা মসজিদ নাম ধারণ করে রয়েছে। হিজরত ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই হিজরত সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ঐতিহাসিক জোসেফ হেল লিখেছেন: it is a turning point in the life and work of the prophet, the great turning point in the history of Islam.-হিজরত প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জীবন ও কর্মে এক নতুন বাঁক আনয়ন করে এবং ইসলামের ইতিহাসে এক বিরাট দিগন্তের উন্মোচন ঘটায়। ঐতিহাসিক পিকে হিট্টি বলেন : The Hijrath, with which the Makkan period ended and the Madinese period began, proved a turning point in the life of Muhammed.-হিজরতের মাধ্যমে হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লামের মক্কার জীবন শেষ হয়ে মদিনার জীবনের শুরু হয়, যা তাঁর জীবনে নতুন মোড় আনে। আমরা জানি, প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম ৬১০ খ্রিস্টাব্দে রমাদান মাসের শেষ দশকের এক রাতে, অধিকাংশের মতে ২৬ রমাদান দিবাগত রাতে অর্থাৎ ২৭ রমাদান রাতে প্রথম ওহী লাভের প্রায় তিন বছর পর প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের জন্য নির্দেশ লাভ করেন। তিনি প্রচার শুরু করলে কয়েক ভাগ্যবান ব্যক্তি ছাড়া মক্কার কাফির-মুশরিকরা তাঁর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগে যায়। তাঁর এবং তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যাঁরা ইসলামে দাখিল হয়েছেন তাঁদের ওপর নেমে আসে অকথ্য জুলুম, নির্যাতন, জীবননাশের হুমকিও আসে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নির্দেশে তিনি হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুকে সঙ্গে নিয়ে মক্কা মুকাররমা থেকে প্রায় ২৯৬ মাইল উত্তরে অবস্থিত ইয়াসরিবে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের রবিউল আউয়াল মাসে হিজরত করলেন। ইয়াসরিবের নতুন নাম হলো মসদিনাতুননবী, যা মদিনা মনওয়ারা নামে পরিচিত হয়। মদিনা মনওয়ারায় এসে তিনি এখানে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মসজিদুন নববী। আর এই মসজিদকেন্দ্রিক একটি আদর্শ কল্যাণ রাষ্ট্র কায়েম করেছেন। রচিত হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম লিখিত শাসনতন্ত্র চার্টার অব মদিনা বা মদিনার সনদ। মক্কার কাফির-মুশরিক, মদিনার ইয়াহুদী ও মুনাফিকরা জোট বেঁধে ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য মদিনা বারবার আক্রমণ করেছে, কিন্তু জয়ের মুখ তারা দেখতে পারেনি। বিজয় এসেছে ইসলামের। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়ে সেই বিজয় চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, ঘোষিত হয়েছে : সত্য সমাগত, মিথ্যা দূরীভূত, নিশ্চয়ই মিথ্যা দূর হয়। হিজরতের পর পরই ইসলামের ভাবত বিধান ও অনুশাসন পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করেছে। ইসলামের প্রসার ঘটেছে নানা দেশে এবং বিদায় হজের ভাষণ শেষে আরাফাত ময়দানে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ৯ জিলহজ আল্লাহ জাল্লা শানুহু ইসলামের পূর্ণতা দান করে ইরশাদ করেছেন : আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, আমার নিয়ামত তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের দীন ইসলামকে সানন্দ অনুমোদন দান করলাম (সূরা মায়িদা : আয়াত ৩)। এরই প্রায় নব্বই দিন পর প্রিয় নবী (সা) তাঁর রফিকুল ‘আলা আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর কাছে চলে যান। স্বভাবতই হিজরত ছিল এক অনন্য ঘটনা। জানা যায়, আরব দেশে মাসের হিসাব প্রচলিত থাকলেও বর্ষের হিসাব রাখার তেমন কোন ব্যবস্থা ছিল না। অবশ্য যে বছর প্রিয় নবী (সা.) ভূমিষ্ঠ হন তার ৫০ দিন পূর্বে ইয়েমেনের অত্যাচারী রাজা আবরাহা মক্কার কা’বা শরীফ ধ্বংস করার মানসে এক বিরাট হস্তিবাহিনী নিয়ে মক্কা থেকে প্রায় সাড়ে তিন মাইল দূরে ছাউনি ফেলে। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ছোট ছোট পাখি বা আবাবীল পাঠিয়ে আবরাহার বাহিনীকে কঙ্করাঘাতে ধ্বংস করেছেন। হস্তিবাহিনীর এই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঘটনার বছর থেকেই আরবরা আমূল ফীল বা হস্তিসন নামে একটি বর্ষগণনা শুরু করে। কিন্তু তা মোটামুটিভাবে ৪০ বছরকাল স্থায়ী হয়ে ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কুরআন মজীদে আবরাহার হস্তিবাহিনী নিয়ে মক্কা আক্রমণ করার ঘটনা সূরা ফীলে রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : তুমি কি দেখোনি তোমার রব হস্তি অধিপতিদের প্রতি কি করেছিলেন? ওদের বিরুদ্ধে তিনি ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি (আবাবিল) প্রেরণ করেছিলেন, যারা ওদের প্রস্তর-কঙ্কর নিক্ষেপ করে। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) ওদের ভক্ষিত তৃণসদৃশ করেন। ৬১০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ওহী লাভের বছর থেকে মুসলিমদের মধ্যে নবুওত সন নামে একটা বর্ষগণনা রীতি চালু হলেও ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরতের পর থেকে হিজরতের বছর, হিজরতের পরের বছর, হিজরতের তৃতীয় বছর- এমনিভাবে একটা বছর হিসাব মানুষের মুখে মুখে চালু ছিল। হিজরতের বছর থেকে একটি বর্ষ গণনা শুরু হলেও তা সংবিধিবদ্ধ সনে পরিণত হয় প্রায় ১৭ বছর পরে। জানা যায়, খিলাফতের প্রশাসনিক কাজকর্ম, দলিল-দস্তাবেজ, নথি, চিঠিপত্র, খতিয়ানাদি, মামলা-মোকদ্দমা, ফরমান, রাজস্ব আদায় ইত্যাদি জরুরী ক্ষেত্রে সন-তারিখের গুরুত্ব অনুধাবন করে একটা নিজস্ব বর্ষপঞ্জি উদ্ভাবনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রাদি আল্লাহু তা’য়ালা আনহু। তার এই উদ্যোগ গ্রহণের পেছনে বিশেষভাবে অনুপ্রেরণার যোগান দেয় বসরায় নিযুক্ত গবর্নর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মূসা আল-আশ’আরী রাদি আল্লাহু তা’য়ালা আনহুর একটি চিঠি। সেই চিঠিতে তিনি খলিফাকে জানান যে, খিলাফতের কাজে যে সমস্ত পত্র ও নির্দেশনামা করা হয় তাতে কোন বছরের উল্লেখ থাকে না, শুধু মাসের নাম থাকে। তিনি একটি চিঠিতে শুধু শা’বান মাস লেখা থাকলেও এই শা’বান যে কোন বছরের তা না থাকার কথা উল্লেখ করে মন্তব্য করেন যে, এর ফলে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এই চিঠি খলিফাতুল মুসলিমীন আমিরুল মু’মিনীন হযরত উমর (রা) অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন এবং নিজস্ব একটি সন প্রবর্তনের জন্য পরামর্শ সভা ডাকেন। সেই সভায় কেউ প্রস্তাব দেন প্রিয়নবী (সা)-এর জন্ম বছর থেকে হিসাব করে একটি নতুন সন প্রবর্তন করা যায়, কেউবা বলেন নবুওয়তের বছর থেকে, কেউবা বলেন ওফাতের বছরের কথা, কিন্তু হযরত ‘আলী রাদি আল্লাহু তা’য়ালা আনহু হিজরতের বছর থেকে হিসাব করে নতুন সন প্রবর্তনের প্রস্তাব দিলে হিজরতের গুরুত্ব বিবেচনা করে সবাই এতে ঐকমত্য পোষণ করেন। সর্বসম্মতিক্রমে তখন হিজরী সন প্রবর্তিত হয়। এতে আরবে প্রচলিত মাসগুলো রাখা হয়। হিজরত হয়েছিল ৬২২ খ্রিস্টাব্দের রবিউল আউয়াল মাসে। এই নতুন সনে মাসের হিসাবের ক্রম বজায় রাখার লক্ষ্যে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের এ মহরম থেকেই বর্ষ গণনাভুক্ত করা হয। হিজরী সন একটি নির্ভেজাল চান্দ্র সন। এই সন বিশ্বের প্রায় দু’ শ’কোটি মুসলিম মননে অতি পবিত্র সন হিসেবে গৃহীত। হিজরী সনের বিভিন্ন মাসে রয়েছে মুসলিমদের পালনীয় দিবস-রজনী। যেমন : ১০ মহরম পালিত হয় আশুরা, ১২ রবিউল আউয়াল ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী, সফর মাসের শেষ বুধবারে আখেরী চাহার শম্বা, ১১ রবিউস সানী ফাতিহায়ে ইয়াসদহম, ৬ রজব খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর উরস, ২৬ রজব দিবাগত রাতে লায়লাতুল মিরাজ, ১৪ শা’বান দিবাগত রাতে লায়লাতুল বরাত, মাহে রমাদানুল মুবারকের মাসব্যাপী সিয়াম, ২৬ রমাদান দিবাগত রাতে লায়লাতুল কদর, রমাদানের শেষ শুক্রবার জুমু’আতুল বিদা’, ১ শাওয়াল ঈদ-উল-ফিতর, জিলহজ মাসের ৮ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত মক্কা মুকাররমায়ে অনুষ্ঠিত হয় হজ, ১০ জিলহজ বিশ্ব মুসলিম পালন করেন ঈদ-উল-আযহা বা কোরবানির ঈদ। ইসলামে দিন ক্ষণ মাস বছর গণনার গুরুত্ব অপরিসীম। সালত যথা ওয়াক্তে বা নির্ধারিত সময়ে আদায়, বছর শেষে হিসাব করে যাকাত দেয়া, সেহরি-ইফতার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গ্রহণ করা, নির্দিষ্ট মাসের নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট সময়ে হজের নিয়ম-কানুন পালন করা, নির্দিষ্ট মাসের নির্দিষ্ট দিবস অথবা রজনী পালন করা ইত্যাদির মধ্যে ইসলামের দিন ক্ষণ মাস বছর গণনার তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। লেখক : পীর সাহেব, দ্বারিয়াপুর শরীফ উপদেষ্টা, ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা) সাবেক পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
×