ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্মার্টকার্ডে স্মার্টনেস

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৭ অক্টোবর ২০১৬

স্মার্টকার্ডে স্মার্টনেস

নাগরিকত্ব পরিচয়ের অনন্য দলিল স্মার্টকার্ড। আনস্মার্ট থেকে স্মার্টে পরিণত হওয়ার অনন্য সুযোগ ও ব্যবস্থা যেন এই কার্ড। কাগজে তৈরি জাতীয় পরিচয়পত্র ছেড়ে মেশিন রিডেবল স্মার্টকার্ডের সূচনা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে আরও একধাপ অগ্রগতির সোপান এই কার্ড। গত আট বছর ধরে নাগরিকদের ব্যবহৃত সাদা কাগজের জাতীয় পরিচয়পত্রের দিন শেষ হয়ে এলো। স্মার্টকার্ড যুগে প্রবেশের মধ্য দিয়ে দেশের নাগরিকদের সুফলপ্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার ক্ষেত্রটি বিস্তৃত হলো। এই কার্ড নকল করা সহজ হবে না। প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব এখন নির্বাচন কমিশন ও কার্ড প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এই উন্নত কার্ডের মাধ্যমে সবরকম সেবা পাওয়া যাবে। বর্তমান বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে এই কার্ড তৈরি হয়েছে। জাতীয় পরিচয়ের ডাটাবেজ ও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রত্যয়নকারী কর্তৃপক্ষের সনদপ্রাপ্ত। এটি ট্রাভেল কার্ডসহ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে বিবেচিত হতে যাচ্ছে। স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র নাগরিকদের শ্রেণী, বয়স, অবস্থা, অবস্থান ও পেশাভিত্তিক রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে সেবা প্রদানকারী সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনলাইন ও অফলাইন উভয় পদ্ধতির নাগরিকদের পরিচিতি সঠিকভাবে যাচাই করতে পারবে। দেশে বর্তমান ভোটার সংখ্যা প্রায় দশ কোটি। আট বছর আগে প্রথমবারের মতো আট কোটি দশ লাখ আটান্ন হাজার ছয় শ’ আটানব্বই নাগরিক লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছে। কিন্তু একটি কার্ড নিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি জালিয়াতি চালিয়ে আসছিল। মেশিন রিডেবল স্মার্টকার্ডে এ জালিয়াতি সম্ভব নয়। এর নিরাপত্তায় পঁচিশ ধরনের আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংযোজিত রয়েছে। প্রথম স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলো খালি চোখে দৃশ্যমান হবে। দ্বিতীয় স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলো দেখার জন্য প্রয়োজন হবে যন্ত্রের। তৃতীয় স্তরের বৈশিষ্ট্য দেখতে প্রয়োজন হবে ল্যাবরেটরিতে ফরেনসিক পরীক্ষার। পঁচিশ ধরনের সেবা মিলবে এতে। আয়করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর পাওয়া, শেয়ারে আবেদন ও বিও হিসাব খোলা, ড্রাইভিং লাইসেন্স করা ও নবায়ন, ট্রেড লাইন্সেস করা, পাসপোর্ট করা ও নবায়ন। যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, চাকরির আবেদন, স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক হিসাব খোলা, নির্বাচনে ভোটার শনাক্তকরণ, ব্যাংক ঋণ, ভাতা উত্তোলন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, আসামি ও অপরাধী শনাক্তকরণ, ফোন ও মোবাইলের সংযোগ ইত্যাকার কাজে ব্যবহৃত হবে কার্ড। বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় আট শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের সব ভোটারকে স্মার্টকার্ড প্রদানের এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ২০১১ সালে। সকল ভোটারের তথ্য নিয়ে একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। এর আওতায় ২০১৭ সালের মধ্যে কার্ড প্রদান করা হবে। এর মাধ্যমে বিদ্যমান পেপার লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র প্রতিস্থাপিত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, যাদের বয়স আঠারো বছরের কম এবং যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য নয়, তাদের পরিচয় নিবন্ধন করে জাতীয় পরিচয় প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এ কার্ড বিনামূল্যে প্রদান করা হলেও হারানোর ক্ষেত্রে নতুন কার্ড নিতে নির্দিষ্ট অঙ্কের ফি দিতে হবে। স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিতরণ কাজের উদ্বোধন করেছেন। স্থানীয় পর্যায়ে বিতরণে কারিগরি ত্রুটি, অদক্ষ কর্মী, ভুল তথ্য ভরা স্মার্টকার্ড জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলছে। এসব কাজ অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের ঘাটতি দূর করা শ্রেয়। স্মার্টকার্ড বিতরণে আনস্মার্ট চিত্র দৃশ্যমান না হওয়াই সঙ্গত। স্থানীয়ভাবে বিতরণের ক্ষেত্রে প্রচারণা না থাকায় ভোগান্তি বাড়ছে। বিতরণ পদ্ধতি সহজ করা উচিত। এলাকাভিত্তিক বিতরণ সময় এক সপ্তাহ করা হলে সবাই সহজে তা পেতে পারে। বিতরণজনিত সমস্যার সমাধান করা গেলে নাগরিকদের উদ্দীপনা বাড়বে বৈকি।
×