ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খাদিজার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে সরকার

প্রকাশিত: ০৭:৫৭, ৬ অক্টোবর ২০১৬

খাদিজার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে সরকার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসের চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বুধবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জনকণ্ঠকে বলেন, কলেজছাত্রী খাদিজা বেগমের চিকিৎসার সকল ব্যয় বহন করা হবে। আমি এ ব্যাপারে স্কয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরীকে টেলিফোন করে বলেছি, খাদিজার চিকিৎসার সকল ব্যয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রদান করা হবে। প্রসঙ্গত, সোমবার বিকালে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিতে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন খাদিজা বেগম নার্গিস। পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে আসার সময় চাপাতি দিয়ে তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম। নার্গিসকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক দফা অস্ত্রোপচার শেষে সোমবার রাতে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে আনা হয়। বর্তমানে তিনি স্কয়ার হাসপাতালের নিউরো সার্জারির জ্যেষ্ঠ পরামর্শক রেজাউস সাত্তারের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সংসদ সদস্যদের ক্ষোভ ॥ সংসদ রিপোর্টার জানান, সিলেটে শিক্ষার্থী খাদিজা বেগমের ওপর প্রকাশ্য বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংসদ সদস্যরা। জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, সিলেটে শিক্ষার্থী খাদিজা বেগমের ওপর হামলার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। সভ্যতা যতই উন্নত হোক না কেন, সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে মানুষ যেভাবে সোচ্চার হয়ে উঠেছে, একইভাবে এ ধরনের সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধেও জনগণকে সচেতন হতে হবে। বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তরকালে সংরক্ষিত নারী আসনের সরকার দলীয় সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় পার্টির সিনিয়র সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদও একই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দমনে সরকারকে নির্মম হওয়ার দাবি জানান। উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের এক নেতার নির্মম হামলায় সিলেটের শিক্ষার্থী খাদিজা বেগম এখন রাজধানীর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, খাদিজার ওপর হামলার পরপরই আমি সিলেটের ডিসি ও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। আজকেও (বুধবার) আমি খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে কথা বলেছি। আসামিকে ইতোমধ্যে ধরা হয়েছে। সিলেটের পুলিশ কমিশনার আমাকে জানিয়েছেন, আসামির বিরুদ্ধে সকল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে, তার যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেজন্য আইনী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, খাদিজার চিকিৎসার ব্যাপারে যা যা প্রয়োজন সব বিষয়ে কথা বলেছি, নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। হামলাকারী রেহাই পাবে না চুমকি ॥ মহিলা শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, সিলেটে সরকারী মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসের ওপর বর্বরোচিত হামলাকারী বখাটে বদরুল আলম যে সংগঠনের হোক না কেন সে রেহাই পাবে না। তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সরকার এই বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে। বলা হয়তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনকারী কেউই রেহাই পায় নাই, সেও পাবে না। তিনি বুধবার দুপুরে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে খাদিজার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে গিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী স্কয়ার হাসপাতালে আইসিইউও-তে থাকা খাদিজার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন। খাদিজার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তিনি ডাক্তারদের নির্দেশ দেন।-বিজ্ঞপ্তি। হামলাকারীর শাস্তি চেয়েছেবিএনপি ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসের ওপর হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে বিএনপি। বুধবার দুপুরে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খাদিজা আক্তারকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির পক্ষে এ দাবি জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ক্ষমতাসীন দলের প্রশ্রয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙ্গে পড়ার কারণেই খাদিজার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কলেজছাত্রী খাদিজার ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে অবিলম্বে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত বদরুল আলমকে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। দেশে ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের তরফ থেকে ব্যবস্থা না নিলে তা বন্ধ হবে না। খাদিজার ওপর হামলাকে মানবতাবিরোধী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এই কলেজছাত্রী পরীক্ষা দিতে গিয়ে সন্ত্রাসীর আক্রমণের শিকার হয়েছেন। একজন ছাত্রলীগ নেতা তাকে হত্যা করার উদ্দেশে অমানবিকভাবে, নরপিশাচের মতো চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে। ফখরুল বলেন, সারাদেশেই ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। কেএমআই খলিলকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার ॥ কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এবং যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কেএমআই খলিলকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গঠনতন্ত্রের ৫ (গ) ধারা মোতাবেক বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে কেআইএম খলিলের কাছে পাঠানো এক পত্রে এ বহিষ্কারের কথা জানান। বহিষ্কারাদেশ সংক্রান্ত পত্রের অনুলিপি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগ) এবং কুমিল্লা উত্তর জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবরেই পাঠানো হয়েছে।
×