ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান ইনু

আসছে হর্ষবর্ধনের মীর্জায়া

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৬ অক্টোবর ২০১৬

আসছে হর্ষবর্ধনের মীর্জায়া

ছবি মুক্তির আগেই ঝড় তুলেছেন বলিউডের আকাশে। প্রচারের আলোয় আলোকিত, তুমুল আলোচিত হর্ষবর্ধন কাপুর। এক সময়ে বলিউড শাসন করা অনিল কাপুর পুত্র, হালের ফ্যাশন আইকন অভিনেত্রী সোনম কাপুর ভ্রাতা হর্ষবর্ধন। রক্তে আছে অভিনয়ের বীজ। চলচ্চিত্র জগতে দীর্ঘ পারিবারিক ঐতিহ্য। কিন্তু এসব ছাপিয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম, নিজ যোগ্যতা আর মেধায় বিকশিত হতে যাচ্ছেন, মুক্তি প্রতীক্ষিত রাকেশ মেহরার জনআগ্রহের কেন্দ্রে উঠে আসা ছবি। ‘মীর্জায়’। তিনি অন্যদের মতো নন। তার নিজের দৃঢ় বিশ্বাস তিনি ব্যতিক্রম! তার উপস্থিতি পর্দায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হবে। মীর্জার প্রচারিত ট্রেলার অংশে তার উপস্থিতি সাবলীল। আকাশসম আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনি প্রস্তুত বলিউডে ঝড় তুলতে। প্রথম ছবিতেই দ্বৈত চরিত্রে তার অভিনয়ের যথার্থতা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। অন্য তারকাদের মতো প্রচারে আসক্ত নন! কিন্তু স্পট লাইটে অনেক সহজ তার উপস্থিতি। কাজ শেষে তিনি নিভৃত জীবন পছন্দ করেন। তার উপস্থিতি কোন ফিল্মি পার্টিতে উন্মাদনা ছড়ায় না। নিজ বয়সের চেয়ে প্রজ্ঞায় অনেক এগিয়ে তিনি। পারিবারিক ঐতিহ্য সহায়ক হলেও তার শুরুটা কিন্তু সহজ ছিল না। রাকেশ মেহরা তাকে প্রথম দেখেন দিল্লী-৬ ছবির শূটিং স্পটে। দেখা মাত্রই রাকেশ তাকে বলেন, তিনি একটি পাঞ্জাবী লোককাহিনী নির্ভর ‘মীর্জা সাহিবান’ (পওে মীর্জায়) নামে ছবি নির্মাণের কথা ভাবছেন, যার গল্প লিখছেন গুলজার। রাকেশ আরও বলেন, ‘তুমি একমাত্র ব্যক্তি যে কাজটি করতে পার’। সে সময়ে হর্ষবর্ধন লসএঞ্জেলেসে চলচ্চিত্র নিয়ে পড়ছিলেন এবং পরবর্তীতে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। মেহরার প্রস্তাবের বিপরীতে হর্ষবর্ধনের উত্তর ছিল, ‘আমি এখনও অনেক ছোট ও অনভিজ্ঞ, এ ধরনের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আমি এখনও প্রস্তুত নই।’ রাকেশ তার পরিকল্পনা স্থগিত রেখে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দুই বছর পর তাদের পুনরায় যোগাযোগ হয় এবং হর্ষবর্ধন বলেন, ‘আমি এখন প্রস্তুত মীর্জার জন্য’। শুরু হয় তার ‘মীর্জা’য় অভিনয়ের প্রস্তুতি। দ্বৈত চরিত্রের কারণে তিনি বিষয়টিকে দুটি ভিন্ন ছবিতে অভিনয় হিসেবে নেন। অভিনয়ের কারণে তাকে ঘোড়সওয়ার ও তীরন্দাজ হিসেবে প্রশিক্ষণ নিতে হয় আদিল হুসাইনের কাছে। প্রতিদিন সকাল বিকেল দু’ঘণ্টা করে। ছয় মাস প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ভিডিও প্রেরণ করেন রাকেশের কাছে। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। রাকেশ বলেন, ‘তোমাকে অসাধারণ হতে হবে।’ এ্যাকশন ডিরেক্টর এলেন আমিনের সঙ্গে তিনি দেখা করেন চরিত্রটিতে তার মুভমেন্ট নিখুঁত করার স্বার্থে। পরবর্তী নয় মাস তিনি মহালক্ষ্মী রেসকোর্সে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নয় মাস পর তারা জানায় তিনি ঘোড় সওয়ার ও তীরন্দাজ হিসেবে যে উচ্চতা অর্জন করতে চাচ্ছেন, সেই প্রশিক্ষণ দেয়ার মতো ভারতে কেউ নেই। শুরু হয় নতুন প্রশিক্ষকের অনুসন্ধান, নতুন প্রশিক্ষক নির্বাচিত হন আমেরিকার কেটি মরওয়েন। অতঃপর হর্যবর্ধনের আমেরিকা গমন। প্রতিদিন সকালে সেখানে তাকে ২০/২৫টি ঘোড়ার মলমূল পরিষ্কার করতে হতো। তাদের গোসল করিয়ে খাওয়ানো শেষে নিজে নাস্তা খেতে পেতেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় টিনা বেরটিনার কাছে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ভারতে ফিরে তিনি দেরাদুনে অলক উলফাত ও মুকেশ ছাবড়ার কাছেও অভিনয়ের প্রশক্ষণ লাভ করেন। দেড় বছরের দীর্ঘ প্রশিক্ষণ ও শরীর গঠন শেষে শুরু হয় মীর্জার শূটিং। সচরাচর তারকা পুত্রদের কাছ থেকে বেশি প্রত্যাশা থাকে সবার। এ নিয়ে তিনি বিচলিত ছিলেন কিনা? এ প্রশ্নের উত্তরে তার দৃঢ় উচ্চারণ ‘সততার সঙ্গেই বলছি আমি মোটেও নাভার্স ছিলাম না। কারণ আমি জানতাম কি করতে যাচ্ছি এবং সে লক্ষ্যে কতটা অর্জন করেছি।’ তার সহ অভিনেত্রী সাইরেমি খেরকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, ‘সে ভিন্ন ধরনের নারী। সে একজন ভাল স্পোর্টসম্যান। ছবির জন্য ঘোড়ায় চড়ার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সে অন্য অভিনেত্রীদের মতো নয় মোটেও এক কথায় সে টমবয়! অভিনয় নিয়ে পিতার উপদেশ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি কারও উপদেশ শোনার লোক নই। আমি সবার কথাই শুনি, কিন্তু নিজের মতো করেই করি আমার কাজ । আমার পিতা কিংবা বোন সোনম কাপুরের বেলাতেও তাই। কিন্তু এও সত্যযে আমার পিতা যখন মীর্জা দেখে প্রশংসা করে বলেন, ‘এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার মতো কেউ এ দেশে নেই।’ তখন তা আমার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দু’বোন সোনম আর বেহার নাম ট্যাটু করেছেন তার পিঠে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, পিতার চেয়ে মার প্রতি তার ভালবাসা একটু বেশি। তিনি এক একটি করে ছবি করায় বিশ্বাসী। আর তার পিতার ‘হামেশা কুছ করতে রহো’ নীতি তার অপছন্দ। সৃষ্টিশীল মানুষদের একসঙ্গে ধরে রাখাও সুন্দর শৈশব কৈশোর, ও পারিবারিক জীবনের জন্য মাকেই কৃতিত্ব দেন। প্রথম প্রেমে ব্যর্থতা থেকে হৃদয় ভাঙ্গার কষ্ট তাকে তাড়িত করে। তাই প্রেম তার কাছে এক জটিল অধ্যায়। ভালবাসা তার কাছে বলে কয়ে ঘটবার নয়। প্রেম যখন হবার এমনিতেই হবে। তবে এ মুহূর্তে তার অবসর নেই! নিজের সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি অন্তর্মুখী। কিছুটা অসামাজিক। ভিড় অপছন্দ করি। পার্টির সামাজিকতা পছন্দ নয়। কিন্তু আমি মানুষের কথা শুনতে ও তাদের জানতে পছন্দ করি। সবচেয়ে বেশি ভালবাসি বাড়িতে অবস্থান করতে। হর্ষবর্ধন কাপুর কতটা পথ যাবেন? পিতা কিংবা বোনের পরিচয় ছাপিয়ে উঠে আসবেন নিজ উচ্চতায়? তার বিশ্বাস তিনি পারবেন। বাকি উত্তর থাকুক সময়ের হাতে, আমরা অপেক্ষায় রইলাম ‘মীর্জা’র, অপেক্ষা বলিউডের আকাশে এক নতুন তারার।
×