ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উচ্চ শিক্ষার মান যাচাইয়ে হচ্ছে পৃথক প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৬ অক্টোবর ২০১৬

উচ্চ শিক্ষার মান যাচাইয়ে হচ্ছে পৃথক প্রতিষ্ঠান

বিভাষ বাড়ৈ ॥ জাতীয় শিক্ষানীতি ও শিক্ষাবিদদের সুপারিশ অনুসারে অবশেষে দেশের উচ্চশিক্ষার মান যাচাইয়ে চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে পৃথক প্রতিষ্ঠান ‘এ্যাক্রিডিটেশন (স্বীকৃত) কাউন্সিল’। ‘এ্যাক্রিডিটেশন (স্বীকৃত) কাউন্সিল আইন-২০১৬’র খসড়া ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী সপ্তাহে এ আইন অনুমোদনের জন্য পাঠানো হচ্ছে মন্ত্রিসভায়। শিক্ষাবিদরা কালবিলম্ব না করে মানসম্মত উচ্চ শিক্ষার স্বার্থে এ্যাক্রিডিটেশন (স্বীকৃত) কাউন্সিল গঠন ও কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন। জানা গেছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদারকি ও শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করবে এ কাউন্সিল। এর আগে গত মার্চে মন্ত্রিসভায় আইনটির খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন পায়। তবে সংসদে তোলার পর কিছু ধারা সংশোধনের জন্য তা আবার ফেরত আসে। সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো সংশোধন করেই এবার মন্ত্রিসভায় পাঠানো হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেছে, এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল আইন-১৬’এর খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকেই এটি তোলা হতে পারে। জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষানীতির ‘শিক্ষা প্রশাসন’ অধ্যায়ে বলা হয়েছিল উচ্চ শিক্ষার মান রক্ষা ও যাছাইয়ে গঠন করতে হবে ‘এ্যাক্রিডিটেশন (স্বীকৃত) কাউন্সিল’। শিক্ষানীতিতে বলা হয়, ‘দেশে বর্তমানে কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা প্রদানকারী বেসরকারী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সকল বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্নাতক ও পরবর্তী) মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণা পরিচালনায় সক্ষম কিনা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ব্যয় যৌক্তিক কি না, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পড়ানোর যথাযথ ব্যবস্থা আছে কি না সে সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন জরুরী। স্বাস্থ্য, প্রকৌশল এবং কৃষিশিক্ষা প্রদানকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। শিক্ষানীতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘অপর দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়লয়, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা প্রদানকারী সরকারী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মান নির্ণয় এবং তার ভিত্তিতে প্রতিবছর এগুলোর র‌্যাংকিং নির্ধারণ করা ও উন্নয়নের পরামর্শ দান করা হবে। উপযুক্ত দায়িত্ব পালন করার জন্য যথাযথ ক্ষমতা ও দক্ষতাসম্পন্ন একটি এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা হবে। শিক্ষানীতিতে বলা হলেও এতদিন বিষয়টি ঝুলেছিল। কয়েক দফা উদ্যোগ হলেও পরে আবার কাজ ঝুলে যায়। এ অবস্থায় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও শিক্ষাবিদরা কাউন্সিল গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আলোর মুখ দেখবে বহু প্রতীক্ষিত ‘এ্যাক্রিডিটেশন (স্বীকৃত) কাউন্সিল। এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানও যাচাই-বাছাই হবে এর মাধ্যমেই। এই আইনের বলে স্বায়ত্তশাসিত যে প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে সেটিই প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সনদ দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং করবে এই প্রতিষ্ঠানই। জানা গেছে, আইন অনুযায়ী কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হবেন এমন একজন, যিনি শিক্ষার গুণগতমান সম্পর্কে অভিজ্ঞ ও দক্ষ। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ২৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন এবং ১০ বছর অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন বা আছেন। এর আগের খসড়াটিতে কাউন্সিলের হওয়ার কথা ছিল ১১ সদস্যের। এবার বলা হয়েছে, ১৩ জনের কথা। সদস্যদের বিষয়ে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষাবিদ কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য হবেন। বাকি আটজন হবেন খ-কালীন। খসড়া আইন অনুযায়ী, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমোদন দেয়া ও শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করবে কাউন্সিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের কারিকুলামের নিয়ন্ত্রণও থাকবে এই কাউন্সিলের হাতে। খসড়ায় বলা হয়েছে, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বা বিভাগ খোলার জন্য কাউন্সিলের কাছে আবেদন করতে হবে। কাউন্সিলের সদস্যরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেবে। পরে কাউন্সিলই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও বিভাগ খোলার অনুমোদন দেবে। সনদ বাতিলের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, কোন বিশ্ববিদ্যালয় আইনের শর্ত ভাঙলে তাদের সনদ বাতিল হবে। এ্যাক্রিডিটেশন (স্বীকৃত) সনদ ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তি বা তথ্য-নির্দেশিকা প্রকাশ করতে পারবে না। কোন সনদও দিতে পারবে না। কাউন্সিলের সদস্যরা কোন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে কোন তথ্য গোপন করা যাবে না। ব্যবস্থা নেয়া হবে ভুল তথ্য দিলেও। সনদ বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অবশ্য রিভিউ আবেদন করতে পারবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি কমিটি গঠন করে আবেদনটি বিবেচনা করে দেখবে কাউন্সিল। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির সরকারের নতুন উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলছিলেন, এটা এখনও হলো না এটাই হতাশার। কারণ এটা হলে উচ্চ শিক্ষার অনেক সমস্যা যেমন কমবে তেমনি আসবে শৃঙ্খলা। আমরা পাব মান সম্মত উচ্চ শিক্ষা। কালবিলম্ব না করে মানসম্মত উচ্চ শিক্ষার স্বার্থে এ্যাক্রিডিটেশন (স্বীকৃত) কাউন্সিল গঠন ও কার্যকর করবে বলে আশা প্রকাশ করেন এ শিক্ষাবিদ। এদিকে সম্প্রতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের স্বচ্ছতা আনতে ভাইবা ছাড়াও প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেয়ার আদেশ দিয়েছে সরকার। যদিও এ আদেশ নিয়ে অনেকে আপত্তি তুলেছেন তবে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগে এর গুরুত্ব আছে বলেও মনে করেন অনেকে। জানা গেছে, উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিতে একটি নীতিমালা তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। যেখানে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালার খসড়ায় প্রভাষক নিয়োগ থেকে শুরু করে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির অভিন্ন মাপকাঠি রাখা হয়েছে। প্রভাষক পদে প্রয়োজনে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দিতে প্রস্তাব করে ইউজিসি। খসড়া নীতিমালায় এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত প্রার্থীদের অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাবনা এসেছে। অভিন্ন নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়নের নীতিমালা’ নিয়ে ইউজিসি বলেছে, অভিন্ন নীতিমালা হলে শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি একটি কাঠামোতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাবে। নীতিমালায় প্রভাষক নিয়োগে আলাদা আলাদা অনুষদের জন্য আলাদা যোগ্যতা ধরা হয়েছে। সম্প্রতি দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে হুঁশিয়ারি করে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল মঞ্জুরি কমিশন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইউজিসি’র অনুমোদন ছাড়া নতুন অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট, সেন্টার বা কোর্স খোলা, জনবল নিয়োগ এবং শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। গণবিজ্ঞপ্তিতে হুঁশিয়ারি করে বলা হয়, নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যারা কার্যক্রম চালাচ্ছে সে কার্যক্রমের দায়ভার সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হবে এবং এসব অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট, সেন্টার বা কোর্স থেকে যে সব শিক্ষার্থী পাস করে বের হবে তাদের দায়দায়িত্ব কোনভাবেই ইউজিসি গ্রহণ করবে না। অনুমোদনহীন খাতের জন্য কোনরকম অর্থ ছাড় দিবে না বলেও কঠোরভাবে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছে ইউজিসি। এর আগে দেশের কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান সমস্যা তুলে ধরেও গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ইউজিসি। সে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া থেকে বিরত থাকতে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের পরামর্শ দেয়া হয়।
×