ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে মৃত ঘোষিত সেই শিশুটি অবশেষে মারা গেছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৬ অক্টোবর ২০১৬

চট্টগ্রামে মৃত ঘোষিত সেই শিশুটি অবশেষে মারা গেছে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মৃত ঘোষণার পর প্যাকেটবন্দী করা সেই জীবিত শিশুটি অবশেষে মারা গেছে। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে মারা যায় নবজাতকটি। সোমবার রাতে প্রবর্তক মোড় এলাকায় অবস্থিত সিএসসিআর হাসপাতালে শিশুটির জন্ম হয়েছিল। জন্মের দুই ঘণ্টার মধ্যে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে শিশুটিকে হস্তান্তর করেছিল মায়ের কাছে। জীবিত শিশুটিকে মৃত ঘোষণা ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অবহেলা তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ লিয়াকত আলী খান জানান, শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। মৃত্যুর পর মরদেহ অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গত সোমবার রাত ১টার দিকে নগরীর নামী বেসরকারী হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত সিএসসিআর হসপিটালে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ডাঃ রিদওয়ানা কাউসার। প্রসূতি পেশায় ডেন্টাল সার্জন এবং তার স্বামী ডাঃ নুরুল আজম কক্সবাজার জেলা হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার। স্বাভাবিক একটি বাচ্চার ওজন ২ দশমিক ৩ কেজি থেকে আড়াই কেজি হলেও এ বাচ্চাটির ওজন ছিল ৫শ গ্রাম। জন্মের ঘণ্টা দুয়ের পর মা ডাক্তার রিদওয়ানাকে জানানো হয় যে, শিশুটির জন্মই হয়েছে মৃত অবস্থায়। সে হিসেবে ডেথ সার্টিফিকেটও লেখা হয়ে যায়। মৃত ঘোষিত এই কন্যা শিশুটিকে প্যাকেটবন্দী করে তুলে দেয়া হয় মায়ের হাতে। কিন্তু মা প্যাকেট খুলে বাচ্চার মুখ দেখেই ধারণা করেন যে তার সন্তান জীবিত। তিনি শ্বাস-প্রশ্বাসও অনুমান করছিলেন। দ্রুত অবহিত করেন হাসপাতালের নিওনেটাল ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটের (এনআইসিইউ) কর্মরত চিকিৎসককে। কিন্তু তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করেন এবং বার বার শিশুটি মৃত বলেই দাবি করতে থাকেন। সিএসসিআর হসপিটালের সংশ্লিষ্ট ইউনিটের চিকিৎসকদের অবহেলা দেখে একপর্যায়ে ডাঃ রিদওয়ানা তার সন্তানকে আরেকটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে বিশেষায়িত ইউনিটে সিট না থাকায় পরে নিয়ে যান মেহেদীবাগে অবস্থিত ম্যাক্স হসপিটালে। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে শিশুটির মৃত্যু হয়। ডাঃ রিদওয়ানার অভিযোগ, শিশুটিকে যদি শুরু থেকেই অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হতো তাহলে পরিস্থিতি ইনপ্রুভ করত। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সিএসসিআর কর্তৃপক্ষ। এদিকে জীবিত শিশুকে মৃত ঘোষণা এবং এর নেপথ্য চিকিৎসক ও সিএসসিআর কর্তৃপক্ষ অবহেলা তদন্তে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সিভিল সার্জন অফিস। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহ আলমকে। অপর দুই সদস্য হলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন অজিত কুমার দে ও সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের প্রধান সহকারী এসএম শাহেদুল ইসলাম। কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। এছাড়া সিএসসিআর কর্তৃপক্ষও বলেছে, জীবিত শিশুকে মৃত হিসেবে প্রত্যয়ন করে ডেথ সার্টিফিকেট প্রদান ও তার বাবা-মায়ের অভিযোগ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×