ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর নিখোঁজ তরুণদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অপেক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৬ অক্টোবর ২০১৬

রাজধানীর নিখোঁজ তরুণদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অপেক্ষা

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানী ঢাকার ধানম-ির বাসা থেকে বের হয়ে গেছে তাওসিফ হোসেন। ধানম-ির বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে গত ৩ ফেব্রুয়ারি। তারপর ৭ মাস পার হয়ে গেছে। সে আর ফিরে আসেনি। এখনও নিখোঁজ। নিবরাস ইসলাম জঙ্গী হামলা করে নিহত হয়েছে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে। যেই দিন তাওসিফ হোসেন বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন, সেই একই দিনে ঘরছাড়া শেহজাদ ওরফে অর্কও। তারও কোন খোঁজ নেই। যশোর, বগুড়ায় যখন জঙ্গীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করেছে তখন রাজধানী ঢাকায় যেসব তরুণ নিখোঁজ হয়েছেন তাদের গন্তব্য কোথায়? এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন নিখোঁজ তরুণদের স্বজনরা, তদন্তকারীরা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর রাজধানী ঢাকায় নিখোঁজ তরুণের সংখ্যা কত তার অনুসন্ধান শুরু হয়। নিখোঁজ তরুণদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই, সত্যি। তবে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে নিখোঁজের সংখ্যা প্রায় ৩০-এর কোটায়। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী নিখোঁজ তরুণদের অনুসন্ধান শুরু হলে ভুল ভ্রান্তির পর সংশোধন করে জঙ্গী বিরোধী অভিযানের পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়। যশোর, বগুড়ায় ফিরে আসার মধ্য দিয়ে জঙ্গীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, রাজধানী ঢাকায় তার প্রতিফলন ঘটলে শুভ সূচনা ঘটবে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞগণ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর নিখোঁজ তরুণদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। পূর্ণাঙ্গ তথ্য কোন বাহিনীর হাতে না থাকলেও এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৮ বিভাগে যে সন্দেহভাজন নিখোঁজদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাতে রমনা বিভাগে ১৪ জন, গুলশান বিভাগে ৫ জন, মিরপুর বিভাগে ২ জন ও উত্তরা বিভাগে ৩ জনসহ ৩০ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছে। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত অন্তত ৩ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে একজন হচ্ছে, বিডিআর বিদ্রোহে নিহত এক সেনা কর্মকর্তার ছেলে মোঃ আশিকুর রহমান (২১) নিহত হয়েছেন, সিরিয়ায়। অপর একজন নিহত হয়েছে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলাকারী মীর সামেহ মোবাশ্বের। অপর একজন নিহত হয়েছে মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষককে হত্যাচেষ্টায় আটক ও পরে ক্রসফায়ারে নিহত গোলাম ফয়জুল্লাহ ফাহিম। নিখোঁজ তালিকার এই ৩ জনকে বাদ দিলে এখনও যারা নিখোঁজ তারা কোথায়? তারা জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে বলে তদন্তকারীদের ধারণা। স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাতে তাদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি এখন আলোচনায় উঠে এসেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলশান হলি আর্টিজান বেকারির পর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর টনক নড়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। নিখোঁজ ১০ জঙ্গীর তালিকা প্রকাশ করে তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩ জনের পরিবারের খোঁজ মিলছে না। নিখোঁজ দুই সহোদর ইব্রাহীম হাসান খান ও জুনায়েদ খানের বাসা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। অপরদিকে পান্থপথ এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম। পরিবার দুটি কোথায় আছে এ বিষয়ে থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। গুলশানে হামলাকারীদের কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ১০ তরুণের সন্ধান চেয়ে তাদের প্রতি ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন অভিভাবকরা। এই ১০ তরুণের সন্ধান পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চেয়েছে তাদের পরিবার। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই সব পরিবারের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। নিখোঁজদের একজন ঢাকার তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান যিনি আজিমপুর জঙ্গী আস্তানায় পুলিশের অভিযানের আগেও ছিলেন। তার স্ত্রী আজিমপুর জঙ্গী আস্তানা থেকে গ্রেফতার হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, ঢাকার ধানম-ির জুবায়েদুর রহিম, সিলেটের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি ও জুন্নুন শিকদার, সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী। এর মধ্যে সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী গুলশান হলি আর্টিজান বেকরিতে জঙ্গী হামলার মাস্টারমাইন্ড। তিনি নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশী অভিযানে নিহত হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের ধর্মান্তরিত মুসলমান মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি জাপান প্রবাসী থাকার তথ্য থাকার পর থেকে এখনও নিখোঁজ। পুলিশের তালিকায় নাম নেই এমন নিখোঁজ থাকার সংখ্যাও রয়েছে। একই পরিবারের পাঁচ জন নিখোঁজ থাকার বিষয়টি পুলিশের তালিকায় না থাকলেও পরবর্তীতে তা জানা যায়। অনেক পরিবারের তরুণ নিখোঁজ থাকলেও সামাজিক সুনাম অক্ষুণœ রাখাসহ পরিস্থিতির কারণে তারা চেপে যাচ্ছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, থানায় জিডির বাইরে আরও অনেকে নিখোঁজ থাকতে পারেন। অনেক পরিবারই জিডি করেনি। নিখোঁজ তালিকা করার পর দেখা গেছে, প্রেমঘটিত, ব্যবসায়িক, পারিবারিক সঙ্কটসহ নানা কারণে মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন। এদের মধ্যে কতজন জঙ্গীবাদে জড়িয়ে নিখোঁজ, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পায়নি। তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করার বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। তবে জঙ্গীবাদে যুক্ত হয়ে থাকলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য সরকার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তিনি সরকারের দেয়া সুযোগ নিতে নিখোঁজ তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
×