ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের সম্মেলন

কেন্দ্রীয় কমিটিতে বেশ কিছু তরুণ মুখ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৬ অক্টোবর ২০১৬

কেন্দ্রীয় কমিটিতে বেশ কিছু তরুণ মুখ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন

সংসদ রিপোর্টার ॥ আর মাত্র ১৬ দিন বাকি ঐতিহ্যবাহী ও উপ-মহাদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন। আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য এবারের সম্মেলনকে স্মরণীয় ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে ক্ষমতাসীন দলটিতে। সম্মেলনকে ঘিরে দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে কৌতুহলের অন্ত নেই। দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত, এমনকি দেশের সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিকের মধ্যে কৌতূহল কী হতে যাচ্ছে সম্মেলনে। নেতৃত্বে কী ধরনের পরিবর্তন আসছে? চমক আসছে, নাকি পুরনোরাই বহাল থাকছে? সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাট্রিক করছেন, নাকি নতুন কেউ আসছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই পদটিতে। এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অন্ত নেই দলটিতে। সম্মেলন সফল করতে গঠিত ১১ উপ-কমিটির প্রায় ৮০টি বৈঠক ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনস্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপন করা হয়েছে দলটির অস্থায়ী ক্যাম্প। সেখানে প্রতিদিনই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বৈঠকে বসে প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন করতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সম্মেলনকে ঘিরে ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়কে বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জ্বায় সজ্জিত করা হয়েছে। শুধু প্রস্তুতি পর্বই নয়, কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে ইচ্ছুক নেতাদের জোর দৌড়ঝাঁপ এখন চোখে দেখার মতো। আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় পদপ্রত্যাশীদের ব্যাপক আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর একটু সুনজর পেতে সবাই এখন কৌশলী হয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। এদিকে সম্মেলনের তারিখ যতই কাছাকাছি আসছে, দলের নেতাদের মধ্যে আশা আর আশঙ্কা ততোই বাড়ছে। তারুণ্যের চমক আসছে এমন গুঞ্জন ওঠায় সম্মেলনে দলের উদীয়মান তরুণদের মধ্যে কেউ কেউ কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাবেন বলে আশার সঞ্চার হয়েছে। আর কেন্দ্রীয় কমিটিতে যারা আছেন তাদের কেউ কেউ ভালো পদ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। অন্যদিকে কিছু নেতার মাঝে আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি, আগামী সম্মেলনে তারা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়ার আতঙ্কে রয়েছেন। সূত্র জানায়, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেই ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান চালানো হতে পারে। বিতর্কিত ও সাংগঠনিকভাবে ব্যর্থদের বাদ দিয়ে কর্মীবান্ধব, গণমানুষের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন নেতৃত্ব আনা হবে। নতুন নেতৃত্ব তৈরি ও তরুণদের কাজে লাগাতে আগামী সম্মেলনে বেশ কিছু নতুন মুখ কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। বিগত দিনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন থেকে যেসব নেতা সাংগঠনিক কাজে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এবং পরিচ্ছন্ন ইমেজ রয়েছে তারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেতে পারেন। এবার সম্মেলনে আওয়ামী লীগের ৬ হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর আসবেন। এছাড়া ২৭টি গণতান্ত্রিক দেশের দেড় শতাধিক রাজনীতিক, ৩০ হাজার ডেলিগেট এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আগামী ২২ অক্টোবর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনী ভাষণ এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের রিপোর্ট পেশ করার পর বিদেশি অতিথিরা বক্তৃতা করতে পারেন। এ ধরনের প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। কাউন্সিলে এবারের সেøাগান ‘উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার/ এখন সময় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূলমঞ্চের সামনে বালি শিল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকান্ডের দৃশ্য। উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ২৩ অক্টোবর সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলরদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে মূল কাউন্সিল অধিবেশন। এ সময় জেলা নেতাদের বক্তব্য শুনবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এ অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হবে। জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দলের ২০তম জাতীয় এ সম্মেলনে আবারো সভাপতি হচ্ছেন। কারণ জাতির পিতা হত্যার পর দলকে সুসংগঠিত করে তৃতীয়বার ক্ষমতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অবদান অপরিসীম। আর তাই তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে দলের নেতাকর্মীরা সভাপতি হিসেবে কল্পনাও করতে পারেন না। কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর কাউন্সিলরদের সম্মতিতে সভানেত্রী শেখ হাসিনা পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেবেন। জানা গেছে, সম্মেলনে ব্যবহার করা হবে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার। ১০ দিন আগে থেকেই আলোকসজ্জা করা হবে পুরো রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ প্রবেশপথ। ডিজিটাল ডিসপ্লেতে দেখানো হবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সব উন্নয়ন। দিন-রাত ধরে বড় বড় এলইডি স্ক্রিনে দেখানো হবে দলটির ইতিহাস, ঐতিহ্য, অর্জন ও উন্নয়নের চিত্র। এরই মধ্যে সেসব ডকুমেন্টারি নির্মাণ করা হয়েছে। নৌকা আকৃতির মঞ্চ তৈরি করা হবে। মঞ্চের উচ্চতা হবে মাটি থেকে ২৫ ফুট। মঞ্চের পেছনে ৩৫ ফুট উচ্চতার এলইডি পর্দা থাকবে। এছাড়া মঞ্চের সামনের দিকে স্বচ্ছ কাচের খুঁটিবিহীন একটি গ্যালারি তৈরি করা হবে। যার আকার হবে ২৩০ ফুট বাই ১২৫ ফুট। সেখানে সাত হাজার অতিথির আসন থাকবে। ৪০ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্যান্ডেল করা হবে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে গত ১ অক্টোবর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। কাউন্সিলর ও ডেলিগেট দিয়ে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার লোকের সমাগম ঘটবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তাদেরও দুই দিন খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলার পৃথক পৃথক স্থান থাকবে। এছাড়া দুই দিন ধরেই রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশদ্বারে এবং সম্মেলন স্থলের চতুর্দিকে একাধিক মেডিকেল টিম ও এ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ প্রবেশপথগুলোতে দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে। এছাড়া সম্মেলনে আগত বিদেশি অতিথিদের জন্য আপ্যায়ন, ঘোরাফেরা এমনকি রাতযাপনেও রাজকীয় আতিথেয়তার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশি বিনোদন, রাজনৈতিক দর্শন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো পরিদর্শনের ব্যবস্থাও করেছে দলটি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। তবে এবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি বাড়বে। এক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০টি পদ বেড়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ৮১ কিংবা ৮৩ হবে। আর কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক একশ’র মধ্যে রাখা হবে। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সবশেষ জাতীয় সম্মেলন হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। তবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে কমিটির মেয়াদ আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
×