ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শুভ জন্মদিন

৩৩-এ পা রাখলেন মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৬ অক্টোবর ২০১৬

৩৩-এ পা রাখলেন মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শুরুর পর ১৫ বছর পেরিয়ে গেছে। তখন সবেমাত্র ১৮ বছর পেরিয়েছে বয়স। ২০০১ সালের নবেম্বর থেকে ২০১৬ সালটাও পার হতে চলল। কিন্তু এই ১৫ বছর টানা তিনি ক্রিকেট মাঠে নামতে পারেননি। ক্যারিয়ারের বড় একটি অংশ জুড়েই ছিল ইনজুরির ভয়াল থাবা। সেই থাবায় দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থেকেছেন, দুই হাঁটুতে সবমিলিয়ে আটবার বড় ধরনের অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। এরপরও মাশরাফি বিন মর্তুজার কাছ থেকে ক্রিকেটকে আলাদা করা যায়নি, তিনি যেন ক্রিকেটের জন্যই জন্মেছেন। ক্রিকেট আর মাশরাফি এক অবিচ্ছেদ্য প্রেমের গল্প। হয়তো আগামী বছর জুনে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাবেন। কারণ ইতোমধ্যেই বয়স ৩৩ হয়ে গেছে। বুধবার ছিল দেশের অন্যতম সেরা এ অধিনায়ক, ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খ্যাত মাশরাফির জন্মদিন। ১৯৮৩ সালে চিত্রা নদীর পাড়ে নড়াইল সদরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নড়াইল শহরেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথমবার দলের অধিনায়কও হয়েছিলেন। কিন্তু সেই সফরে ইনজুরি নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন। সেই ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরতেই দীর্ঘ ১৪ মাস পেরিয়ে গিয়েছিল এবং টেস্ট ও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট তখন থেকেই আর খেলা হয়নি। ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকে আবার টি২০ ও ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব দিয়ে একের পর এক সাফল্য এনে দিচ্ছেন তিনি। যার সঙ্গেই মাশরাফি পরিচিত হয়েছেন, মুহূর্তেই আপন করে নিয়েছেন এবং একেবারেই চিরাচরিত যে ভাষায় নিজের পরিবারের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন সেভাবেই আলোচনা করেছেন। এ কারণেই মাশরাফির কথার বাইরে যাওয়ার কেউ নেই। দলের সতীর্থরাও তাকে মেনে চলেন অক্ষরে অক্ষরে। আর সেই সঙ্গে এত ইনজুরি নিয়েও দুর্দান্ত বোলিং করে যাওয়া ও দারুণভাবে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে একের পর এক সাফল্য এনে দেয়াটা তাকে করে তুলেছে আরও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে। তার সরল আর ভদ্র-নম্র আচরণের সবচেয়ে বড় প্রমাণ এবার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে চলমান তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে। ১ অক্টোবর আফগানদের বিরুদ্ধে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচ চলার সময় এক পাগলভক্ত মাশরাফিকে জড়িয়ে ধরার জন্য নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে মাঠে ঢুকে পড়ে। নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও মাশরাফি তাদের আটকেছেন এবং ওই ভক্তকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এজন্যই মাশরাফিকে এত ভালবাসেন। এই ভালবাসা একদিনে হয়নি। তিনি অনেকবারই একা বাংলাদেশ দলকে জয় পাইয়ে দিয়েছেন। তবে মাশরাফি কোন উদযাপন পছন্দ করেন না। তাই হয়তো জাতীয় দলের সতীর্থদের সঙ্গে শেষ জন্মদিনটা শুধু শুভেচ্ছা বিনিময়েই শেষ হয়েছে এদিন মিরপুর স্টেডিয়ামে। অনুর্ধ-১৯ দলে সুযোগ পাওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং কোচ এ্যান্ডি রবার্টস তাকে করেছেন আরও ধারালো। তারই পরামর্শে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে নেয়া হয়েছিল মাশরাফিকে এবং একটি মাত্র ম্যাচ খেলেই জাতীয় দলে সুযোগ করে নেন। প্রথম শ্রেণীর কোন ম্যাচ না খেলেই টেস্টে অভিষেক হয়েছিল তার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ‘নড়াইল এক্সপ্রেসকে। চট্টগ্রামে কিংবা পোর্ট অব স্পেনে-ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম দুটি জয়েই ম্যাচসেরার পুরস্কার তার। ৩৬ টেস্টে ৭৮ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি তিন হাফসেঞ্চুরিসহ ৭৯৭ রানও আছে তার নামের পাশে। আর ১৬৩ ওয়ানডেতে উইকেট পেয়েছেন ২০৮টি, রান ১,৪৫০। বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হিসেবে সাকিব আল হাসানের পরই তার অবস্থান। হয়তো আরও অনেক এগিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটেই অন্যরকম এক উচ্চতায় থাকতেন মাশরাফি। কিন্তু ইনজুরি সেটা হতে দেয়নি। যে ১৫ বছর তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছিলেন এর মধ্যে সবমিলিয়ে অন্তত ৫ বছরই তার মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছে। দলের অপরিহার্য বোলার হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মাশরাফি ওই ৫ বছর খেলতে পারলে দেশের ক্রিকেটও ভাল কিছু সাফল্য পেত এবং মাশরাফির উইকেট সংখ্যা হয়তো এখন ওয়ানডে ক্রিকেটে তিন শতাধিক থাকতো।
×