ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজ শুরু শুক্রবার

জয়ের প্রত্যাশায় প্রস্তুত দু’দলই

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৬ অক্টোবর ২০১৬

জয়ের প্রত্যাশায় প্রস্তুত দু’দলই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজ নিয়ে বহু কথা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল আসবে না, এমন আতঙ্কও তৈরি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল এসেছে। একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলে ফেলেছে। সেই প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের বিপক্ষে জিতেছেও। এবার বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড মূল সিরিজে নামার পালা। শুক্রবার প্রথম ওয়ানডে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ শুরু হচ্ছে। দুই দলের মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হবে। প্রথমে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হবে। আগামীকাল শুক্রবার, রবিবার ও বুধবার যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দুটি ওয়ানডে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হবে। তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচটি চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। সবকটি ম্যাচ দিবারাত্রিতে, দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে। ওয়ানডে সিরিজ শেষে চট্টগ্রামেই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হবে। ২০ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট শুরু হবে। এরপর মিরপুরে ২৮ অক্টোবর থেকে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে বিসিবি-ইংল্যান্ড একাদশের মধ্যকার চট্টগ্রামেই দুটি দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ পরিসরের সব ম্যাচই সকাল ১০টায় শুরু হবে। তবে সিরিজে থাকছে না কোন টি২০ ম্যাচ। এ সিরিজের আগে দুই দলের মধ্যকার তিনটি ওয়ানডে সিরিজ হয়েছে। সবকটিতেই জিতেছে ইংল্যান্ড। ২০০৩ সালে ও ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের মাটিতে হওয়া দুটি সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ হয়। তবে ২০১০ সালের জুলাইয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া দ্বিপক্ষীয় তৃতীয় সিরিজে আর হোয়াইটওয়াশ হয়নি বাংলাদেশ। সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে জিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের সম্ভাবনাও জাগায় বাংলাদেশ। তবে সেই সময়ের বাংলাদেশ দল এতটা শক্তিশালী ছিল না বিধায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম এ জয়টিই ইতিহাস রচনার মতো সাফল্য হয়ে ধরা দেয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের চেয়ে টেস্টে একটি সিরিজ বেশি খেলে বাংলাদেশ। দুটি সিরিজ বাংলাদেশের মাটিতে ও সমান সংখ্যক সিরিজ ইংল্যান্ডের মাটিতে হয়। সব সিরিজের ফল হয় একই। ২০০৩ ও ২০১০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের মাটিতে এবং ২০০৫ ও ২০১০ সালের মে মাসে ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজগুলো হয়। সবকটি সিরিজেই হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। ব্যবধান থাকে ২-০। ২০১০ সালে ছয় বছর পর আবার বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে এসেছে ইংল্যান্ড। তবে এবার আর বাংলাদেশ আগের মতো দুর্বল দল নয়। অনেক শক্তিশালী দল। যে দলের বিপক্ষে সিরিজ সহজভাবে জেতার কোন সুযোগই নেই। টেস্টে কি হয়, তা সময়ই বলবে। তবে ওয়ানডে সিরিজ যে বাংলাদেশও জিতে নিতে পারে, সেই আশাও আছে। বিশেষ করে মঙ্গলবার প্রস্তুতি ম্যাচে জাতীয় দলের তিন ব্যাটসম্যান শতক করা ইমরুল কায়েস, অর্ধশতক করে ছন্দে ফেরা মুশফিকুর রহীম ও ৪৬ রান করা নাসির হোসেন যেভাবে ব্যাটিং করেছেন, তাতে ইংল্যান্ড বোলারদের বিপক্ষে ব্যাটিংটা যে একটু বুঝে খেললেই করা যাবে; তা বুঝাই গেছে। বল হাতে অবশ্য বিসিবি একাদশের বোলাররা জৌলুস ছড়াতে পারেননি। আর তাই বিসিবি একাদশ ৩০৯ রান করেও হেরেছে। এর পেছনে অবশ্য কারণও আছে। বিসিবি একাদশে যে বোলাররা খেলেছেন, আল আমিন ছাড়া এ মুহূর্তে জাতীয় দলের কেউ খেলেননি। জাতীয় দলে পেস আক্রমণে মাশরাফি বিন মর্তুজা, তাসকিন আহমেদ, শফিউল ইসলাম, আল আমিন হোসেন এবং স্পিনে সাকিব আল হাসান ও বর্তমানে সবচেয়ে বয়সী ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেল আছেন। যদি বাংলাদেশ দল স্কোরবোর্ডে বেশি রান জমা করে ফেলে তাহলেই ইংল্যান্ডের সামনে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। আবার সর্বশেষ চার ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে তিনটি ম্যাচেই জিতেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে সর্বশেষ দুটি ম্যাচেই যে জিতেছে বাংলাদেশ, তা থেকে মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাহমুদুল্লাহদের প্রেরণাও মিলবে। সেই সঙ্গে আফগানদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে দুর্দান্ত খেলার আত্মবিশ্বাসতো আছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তাই সিরিজ জয়ের সম্ভাবনাও দেখেছেন। বলেছেন, ‘আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে পারলে সুযোগ থাকবে।’ সঙ্গে আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ জিতে যে আত্মবিশ্বাস চাঙ্গা ক্রিকেটারদের, তাও জানিয়েছেন, ‘আমি মনে করি সিরিজটা (আফগানদের বিপক্ষে) জিততে পেরেছি এটা একটা ভাল দিক। আর দ্বিতীয় ম্যাচের পর হারলে একটা চাপ থাকে এটা স্বাভাবিক। সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পেরে ভাল লাগছে। আর আমি মনে করি, সামনে যে সিরিজ আসছে সেটা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং। আমরা যদি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে পারি, আশাকরি আমাদের সুযোগ থাকবে। এর আগেও আমরা ভাল খেলেছি ওই আত্মবিশ্বাসটা আছে।’ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১০ সালের আগে বাংলাদেশের কোন জয় নেই। তবে ২০১১ সালের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে আবার ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের কোন জয় ছিল না। ২০১১ সালে বাংলাদেশে হওয়া বিশ্বকাপে এবং ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে হওয়া বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। গতবছরতো ইংল্যান্ডকে বিদায় করে দিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালেই খেলেছে মাশরাফিবাহিনী। এখনতো বাংলাদেশ দল আরও পরিণত। বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে সিরিজে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকে টানা ছয়টি সিরিজ জিতেছে মাশরাফিবাহিনী। ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে টানা সপ্তম সিরিজ জয় হবে। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের নজর সেখানেই আছে। ইংল্যান্ড কি এত সহজেই সিরিজ জিততে দেবে? সম্প্রতি ওয়ানডেতে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে ইংল্যান্ডও। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগস্ট-সেপ্টেম্বরেই ৪-১ ব্যবধানে সিরিজে জিতেছে। এরআগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে। তারও আগে টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে ইংল্যান্ড। নির্ধারিত ওভারের ম্যাচগুলো দুর্দান্ত খেলছে ইংল্যান্ড। তাই বাংলাদেশের কাছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটি যে সহজ হবে না, তা বুঝাই যাচ্ছে। তবে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার নিজেই বলে দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ সিরিজ আমাদের জন্য কঠিন হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি সিরিজ হবে আশা করি।’ সেই সিরিজ শুরু হবে শুক্রবার।
×