ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শারদীয় দুর্গাপূজায় নাট্যোৎসবের আয়োজন করছি ॥ লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৬ অক্টোবর ২০১৬

শারদীয় দুর্গাপূজায় নাট্যোৎসবের আয়োজন করছি ॥ লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস

লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস। একাধারে অভিনেতা, নির্দেশক, সংগঠক ও সমাজসেবক। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার অভ্যন্তরে রাজারবাগের বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে তার উদ্যোগে ৪ দিনব্যাপী এক নাট্যোৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। আগামী ৮ অক্টোবর থেকে এ নাট্যোৎসব শুরু হচ্ছে। উৎসব ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। রাজারবাগ মন্দিরে চারদিনের নাট্যোৎসব প্রসঙ্গে জানতে চাই। চিত্তরঞ্জন দাস : রাজারবাগ বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে আগামী ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে চার দিনব্যাপী শারদীয় নাট্যোৎসব। আগামী ১১ অক্টোবর পর্যন্ত এ উৎসব চলবে। আমাদের চার দিনব্যাপী নাট্যোৎসবে দেশের আলোচিত চারটি প্রযোজনা মঞ্চস্থ হবে। এর মধ্যে প্রথমদিন থাকছে যাত্রাপালার আঙ্গিকে উপস্থাপনা ‘বাংলার মহানায়ক’। যাত্রাপালাকার মিলন কান্তিদের রচনা এবং আমার নির্দেশিত এই প্রযোজনাটি পরিবেশনা করবে দেশ অপেরা। দ্বিতীয় দিন থিয়েটার প্রযোজিত, ত্রপা মজুমদার নির্দেশিত এবং ফেরদৌসী মজুমদার অভিনীত নাটক ‘মুক্তি‘, তৃতীয় দিন প্রাঙ্গণেমোর প্রযোজিত, নূনা আফরোজ অভিনীত-নির্দেশিত নাটক ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ এবং উৎসবের সমাপনী দিনে চলচ্চিত্র শিল্পী ও নাট্যকর্মীদের অভিনয়ে, অগ্নিবীণার প্রযোজনা এবং আমার নির্দেশিত নাটক ‘ঢাকার অসুখ-ডাক্তার চাই’ মঞ্চস্থ হবে। নাট্যোৎসবের প্রেক্ষাপট নিয়ে যদি বলেন। চিত্তরঞ্জন দাস : সম্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি মানসিংহের স্মৃতি বিজড়িত গঙ্গাসাগর বক্ষের কূল ছুঁয়ে অবস্থিত এই প্রাঙ্গণে গত ১৯৯৫ সাল থেকেই আমি নাট্যোৎসবের আয়োজন করছি। এক সময় ভক্ত গিরিশ, ভক্ত প্রহ্লাদ, মহারাজা হরিশ চন্দ্র, রাম-সীতা প্রভৃতি পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক নাটক করতাম। এটা এক অর্থে আমাদের মতো করে আমাদের নির্মাণ, আমাদের আনন্দ, আমাদের আঞ্চলিক আবহের মধ্যে দিয়ে উদযাপন শুরু ও শেষ ছিল। কিন্তু গতবার আমরা আমাদের নাট্যোৎসবে পেয়েছিলাম দেশের লিজেন্ড অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারকে। তার উপস্থিতি এবং অভিনয় দেখতে উপচে পড়া ভিড় আমাদের নাট্যোৎসবকে ভিন্নমাত্রা দেয়। তাঁর উপস্থিতির কারণে এখন আমাদের নাট্যোৎসব আঞ্চলিক গ-ি ছাড়িয়ে অনেকটাই জাতীয় স্তরে চলে এসেছে। এবার আমরা আমাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ নাট্যোৎসব ও সাংস্কৃতিক আয়োজন নিয়ে উপস্থিত দর্শকদের বিনোদন দিতে পারব। এ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজনকে সমৃদ্ধ করবে বলে মনে করি। উৎসবে কিসের ভিত্তিতে নাট্যদলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে? চিত্তরঞ্জন দাস : সভ্যতার সঙ্কট আজ পরস্পর থেকে পরস্পরের বিচ্ছিন্নতা তথা নিঃসঙ্গতা। নিঃসঙ্গ মাতা চরিত্রে ফেরদৌসী মজুমদারের যে মহৎ রূপদান সেটাই অগ্রাধিকার এ উৎসবে। ফলে থিয়েটারকে পেয়ে আমরা ধন্য। পাশাপাশি দেশপ্রেম-শিক্ষা ও সাংস্কৃতির বার্তা বহনকারী নাটকই আমাদের কাম্য। উৎসব আয়োজনের প্রেরণা প্রসঙ্গে বলুন। লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস : প্রেরণার উৎস মূলে দেশপ্রেম এবং মানবতার জয়গান গাওয়ার তীব্র তাড়না। যারা নাট্য চর্চা করেন তারা চাইবেন অধিক মঞ্চায়ন এবং সেই সঙ্গে আর্থিক সম্মাননা। সরকার অবশ্যই পৃষ্ঠপোষকতা করছেন এবং করবেন কিন্তু আমরাও তো পারি বেসরকারীভাবে অধিক মঞ্চায়নের ক্ষেত্র নির্মাণ করতে। আমাদের আর্থিক সঙ্গতি কম থাকতে পারে কিন্তু আন্তরিক চেষ্টার কমতি নেই। এটি একটি কারণ। দ্বিতীয় কারণ, সর্বত্র বিনোদনের যে ঘাটটি তা কিছুটা হলেও নিবৃত্ত করার চেষ্টা। তৃতীয়ত, সমাজে আলো জ্বেলে আঁধারকে দূর করা। একটা নেতিবাচক সংবাদ অসুস্থতার মতো সংক্রান্ত হয়। কিন্তু সেখানে যদি সুস্থ ও সুন্দরের সংবাদ ক্ষেত্র তৈরি করা যায় তবে তা মানুষের মানুষিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। আমরা সবাই মনুষ্যত্বের জয়গানে সুর মেলাব এটাই আমার কর্ম সম্পাদনের প্রেরণা। উৎসবের আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন? চিত্তরঞ্জন দাস : হ্যা অবশ্যই ভাল। এবিষয়ে সবুজবাগ থানার গুণিজনদের নিয়ে একটি বিশেষ কমিটি করা হয়েছে। তাদের তত্বাধবধানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে। পাশাপাশি শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষাকারিবাহিনীর সদস্যরা সদ তৎপর রয়েছেন। তারা আমাদের যথাসাধ্য সহযোগিতা করছেন। আমি বলব যে উৎসব উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ঠ জোরদার রয়েছে। উৎসবের সমাপনী দিনে আপনার নির্দেশিত নাটকে কারা অভিনয় করছেন? চিত্তরঞ্জন দাস : আমার নির্দেশিত, অগ্নিবীণা প্রযোজিত ‘ঢাকার অসুখ-ডাক্তার চাই’ নাটকটি পুরান ঢাকার ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের নাটক। এখানে অনেক চলচ্চিত্র অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অভিনয় করবেন। তারা হলেন- মিজু আহমেদ, শিবা সানু, জ্যাকি, ববী, মেহেদী, সুজাতা, শুভ্রা, বনশ্রী, আলেকজান্ডার বোসহ আরও অনেকে। নাট্যানুরাগী দর্শকদের জন্য যদি কিছু বলেন। লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস : উৎসব উপলক্ষে দীঘিতে লাইটিং হবে, লোকজ মেলা বসবে, নাটক হবে ফলে সবাই আসবেন, প্রত্যেকের জন্য রয়েছে আপ্যায়নের ব্যবস্থা। দর্শকরা এলেই আমাদের উৎসব সার্থক ও সম্পূর্ণ হবে। তাই সবার প্রতি রইল নিমন্ত্রণ। -সাজু আহমেদ
×