ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্র রাজনীতি ও কিছু কথা -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ৬ অক্টোবর ২০১৬

ছাত্র রাজনীতি ও কিছু কথা -স্বদেশ রায়

ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কথাটি প্রথম তুলেছিলেন রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন। তিনি এ বক্তব্য দেয়ার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে তাঁর বক্তব্যকে বিরোধিতা করে একটি লেখা লিখি। বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের ইমেজ তখন ঈশ্বর সমতুল্য। তাই অনেকেই সে লেখা পছন্দ করেননি। শুধুমাত্র তৎকালীন আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারি আবদুল জলিল বেশ গভীর রাতে ফোন করে বললেন, তোমার লেখাটি ভাল হয়েছে। তুমি আরও শক্ত করে লিখতে পারতে। আমি হাসতে হাসতে বলি, ভাই এখন তো সময়টা শক্ত করে লেখার নয়, তার পরেও যতটুকু পেরেছি। ওনি তার পরে বললেন, এসব লোক- যারা কোনদিন দেশের জন্য কিছুই করেনি, তাদের আমরা সামনে নিয়ে মূলত আমাদেরও ক্ষতি করি, জাতিরও ক্ষতি করি। আওয়ামী লীগের তৎকালীন এই জেনারেল সেক্রেটারির লেখাপড়া ও অন্যান্য গুণ এ দেশের বা এ সময়ের অনেকেই জানেন না। যাহোক, তাঁর কাছ থেকে কথাটা শুনে রাতে ভাল লেগেছিল। কিন্তু পরদিন বেলা ১১টা কি ১২টা বাজতে সেই ভাল লাগা উবে যায়। আমার তৎকালীন সম্পাদক বেশ শশব্যস্ত অবস্থায় এসে আমার টেবিলের ওপর উঠে বসে বললেন, দেখ আমি বঙ্গভবন থেকে আসছি। সাহাবুদ্দীন সাহেব আমাকে ডেকেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই একটি জায়গাতে একজনই ভদ্রলোক আছেন। তুমি তাঁর সম্পর্কে আর কখনও কিছু লিখো না। বুঝলাম বঙ্গভবন থেকে আমার মাথায় খড়্গ নেমেছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, বঙ্গভবনের দাওয়াতের কার্ডের তালিকা থেকে আমার নামও কাটা যায়। বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতিবিরোধী শুধু বিচারপতি সাহাবুদ্দীন নন, বেশ বড় একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। তারা তখন সুবিধা পেয়েছিল আওয়ামী লীগের একজন রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে এ কথা বলাতে। যার ফলে তাদের অবস্থান শক্ত হয়। ক্রমেই তাদের অবস্থান শক্ত হচ্ছে। কারণ পরিচর্যাহীন ছাত্র রাজনীতি এমন দিকে যাচ্ছে যার ফলে একদিন গোটা দেশের মানুষ এটাকেই ছাত্র রাজনীতি মনে করে- ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সপক্ষে দাঁড়াবে। সত্যি কথা বলতে, ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন আছে কি না আছে এ নিয়ে এ মুহূর্তে কোন গণভোট হলে কোন্টা জিতবে তা বলা যায় না। অথচ এটা সত্য যে- দেশের সব সময়ের বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে অগ্রসর তরুণ শ্রেণীর জন্য একটি রাজনীতি দরকার। কারণ তরুণরা যে দায়িত্ব নিতে পারে অন্যরা সেটা পারে না। তাছাড়া ডাকসু, রাকসু, ইকসু, চাকসু- এগুলো না থাকায় আমাদের দেশে যে নেতৃত্বের কোয়ালিটি নেমে যাচ্ছে এ কথা সকলে স্বীকার করবেন। পাশাপাশি এটাও স্বীকার করবেন, যদি ঝিন্টু-পিন্টু মার্কা নেতৃত্ব ডাকসু বা রাকসুতে আসে তাহলে সেটাও ক্ষতিকারক। অন্যদিকে এখন ছাত্র রাজনীতি যেভাবে চলছে তাতে ভাল ছাত্ররা খুব বেশি ছাত্র রাজনীতিতে আসে না। তাই এভাবে চললে এক সময়ে এ দেশের বিরাজনীতিকরণের যারা প্রতিভূ সেই বিচারপতি সাহাবুদ্দীনসহ এক শ্রেণীর সুশীল সমাজ জয়ী হবে। আর একটি রাষ্ট্র যখন ধীরে ধীরে বিরাজনীতিকরণের দিকে চলে যায় তখন কিন্তু ওই রাষ্ট্র তার অস্তিত্ব নিয়ে হুমকির মুখে পড়ে। যেমন পড়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব কতটা সন্ত্রাসের ভেতর বিলীন হয়ে গেছে তা সাম্প্রতিক কাশ্মীরে তাদের অবস্থান দেখলে বোঝা যাচ্ছে। কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাঘাঁটিতে হামলা করছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত সন্ত্রাসীরা। এই সন্ত্রাসীরা পাকিস্তানের কোন বৈধ সংগঠনের সদস্য নয়। তার পরেও তাদের হামলার দায় নিচ্ছে পাকিস্তান সরকার। তাদের হয়ে কথা বলছে। এমনকি ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসছে। অর্থাৎ তারা স্বীকার করছে এই সন্ত্রাসীরা তাদের রাষ্ট্রের বৈধ সংগঠনের সদস্য। এর মূল কারণ কিন্তু পাকিস্তানের বিরাজনীতিকরণ। যার ফলে সেখানে সেনাবাহিনী, জঙ্গী এবং কিছু বিচারপতি শক্তিশালী হয়েছে। এই তিন সংগঠনের সদস্যরা মিলে দেশকে বিরাজনীতিকরণ করছে। পাকিস্তানের এই অবস্থা থেকে সকলের শিক্ষা নেয়া উচিত। এ শিক্ষা প্রথমে নিতে হবে ছাত্র সংগঠনকে। বাংলাদেশের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের বিপরীতে আছে জঙ্গী ছাত্র সংগঠন। জঙ্গী ছাত্র সংগঠনগুলো সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে দমন করাচ্ছে। সত্য হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এদের সাময়িক দমন করা যাবে কিন্তু চিরস্থায়ী বিলুপ্ত হবে না। জঙ্গী ছাত্র সংগঠনগুলো চিরস্থায়ী বিলুপ্ত করতে হলে এবং দেশের প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতিকে দাঁড় করাতে হলে বর্তমান ছাত্র রাজনীতিকে ভিন্নভাবে ভাবতে হবে। তাদের প্রথম ভাবনায় নিতে হবে কেন দেশের ভাল ছাত্ররা ছাত্ররাজনীতিতে আসছে না। পাশাপাশি চিন্তা করতে হবে, বর্তমানের এই পরিবর্তিত পৃথিবীতে, বাংলাদেশের পরিবর্তিত সময়ে ও মননে তাদের কী রাজনীতি করা উচিত? বাংলাদেশের কোন ছাত্র সংগঠনের এখন আর কোন কিছু নিয়েই রাজপথে আন্দোলন করার কোন প্রয়োজন নেই এবং মানুষ সেটা পছন্দ করে না। অন্যদিকে ছাত্র রাজনীতির নামে যখন যে সরকার আসবে তখন এক শ্রেণীর তরুণ এলাকা থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মা-বাপ হয়ে উঠবে এমনটি আর চলতে পারে না। এলাকায় কনস্ট্রাকশন করতে হলে ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের পয়সা দিতে হবে এই সব দুর্বৃত্তায়ন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বর্তমানের ছাত্র রাজনীতির প্রধান উদ্দেশ্য হতে পারে ভবিষ্যত নেতৃত্ব গড়া। আমাদের দেশে নেতৃত্ব বলতে শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বোঝা হয়। কিন্তু এই ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, সৈয়দ শামসুল হক, সাকিব আল হাসান থেকে শুরু করে বাংলাদেশের শাকিরা-তিশমা সকলেই বাংলাদেশের নেতা এবং এই সকল ক্ষেত্রে নেতা তৈরির কাজটি ছাত্র রাজনীতিকদের করতে হবে। প্রতি মুহূর্তে পৃথিবী যেখানে যাচ্ছে, ছাত্রদের তাদের দেশের তরুণ সমাজকে সেখানেই নিতে হবে। যেমন ছাত্র রাজনীতিক শেখ কামালই কিন্তু বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবল, ষাটের বা সত্তরের দশকের পপ গান এগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করেন। খেলায় আবাহনী এ দেশে প্রথম আধুনিকতা আনে। আবার সঙ্গীতে আজম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদকে তিনিই পেট্রোনাইজ করেন। অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের তরুণ সমাজকে উন্নত পৃথিবীর সমান তালে পা ফেলার তিনিই পৃষ্ঠপোষকতা করেন। আজকের ছাত্র সংগঠনগুলো এভাবে অনেক কাজ করতে পারে। যেমন দেশ এখন ভয়াবহভাবে সংস্কৃতির সঙ্কটে ভুগছে। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো এই সঙ্কট থেকে কিশোর ও তরুণদের বের করে আনতে পারে। প্রতিটি স্কুলে তারা সাংস্কৃতিক সংগঠন করতে পারে, সেখানে নিজস্ব উদ্যোগে আধুনিক ইনস্ট্রুমেন্ট যোগাড় করে বর্তমান বিশ্বের আধুনিক সংস্কৃতি ও বাঙালী সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে পারে। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি যদি ছাত্র সংগঠনগুলো সততার সঙ্গে, আন্তরিকতার সঙ্গে এ কাজ করে তাহলে বাংলাদেশে এ মুহূর্তে যে সংস্কৃতির সঙ্কট চলছে সেখান থেকে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে অবশ্যই বেরিয়ে আসবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ তৈরি করতে পারবে সাংস্কৃতিক অনেক নেতা। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি ছাত্রদের মনোজগত তৈরি করা দরকার। যে মনোজগতে বসে ছাত্ররা বিশাল স্বপ্ন দেখতে পারবে। আর একটি মানুষ যতক্ষণ না বড় স্বপ্ন দেখে ততক্ষণে সে বড় হওয়ার পথ পায় না। সত্য হলো আগে এক সময়ে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি ওই ধরনের বড় মাপের শিক্ষক ছিলেন তারা ছাত্রদের মনোজগত গড়ে দিতেন। এখন সে বাস্তবতা নেই। শিক্ষকরা কেন যেন সকলে সে দায়িত্ব পালন করছেন না। কেউ করছেন না এটা বলা ভুল হবে। তাই এখানে বিকল্প হিসেবে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে সারা বছর নানা আলোচনা সভা করতে পারে। সেখানে অতিথি হিসেবে নিতে পারে যারা মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পারে তাদেরকে। মানুষকে স্বপ্ন দেখানোর থেকে বড় কাজ খুবই কম আছে। আর একবার যদি কোন কিশোর বা তরুণ তার জীবনে স্বপ্ন দেখতে শেখে তাহলে তাকে কোন কিছুতেই আটকাতে পারে না। দারিদ্র্য, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা সব কিছু ভেঙ্গেচুরে সে এগিয়ে যায়। স্বপ্ন দেখতে জানাটাই কিন্তু মানুষের জীবনের সব থেকে বড় শক্তি, বড় অস্ত্র ও বড় সম্পদ। স্বপ্ন থেমে গেলে মানুষ সাধারণ হয়ে যায়, তার জীবন নিত্যদিনের চাকায় বাধা পড়ে যায়। অর্থাৎ থেমে যায় একটি জীবন। বিল গেটস, স্টিফেন জোবস থেকে শুরু করে গুগল সার্চ ইঞ্জিন আবিষ্কারক দুই তরুণ ছাত্র সবাই কিন্তু স্বাপ্নিক। এই স্বাপ্নিকরা বর্তমান পৃথিবীর একটি বিশেষ সেক্টরের নেতা। এদের জীবনকে, কাজকে তরুণের মাঝে, কিশোরের মাঝে, শিশুদের মাঝে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নিতে হবে বর্তমানের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে। টেকনোলজিও কিন্তু সংস্কৃতির অংশ। আধুনিক টেকনোলজি আর নান্দনিক জীবনের ভেতর বাস্তবে কোন পার্থক্য নেই। একে অপরের সঙ্গে জড়িত। উভয়েই মানুষের জীবন গঠনের সহায়ক- এগুলো কাজের ভেতর দিয়ে তুলে ধরতে হবে, বাস্তবায়িত করতে হবে ছাত্র সংগঠনগুলোকে। স্বাধীনতার পরে, এক ভাষার প্রতি জোর দিয়ে পৃথিবী থেকে অনেক বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি আমরা। বর্তমানের গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে এক ভাষার ওপর নির্ভর করা শুধু ভুল নয় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তাই প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো এখন মিছিল মিটিং করার জন্য তারা যে অর্থ ব্যয় করে ওই অর্থ ব্যয় করে ইংরেজীসহ আরও দু-একটি আধুনিক ভাষা শিক্ষার ট্রেনার নিয়ে স্কুলে স্কুলে তারা দুই তিন দিনের ট্রেনিং প্রোগ্রাম করতে পারে। এগুলো ছাত্রদের চোখ খুলে দেবে। শিক্ষার পথ খুলে দেবে। আর প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো যখন এ ধরনের কাজে হাত দেবে তখন দেখা যাবে, গার্ডিয়ানরাও আস্থা পাবে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপরে। তখন ভাল ভাল ছাত্ররাই আসবে ছাত্র সংগঠনে। তারা শুধু তখন শিক্ষায় ভাল হবে না নেতৃত্বেও ভাল হবে। কারণ শুধু ভাল ছাত্র ও ভাল রেজাল্ট নিয়ে কিন্তু কর্ম জীবনে ভাল অবস্থানে যাওয়া যায় না। নেতৃত্বের কোয়ালিটিও প্রয়োজন হয়। ভাল পড়াশোনা করে, দুই তিনটি ভাষার ওপর দখলের পাশাপাশি যখন মানুষকে নেতৃত্ব দেয়ার গুণ থাকবে একটি ছেলে বা মেয়ের তখন স্বাভাবিকভাবেই সে দেশের কোন না কোন ফ্রন্টের নেতা হবে। স্ব^াধীন দেশে শুধু যে রাজনীতি করেই দেশের ও জাতির নেতা হতে হবে এমনটি নয়। যেমন আমেরিকায় ওবামাও যেমন নেতা বিল গেটসও তেমনি নেতা। ভারতে মোদি যেমন নেতা, অর্মত্য সেন, লতা মঙ্গেশকর, শচীন টেন্ডুলকর, শাবনা আজমী, অমিতাভ ঘোষও তেমনি নেতা। বরং এরা কখনও কখনও মোদির থেকেও বড় নেতা। বাংলাদেশের তরুণদেরও তাই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর এমনকি আশির দশকের অনেকের দ্বারা এই দৃষ্টিভঙ্গি বদল সম্ভব নয়। আর সম্ভব নয় বলে আজ এ দেশে রাজনীতির নামে অশিক্ষিতরাও নেতা হয়ে যাচ্ছেন, তাদেরকে মিডিয়া তুলে ধরছে। এই ট্যাবু প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে তাদের কাজের ভেতর দিয়েই ভাঙতে হবে। বর্তমান সমাজ থেকে একটি বিষয় প্রায় বিদায় নিয়েছে বলা যায়, তা হলো বই পড়া। অথচ রিডার ইস দি লিডার। যে বই পড়ে সেই নেতা হয়। এমনকি নেতা থাকার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্টকেও সপ্তাহে কম পক্ষে একটি বই পড়তে হয়। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার আন্দোলন করতে হবে। তারা যেমন ভাষা শেখাবে তেমনি নানা ভাষার বই তরুণ-কিশোরদের পড়ানোর ব্যবস্থা বর্তমান ছাত্র সংগঠনগুলোকেই করতে হবে। তারাই দাবি জানাবে সরকারের কাছে সারা বিশ্বের বইয়ের দুয়ার খুলে দেয়ার জন্য। শুধু কম্পিউটার আমদানিতে ট্যাক্স তুললে হবে না সব ধরনের বই আমদানিতে ট্যাক্স তুলে দেয়ার আন্দোলন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে করতে হবে। পাশাপাশি দেশে যাতে উন্নত মানের বই বের হয়, যে কেউ যেন প্রকাশক হতে না পারে। প্রত্যেক প্রকাশকের যেন এডিটরিয়াল বোর্ড থাকে যাতে ছাত্ররা মানসম্পন্ন বই পায়। এ বিষয়গুলোই এখন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠকদের দেখার বিষয়। তারা যখন এসব কাজ করবে তখন তারা নিজেরাও জাতির লিডার হয়ে উঠবে, তাদের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব হবে, রাজনৈতিক দলের নেতাদের কৃপা প্রার্থী হতে হবে না। বাংলাদেশের বর্তমান ছাত্র রাজনীতির কাছে দেশের বাস্তবতা কিন্তু এ ধরনের কাজই আশা করে। আর এ ধরনের কাজগুলো করলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভেতর তাদের শক্তি এমনভাবে বেড়ে যাবে, তখন স্বাভাবিকভাবে শিক্ষাঙ্গন থেকে রগকাটা গোষ্ঠী বা হিযবুত তাহ্রীর পালাতে বাধ্য হবে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের যে কাজটি করতে হবে তা হলো প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনে অনেক বেশি সংখ্যক ছাত্রীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। কারণ শুধু পুরুষের ব্রেনের চিন্তা কিন্তু সব কাজ করতে পারে না। সম্প্রতি জাপানের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নেমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বড় বড় দায়িত্বে মেয়েদের কম সংখ্যক রাখা। তাঁরা তাঁদের ভুল শোধরাচ্ছে, আর আমাদের তো অনেক আগে নজরুল জানিয়ে গেছেন, ‘কোন কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারি...’। [email protected]
×