ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দারিদ্র্য বিমোচন

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ৬ অক্টোবর ২০১৬

দারিদ্র্য বিমোচন

বাংলাদেশে হতদরিদ্রের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগ আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় দারিদ্র্য বিমোচন ঘটছে দ্রুত। বিশ্বের সামনে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ যে এক অনুকরণীয় অবস্থানে পৌঁছেছে, তার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করেছে বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক। সংস্থা প্রধান জিম ইয়ং কিম উচ্চারণ করতেও পেরেছেন যে, বিশ্বের অন্য উন্নয়নশীল দেশের উচিত কিভাবে দারিদ্র্য দূর করতে হয়, তা বাংলাদেশের কাছ থেকে শেখা। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশটি অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের কাছে অনুকরণীয় হতে পারে। বাংলাদেশের এই ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ জাতিসংঘকেও বিস্মিত করেছে। তাই সংস্থাটি আগামী ১৭ অক্টোবরের বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবসটি বাংলাদেশে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওইদিন বাংলাদেশের সাফল্যের গাথা তুলে ধরা হবে বিশ্বমানবের সমীপে। আর তা তুলে ধরবেন সাফল্যের ধারক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বে এখন হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৭৭ কোটি, যাদের দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯০ ডলারের কম। তাদের মধ্যে ৫১ শতাংশ বা ৩৯ কোটির বাস সাব-সাহারা অঞ্চলে। আর ৩৪ শতাংশের বসবাস দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। ঠিক এর বিপরীত অবস্থানে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী ভারত। পাকিস্তান ও ভুটানের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ। ২০০৫ সালেও দেশে যেখানে হতদরিদ্রের হার ছিল ৪৩ শতাংশ, দশ বছরের ব্যবধানে তা কমে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্বের খুব কম দেশই এমন সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। তাই বাংলাদেশ আজ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দারিদ্র্য এখন আর কবির ভাষার মতো মহীয়ান করে তোলে না। সমাজে দারিদ্র্য সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত। বাংলাদেশের সমাজে এর মূল অনেক গভীরে। দারিদ্র্যে ভুক্তভোগীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সিদ্ধান্তহীনতা বেকারত্ব ইত্যাদিতে ভুগে থাকেন। এই দারিদ্র্য বিমোচনে শেখ হাসিনা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কৃষি ও শিল্প খাতে বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাড়ানো, সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন, সামাজিক বিভেদ হ্রাস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির কাজটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিচ্ছেন। তাই দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও সূচিত হয়েছে। বিশ্বের বহু দেশের চেয়ে নিম্ন আয় সত্ত্বেও বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসে বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। ষোলো কোটি বাংলাদেশী জনগণের মধ্যে এখন মাত্র ১২ দশমিক ৯ শতাংশ তথা দুই কোটি আশি লাখ এখন হতদরিদ্র। ২০০৫ সালে এ হার ছিল ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক জনগণই ছিল হতদরিদ্র। বাংলাদেশ এখন হতদরিদ্র তারাই যাদের দৈনিক আয় ১৪৮ টাকার কম। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৮ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার কথা ছিল। কিন্তু চার বছর আগেই ২০১৬ সালে তা ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ এখন যে হারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ হতদরিদ্রের হার তিন শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে। জিডিপির হার বেড়ে গেলে এই অবস্থান আরও কমবে। এটা ঠিক যে, একটি দেশের অর্থনীতি কিভাবে বাড়ছে। এর ওপর দারিদ্র্য হার কমার বিষয়টি নির্ভর করে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি যদি অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়, গরিব মানুষ এর সুফল বেশি পায়, তাহলে দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাস পায়। হতদরিদ্র লোকের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের একটি হলো বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার সরকার অসাধ্য সাধন করার কাজটি সুচারুরূপে পালন করায় দারিদ্র্য মুক্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য হ্রাসের এই ধারাবাহিকতাকে এগিয়ে নিতে ষোলো কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। সচ্ছল বাঙালীর জীবনধারায় প্রবাহিত হবে বাংলাদেশ সেই প্রত্যাশা চিরায়ত।
×