ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘ব্যাঙের তেল’ বিবাদে উত্তর কোরিয়া-চীন!

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৫ অক্টোবর ২০১৬

‘ব্যাঙের তেল’ বিবাদে উত্তর কোরিয়া-চীন!

চীনের উত্তর-পূর্বাংশের শহর ডানডাংয়ের বিপণি কেন্দ্রগুলোর তাকে সারি সারি ছোট বোতলে শোভা পেত ‘ব্যাঙের তেল’। একটি ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ পণ্য, যা প্রস্তুত হয় নারী ব্যাঙের ডিম্বথলি থেকে। একজন চাইনিজ দোকানির ভাষায় এটি রক্ত সঞ্চালনের জন্য খুবই কার্যকরী। বর্তমানে তিনি সরবরাহ সঙ্কটে ভুগছেন- ব্যাঙগুলো সংগৃহীত হতো উত্তর কোরিয়া থেকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতি এই সরবরাহের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা আমার ব্যবসায় কঠিন আঘাত হেনেছে।’ উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ও ভীতিকে সরকারের ভুল দাবি করে তিনি বলেন, ‘আগে আমি খুব সহজেই ৫০ কেজি ব্যাঙের তেল সংগ্রহে সমর্থ হলেও বর্তমানে এই পরিমাণ নেমে এসেছে ৫ কেজিতে।’ চীন ও উত্তর কোরিয়ার সীমান্তের বেশিরভাগ জুড়েই আছে ইয়েলো নদী। উত্তর কোরিয়া নামক বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রটির সবচেয়ে কাছের শহর ডানডং। ২৫ মিলিয়ন জনঅধ্যুষিত শহরটি উত্তর কোরিয়ায় প্রস্তুত বিভিন্ন নিষিদ্ধ সামগ্রীর প্রাপ্তিস্থান হিসেবে বিখ্যাত যেমন ব্লুবেরি লিকার, ‘৭.২৭’ ব্র্যান্ডের সিগারেট চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহৃত সামুদ্রিক শসা অথবা ব্যাঙের তেল- যার প্রতি কেজি বিক্রি হতো ৪৫০ ডলারে। কিন্তু পিয়ংইয়ংয়ের চতুর্থ পারমাণবিক পরীক্ষার পর গত মার্চে চীন যখন জাতিসংঘের উত্তর কোরিয়াবিরোধী কঠোর নিষেধাজ্ঞায় সম্মতি প্রদান করে তারপর থেকে ব্যবসায়িক চিত্রটি পাল্টে গেছে। ইয়েলো নদীর উপরস্থ লোহার সেতুটি অতিক্রম করে ডানডংয়ে আসা ট্রাকের সারি ক্রমশ কমে আসছে। এটি কেবল চাইনিজ নিষিদ্ধ পণ্যের ব্যবসায়ীদেরই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি সেই সঙ্গে উত্তর কোরীয় স্বৈরশাসক কিম জং উনের জন্যও আঘাত হয়ে উঠেছে। উত্তর কোরিয়ার বিদেশ বাণিজ্যের ৯০% চীনকেন্দ্রিক। যে পণ্য সরবরাহের মূল কেন্দ্র ডানডং ‘উত্তর কোরিয়া এখনও প্রচুর পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে আগ্রহী হলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়ার কোম্পানিগুলোর অর্থ সরবরাহ সীমিত হয়ে পড়েছে। সে অর্থে তাদের ক্রয় ক্ষমতা এখন দুর্বল এ কথা বলাই যায়, ‘বললেন এক চীনা ব্যবসায়ী।’ এর বাইরে উত্তর কোরিয়ার বহির্বিশ্বে বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্ট, কলকারখানা অথবা মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার শ্রমিকের বেশিরভাগই কর্মরত চীনে। এই শ্রমিকদের মজুরি বৈদেশিক মুদ্রা হয়ে বিছিন্ন রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। কেবল ডানডং শহরেই কর্মরত দুই শতাধিক। পিয়ংইয়ংয়ের সাম্প্রতিক তৎপরতার প্রতিবাদ হিসেবে চীন নিজ দেশে কর্মরত উত্তর কোরীয় শ্রমিকদের ফেরত পাঠাতে পারে। যা হবে উত্তর কোরীয় অর্থনীতির বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহে একটি বড় আঘাত। সিউলভিত্তিক তথ্যকেন্দ্র ‘সেন্টার ফর নর্থ কোরিয়ান সেন্টার’ এর তথ্য থেকে জানা যায় এই মুদ্রার পরিমাণ ৩০০ মিলিয়ন ডলার। স্বৈরশাসক কিম বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে আস্ফালন করেই যাচ্ছেন, কোন হুমকিই আবেদন নিবেদন তাকে বিরত করতে পারছে না পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা থেকে, নিজ রাষ্ট্রকে পৃথিবী বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপে পরিণত করেছেন। তার কার্যক্রম সারাবিশ্বের মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীনের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে আর এর ফলে চীনা ক্রেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের প্রিয় ‘ব্যাঙের তেল’ থেকে।
×