ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাশ্মীর কেন অশান্ত

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৫ অক্টোবর ২০১৬

কাশ্মীর কেন অশান্ত

কাশ্মীর শেষ বারের মতো বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল ২০১০ সালে। তখন তিন মাস ধরে টালমাটাল ছিল উপত্যকা। নিহত হয়েছিল ১২০ জন। কেউ কেউ বলছে কাশ্মীরে এখন যা চলছে তা দ্বিতীয় ইন্তিফাদা। কাশ্মীরে ১৯৮৯-৯১ এর বিক্ষোভ ছিল প্রথম ইন্তিফাদা। তখন বেশকিছু বিষয় একত্রে কাজ করেছিল-আফগানিস্তানে জিহাদী ভাবধারার উত্থান, পাকিস্তানের যুদ্ধংদেহী ভাব, ভারতের দুর্বল কেন্দ্র সরকার এবং কাশ্মীরের গণনিন্দিত রাজ্য সরকার- সবকিছু মিলে উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। সে সময় সশস্ত্র বাহিনীকে অভ্যুত্থান দমনে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেয়া হয়। পরিণতিতে জন্ম হয় অল পার্টিস হুরিশত কনফারেন্স যা ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সম্মিলিত বাইরের রাজনৈতিক চেহারা। তবে ১৯৯০ এর দশকের আন্দোলন বিচ্ছিন্নতাকামী জাতীয় আন্দোলন হলেও আজকের গোলাযোগের উৎপত্তি অনেকটা ভিন্ন। আজকের সংঘাত অনেকটা নৈরাজ্যিক। বেশ কিছু ঐতিহাসিক ভুলভ্রান্তি থেকে এর উৎপত্তি। রক্তাক্ত অতীত, অনুপ্রেরণহীন বর্তমান ও অনিশ্চিত ভবিষ্যত- সবকিছু মিলেই আজকের কাশ্মীর পরিস্থিতি আরও নাজুক ও অগ্নিগর্ভ করে তুলেছে। অবশ্য আজকের সঙ্কটের আশু কিছু কারণ আছে যার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্র উভয় সরকার দায়ী। বলা হয় যে বিজেপির সঙ্গে পিডিপির জোটকে কেন্দ্র করে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকে এর উৎপত্তি। কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মুফতি সাইদ মারা যাবার পর তিন মাস দ্বিধাদ্বন্দ্বে থেকে তার কন্যা মেহবুবা মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরও তিন মাস যেতে না যেতেই ঘটে ওয়ানির হত্যাকা-। বিজেপির সঙ্গে পিডিপির জোট নিয়ে মেহবুবার আপত্তি ছিল। তাছাড়া জোট সরকার যেভাবে চলছিল তাতে মোটেও খুশি ছিলেন না মেহবুবা। জোটের দুই শরিকের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে জোর টানপোড়েন চলতে থাকে। এদিকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কও তিক্ত হতে শুরু করে। পিডিপি-বিজেপি জোটের লেজেগোবরে অবস্থা দেখে পাকিস্তান কাশ্মীরে তার এ্যাসেটদের সক্রিয় করে তুলতে থাকে। হিমালয়ের বরফ গলে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ রেখায় অনুপ্রবেশ বেড়ে যায়। মে মাস থেকে এই অনুপ্রবেশ দ্বিগুণ আকার ধারনা করে। এমনও খবর পাওয়া যায় যে ইসলামাবাদ থেকে কাশ্মীর উপত্যকায় পাকিস্তানী সমর্থকদের কাছে অবাধে অর্থ আসতে থাকে। প্রায় একই সঙ্গে হুরিয়াত ও মেহবুবা সরকারের পতন ঘটাতে আন্দোলন জোরদার করে তোলে। মেহবুবা দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই সরকার প-িত ও সৈনিক কলোনি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। ১৯৮৯-৯১ সালের বিক্ষোভের সময় বিতাড়িত কাশ্মীরী হিন্দুদের পুনর্বাসনের জন্য প-িত কলোনি এবং সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লোকদের জন্য সৈনিক কলোনি গড়ে তোলাই এর উদ্দেশ্য। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জোর দিয়ে বলছে আসল উদ্দেশ্য হলো ইসরাইলী ধরনের বসতি স্থাপন। যার মাধ্যমে সরকার কাশ্মীরের জনসংখ্যাগত বৈশিষ্ট্য বদলে দিতে চায়। হুরিয়াত প্রধান সৈয়দ আলী শাহ গিলানী হুঁশিয়ার করে দেন যে জনগণকে এই ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে। চাপের মুখে মেহবুবা এই পরিকল্পনা স্থগিত রাখেন। একই কারণে নতুন শিল্প নীতিও স্থগিত রাখা হয়। ওই নীতিতে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে কাশ্মীরের বাইরের শিল্পপতিদের জমি ইজারা দেয়ার ব্যবস্থা ছিল। হুরিয়াতের অভিযোগ ছিল যে এরও উদ্দেশ্য বাইরে থেকে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক এনে কাশ্মীরের জনসংখ্যার চরিত্র পাল্টানো। জুন মাস থেকেই নিরাপত্তা বাহিনী হুঁশিয়ারি দিচ্ছিল যে কাশ্মীর উপত্যকার পরিস্থিতি ধূমায়িত হচ্ছে এবং যে কোন সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। তারা নতুন ধারার স্থানীয় লোকজনের সমাবেশও লক্ষ্য করে। এ অবস্থায় শুরু হয় জঙ্গী ধরার অভিযান এবং তাতে এনকাউন্টারে নিহত হয় ওয়ানি। কাশ্মীরে এবার সত্যি সত্যি বিস্ফোরণ ঘটে। ওয়ানির মৃত্যু যে কাশ্মীরীদের কতটা আলোড়িত করেছিল তার জানাজায় দুই লাখ লোকের সমাবেশ তারই প্রমাণ। গোলযোগের আশঙ্কায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়াকড়ি করা হয়। তবে বিক্ষোভের আকার, বিস্তার ও টার্গেট সম্পর্কে কারোর কোন ধারণা ছিল না। বেশিরভাগ বিক্ষোভ হয় দক্ষিণ কাশ্মীরে যা কি না পিডিপির দুর্গ। বড় বড় শহরের পরিবর্তে বিক্ষুব্ধ জনতা ছোট ছোট বসতি এলাকায় এবং ভালুক পর্যায়ে আক্রমণ করতে শুরু করে। তারা ৫০টি পুলিশ চৌকি ও মহকুমা আদালত জ্বালিয়ে দেয়। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হলো যে ১৪ থেকে ২০ বছরের ছেলেমেয়েরাও বিপুল সংখ্যায় শেষে আসে এবং ইট-পাটকেল নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বিক্ষোভের উদ্যোক্তা ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এবং এদের পেছনে পাকিস্তানের ইন্ধন ছিল। যাই হোক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপত্যকাজুড়ে যে কার্ফু দেয়া হয়েছিল তা তুলে নিতে ৫০ দিন সময় লেগে গেছে। তার পরও ছোটখাটো নিক্ষিপ্ত সহিংসতা চলছিল। এর মধ্যে নতুন করে শুরু হয়েছে জঙ্গী হামলা এবং এতে পাকিস্তানী মদদ থাকার অভিযোগ নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা। চলমান ডেস্ক সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে
×