ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

হিলারির মিডিয়া স্ট্র্যাটেজি

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৫ অক্টোবর ২০১৬

হিলারির মিডিয়া স্ট্র্যাটেজি

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নতুন এক দফা ইমেইল প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে দেখা যায় যে, হিলারি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সে সময় ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা একজন বড়সড় মাপের ডোনার বাগানোর জন্য পররাষ্ট্র দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন। অভিযোগ উঠেছিল যে হিলারি ওই ফাউন্ডেশনের পক্ষে প্রভাব খাটিয়েছিলেন। কিন্তু হিলারি অকপটে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন তিনি এ ব্যাপারে কোন সাহায্য করেননি। ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ (সিজিআই) হলো সেই ফাউন্ডেশনের নাম। হিলারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশী সরকারগুলোও বিভিন্ন কর্পোরেশনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা বাগিয়ে নেয় বলে অভিযোগ আছে। ইস্যুটা হিলারির জন্য রীতিমতো একটা কাঁটা বিশেষ। তথাপি হিলারি দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি এ ব্যাপারে কাউকে কোন প্রশ্রয় দেননি। সাংবাদিকদের কাছে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে হিলারী যেমন সতর্ক থেকেছেন বেফাঁস মন্তব্য করা থেকে তেমনি আবার পরিস্থিতির ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণও রেখেছেন। তাঁকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিল একটাকি সত্য যে তিনি এলার্ম ক্লক ব্যবহার করেন না? জবাবে হিলারী বলেন, না- কথাটা ঠিক নয়। ওটা হলো আরেক গুজব। এলার্ম ক্লক আমি ব্যবহার করি। তবে সাধারণত ওটা রেঞ্জে ওঠার আগেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সেই লম্বা তালিকার কোথাও অবশ্য মার্ক করা নেই ‘ফেস দ্য প্রেস’ কিংবা ‘আনসার হার্ড কোয়েশ্চেনস। ডেমোক্র্যাট দলীয় এই প্রার্থী পুরনো ধারায় সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন আড়াই শ’ দিনেরও বেশি আগে। তখন থেকে তিনি একক সাক্ষাতকারই বেছে নেন। এতে নিজেকে তৈরি করার প্রচুর সময় তিনি পেয়ে যান। হিলারি বলেছেন তিনি সাংবাদিক নন এবং নিরপেক্ষও নন। কেউ তাঁকে চেঁচিয়ে প্রশ্ন করলে সেটাকে উপেক্ষা করার এক বিচিত্র কৌশলও তিনি করায়ত্ত করেছেন। বিপোর্টাররা ছেঁকে ধরলে তিনি এমন এক প্রশান্ত হাসি দিয়ে তাদের পাশ কাটিয়ে যান যেন এক পুরু কাঁচ ও গভীর জলরাশি তাঁকে যেন রক্ষাকবচ যোগাচ্ছে। সাংবাদিকদের এমন মুখোমুখি হওয়া প্রায়শই ঘটেছিল তাঁর তহবিল সংগ্রহ অভিযানের সময়। সেই অভিযান বলাই বাহুল্য তার দিনরাত্রির বেশিরভাগ সময় কেড়ে নিয়েছিল। গত ১৫ আগস্ট হিলারী পেনসিলভানিয়ার স্ক্রানটনে ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইদেনের সঙ্গে তার শৈশবের বাড়িতে নির্বাচনী প্রচারণামূলক ছবি তোলেন। এ সময় এক রিপোর্টার গ্লাসের ওয়ালের কাছে এসে ট্রাম্প প্রসঙ্গে তাঁকে প্রশ্ন করেন। হিলারী গ্লাসের কাছে এসে রিপোর্টারের প্রশ্নটি অগ্রাহ্য করে তাকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার চেয়ে বেশি স্ক্রানটনকে কেউ ভালবাসবে না। ‘হিলারী এই নির্বাচনী প্রচারে যেসব স্ট্র্যাটেজি নিয়েছেন তার একটি হচ্ছে সাংবাদিকদের এভাবে ফাঁকি দিয়ে যাওয়া। এর মধ্যে হয়ত ভ-ামিমূলক একটা সঙ্কল্প আছে। তবে এর উদ্দেশ্য নিজের অযথা কোন ক্ষতি হতে না দেয়া। ভুলভ্রান্তি পরিহারকে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন। ট্রাম্পের মতো এত আত্মবিধ্বংসী ব্যক্তিত্ব তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় হিলারী ট্রাম্পের ওপর পাদ প্রদীপের আলো সরিয়ে নেয়ার কোন সুযোগ মিডিয়াকে দিতে একেবারেই রাজি নন। হোঁচট খাওয়ার ঝুঁকি নেয়ার চাইতে বরং নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখে চলাই অধিক বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন তিনি। তার এই স্ট্র্যাটেজি কাজে দিয়েছে এমন মনে করার সঙ্গত কারণ আছে। জনমত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে থাকাই তার প্রমাণ। হিলারী মুখপাত্র নিক মেরিল বলেন, আমরা এটাকে সাবধানী পদক্ষেপ বলে ভাবি না বরং শৃঙ্খলা বলে মনে করি।’ ক্লিনটন ফাউন্ডেশন ‘সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো জবাব তাই তাঁর নির্বাচনী প্রচার টিমের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমেই দেয়া হয়। হিলারী নিজে সরাসরি কিছু বলেন না। তিনি শুধু হ্যাসূচক সাড়া দেন। মেরিল বলেন, এমনটি তিনি করেছেন ২০১৬ সালে এ পর্যন্ত স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে চার শ’ বেশি সাক্ষাতকারে ইমেইল ও ফাউন্ডেশন নিয়ে বিতর্ক নতুন করে শুরু হওয়ার সময়ই হিলারী এই স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিলেন- স্রেফ ও গুলো উপেক্ষা কর। সাবধানতা অবলম্বন করতে গিয়েই তিনি সেটা করেছিলেন। হিলারীর সাবধানী হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। স্বামী ক্লিনটনের মতো তার সেই ক্যারিশমাও নেই, মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিত্ব নেই। তাই ভুল করলে তার কোন ক্ষমা নেই। সে জন্য এমন মনে করার কারণ নেই যে হিলারী শীঘ্রই কোন রিপোর্টারের কাছে মুখ খুলবেন। তার পরও তার মুখে যদি এ ধরনের কোন বক্তব্য শোনা যায় সেটাকে তামাশা ছাড়া আর কিছু মনে হবে না। সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক সম্মেলনে তিনি এক বিবৃতিতে বলেছিলেন : ‘নেতা ও প্রার্থীদের দায়বদ্ধ রাখার জন্য আমাদের এখন আপনাদের আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন। সূত্র : টাইম
×