ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোকসানা বেগম

ইংলিশ পরীক্ষার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৫ অক্টোবর ২০১৬

ইংলিশ পরীক্ষার প্রস্তুতি

এক বছর আগে থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অন্যরকম দল হয়ে ওঠে। গতবছরটি দুর্দান্তভাবে কাটিয়েছে বাংলাদেশ। একের পর এক সিরিজ জিতেছে। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে সিরিজে হারিয়েছে। কিন্তু এ বছর শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন ওয়ানডেই খেলেনি মাশরাফিরা। কেন? এশিয়া কাপ টি২০ ও টি২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি যে নিতে হবে। সেই প্রস্তুতি নিতে গিয়ে আর স্বল্প ওভারের টুর্নামেন্টগুলো খেলতে গিয়ে ওয়ানডে থেকে বহু দূরে চলে যায় বাংলাদেশ। আবার বছরের নবম মাসে গিয়ে সেই ওয়ানডে ফরমেটে খেলা শুরু করেছে। শুরুতেই সামনে পেয়েছে আফগানিস্তানকে। সিরিজও জিতে নিয়েছে। তবে যত সহজভাবে সিরিজে জেতা যাবে ভাবা হয়েছে, তা একেবারেই হয়নি। আফগানদের বিপক্ষেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশ। এবার সামনে আরও কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। যে দলটি সম্প্রতি পাকিস্তানকে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজে হারিয়েই বাংলাদেশে খেলতে এসেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরীক্ষা শেষ। সেই পরীক্ষা ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হেরে যে সিরিজ হারের সম্ভাবনাতেই পড়ে গিয়েছিল, সেটি লজ্জারই। মাঝখানে আর মাত্র একদিন বাকি। আফগানদের বিপক্ষে কি ঘটেছে তা নিয়ে ভেবে আর লাভ নেই। এখন ইংলিশদের নিয়েই ভাবতে হচ্ছে। শুক্রবার থেকেই যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামতে হবে। ৭ অক্টোবর প্রথম ওয়ানডে দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে। এরপর ৯ অক্টোবর দ্বিতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। ১২ অক্টোবর হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে। প্রথম দুই ওয়ানডে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হবে। তৃতীয় ওয়ানডেটি হবে চট্টগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। ওয়ানডে সিরিজ শেষে ২০ অক্টোবর চট্টগ্রামেই প্রথম টেস্ট শুরু হবে। ২৮ অক্টোবর শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। ওয়ানডে ম্যাচগুলো দিবা-রাত্রিতে দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে। গতবছর পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে সিরিজে হারানোয় এখন ভক্ত-সমর্থক-ক্রিকেটপ্রেমী এবং সর্বোপরি দেশের সাধারণ মানুষেরও বাংলাদেশ দলকে নিয়ে অনেক আশা তৈরি হয়ে গেছে। যে কোন দলকেই যে সিরিজে হারাতে পারে বাংলাদেশ, সেই বিশ্বাস জন্মে গেছে। স্বপ্নে সিরিজ জয় ছাড়া আর যেন কিছুই নেই। আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেহেতু খেলা। সিরিজ জয়ের স্বপ্নতো আরও বেশি করে আছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও যে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১০ সালের পর, সাড়ে ৬ বছর পর আবার বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে এসেছে ইংল্যান্ড। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেললেও, সিরিজ খেলা হয়নি। এ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনবার দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। প্রতিবারই সিরিজে হারে। ২০০৩ সালে একবার ও ২০১০ সালে দুইবার দুইদলের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজ হয়। প্রথম দুইবার বাংলাদেশে হওয়া সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। আর ২০১০ সালের জুলাইয়ে শেষ সিরিজটি হয় ইংল্যান্ডের মাটিতে। সেই সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ের আশাই তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এরপরতো ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পায়নি ইংল্যান্ড। সর্বশেষ বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ২ উইকেটে হারের পর ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচেও ১৫ রানে ধরাশায়ী হয় ইংল্যান্ড। দুইদলের মধ্যকার ২০১১ সালের আগে ১৪টি ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ইংল্যান্ড ১৩টি ম্যাচেই জিতেছিল। বাংলাদেশ জিতেছিল ১টি ম্যাচ। এরপর ২০১১ সালের পর সর্বশেষ টানা দুই ওয়ানডে ম্যাচেই জিতে বাংলাদেশ। ৭ অক্টোবর যখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ, তখন সর্বশেষ দুই ওয়ানডেতে জেতার আত্মবিশ্বাসতো থাকবেই। সেই সঙ্গে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে যে ২০১৫ সালের বাংলাদেশকেই মিলেছে, সেটিও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে মাশরাফিদের উজ্জীবিতই করে রাখছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে আর টেস্টই আছে। নেই কোন টি২০ ম্যাচ। তবে টেস্টে বাংলাদেশ যাই করুক, সেটা নিয়ে বিশাল কোন ভাবনা নেই। সেটার চেয়ে সবার ভেতর, ওয়ানডেতে বাংলাদেশ কি করবে, সেটি নিয়েই ভাবনা আছে। টেস্টে এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। দুইদলের মধ্যকার চারটি টেস্ট সিরিজে দুটি করে ৮টি ম্যাচ হয়। প্রতিটি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। এরমধ্যে দেশের মাটিতে ২০০৩ ও ২০১০ সালে এবং ইংল্যান্ডের মাটিতে ২০০৫ ও ২০১০ সালে সিরিজ খেলে হারে। প্রতিটি ম্যাচেই আবার ‘গো-হারা’ হারে বাংলাদেশ। ইনিংস ব্যবধানে তিনটি হারতো আছেই। সঙ্গে ১৮০ রান কিংবা ৭ উইকেটের নিচে ব্যবধানে কোন হার নেই। তবে এখন বাংলাদেশ দল অনেক পরিণত। টেস্টেও ভাল দল হয়ে উঠেছে। সেইদিকে অবশ্য এ মুহূর্তে সবার মনোযোগ কমই। ২০১৫ সালে ওয়ানডেতে টানা জিম্বাবুইয়ে, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার পর আবার জিম্বাবুইয়েকে সিরিজে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেই ধারাবাহিকতা ২০১৬ সালের প্রথম ওয়ানডে সিরিজে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও বজায় রেখেছে। এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরীক্ষায় নামার পালা। আফগানদের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতে টালমাটাল অবস্থায় থাকলেও তৃতীয় ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মাশরাফিরা। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ইংল্যান্ডতো সিরিজে হারতে পারে। সেইসঙ্গে সর্বশেষ টানা দুই ওয়ানডে ম্যাচেই যে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ, সেই জয়গুলো থেকে প্রেরণাওতো মিলবে। সেই প্রেরণা নিয়েই এখন সিরিজ জয় এবং ইংল্যান্ড বধের মিশনে নামবে বাংলাদেশ। সেই মিশন সামনে অপেক্ষা করছে। এ সিরিজে খেলতে নামার আগে বাংলাদেশের প্রস্তুতিটাও দারুণ হয়েছে। ১০ মাস ওয়ানডে না খেলায় যে অনভ্যস্ততা এসে গিয়েছিল, আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে তা দূর হয়েছে। জড়তা কেটেছে। ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নেয়া গেছে। সেই গতবছর নবেম্বরের পর ওয়ানডে খেলতে নেমে আফগানদের বিপক্ষে প্রথম দুটি ওয়ানডেতে ভুগেছে। ব্যাটসম্যানরা সঠিক কাজগুলো করতে পারেননি। আর তাই প্রথম ওয়ানডেতে কোনরকমে ৭ রানে জিতলেও, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। লজ্জা মিলেছে। তবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতেই আবার জয় মিলেছে। ১৪১ রানের জয়টি আবার দুইদলের মধ্যে পার্থক্যও যেন বুঝিয়ে দিয়েছে। প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলে জিতেছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত স্বস্তিও মিলেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হওয়ার আগে আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ হওয়াটা বাংলাদেশ দলের জন্য উপকার হয়েছে। ১০ মাস ধরে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেনি বাংলাদেশ। ক্রিকেটারদের মধ্যে জড়তা ভর করেছিল। তা কেটেছে। যদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই বছরের প্রথম ওয়ানডে সিরিজটি হত, তাহলে ইংলিশরা জেঁকে বসত। তারাতো আর আফগানিস্তানের মতো অনভিজ্ঞ দল নয় যে বাংলাদেশ বাজে খেলার পরও অভিজ্ঞতার কাছে হেরে যাবে। এখন আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ জেতায় যে আত্মবিশ্বাস মিলেছে, তা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে কাজে লাগানো যাবে। দীর্ঘ সময় ধরে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেনি বাংলাদেশ। দলের কম্বিনেশন নিয়েও তাই সমস্যা হয়েছে। সেই সমস্যা এখন দূর হয়ে গেছে। তিন ওয়ানডেতে অনেক ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা’র পর বাংলাদেশ দল কম্বিনেশনও সেট করে ফেলেছে। ভুলগুলোও শুধরে নেয়া গেছে। আফগানদের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে সাব্বির রহমান রুম্মনকে তিন নম্বরে নামিয়ে ঝালাই করা হয়েছে। সাফল্যও মিলেছে। সাব্বির ৬৫ রান করার সঙ্গে ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গে ১৪০ রানের বড় জুটিও গড়েছেন। এটি বাংলাদেশ দলের জন্য অনেক স্বস্তির হয়েছে। স্পিনার মোশাররফ হোসেন রুবেলকে সাড়ে আট বছর পর জাতীয় দলে খেলার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। মোশাররফ বাজিমাতও করেন। ৩ উইকেট নেন। একজন ভাল স্পিনারও পাওয়া গেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ না হয়ে যদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হত, তাহলে হয়ত কম্বিনেশন ঝামেলার সুযোগ নিয়েই ইংল্যান্ড সিরিজ নিজেদের কবজায় করে নিত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটি সহজ হয়নি। কঠিনই হয়েছে। তাতে করে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যেও একটা বোধোদয় হবে। আফগানদের বিপক্ষেই এতটা কঠিনভাবে সিরিজ জিততে হয়েছে, তাহলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেতো আরও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়া হতে পারে। আর এই ভেবে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররাও সাবধান হয়ে যাবে। আরও দায়িত্ববান হয়ে উঠবে। হেলা ভাবও দূর হয়ে যাবে। আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ না হয়ে যদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সরাসরি সিরিজ হত; তাহলে এই হেলা ভাব কাটতে কাটতেই হয়ত বিপত্তি ঘাড়ে চেপে বসত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটি তাই সবদিক দিয়ে বাংলাদেশের জন্য ভাল কিছুই বয়ে এনেছে। এখন সামনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের মিশনই অপেক্ষা করছে। যে সিরিজে খেলতে এরই মধ্যে ঢাকায় এসে রবিবার থেকে অনুশীলনও করছে তারা। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার মিশন শুরু করে দিয়েছে। বাংলাদেশ দলতো সেই প্রস্তুতি আফগানদের বিপক্ষে সিরিজেই সেরে নিয়েছে। এরপরও বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের সাবধান থাকতে হবে। আরও দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। তাদের সামনে যে কঠিন পরীক্ষা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে যে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখিই হতে হবে।
×