ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টাইগারদের ভোগাতে পারে ইংলিশ স্পিন

এবার বাংলাদেশের সামনে আতঙ্ক মঈন-রশিদ!

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৫ অক্টোবর ২০১৬

এবার বাংলাদেশের সামনে আতঙ্ক মঈন-রশিদ!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এক রশিদের ভোগান্তি শেষ হতেই আরেক রশিদ হাজির! আফগানিস্তানের রশিদ খানের গুগলিতেই টালমাটাল হয়েছে বাংলাদেশ। সেই অবস্থার ইতি ঘটতেই ইংল্যান্ডের লেগ স্পিনার আদিল রশিদের আগমন। লেগ স্পিনে যে বাংলাদেশ কতটা আতঙ্কগ্রস্ত তা আফগান লেগ স্পিনার রশিদই বুঝিয়ে দিয়েছেন। তার অধ্যায় শেষ হতেই এবার বাংলাদেশের সামনে আরেক লেগ স্পিনার ইংল্যান্ডের রশিদ আতঙ্ক শুরু। এবারতো রশিদের সঙ্গে আরেক আতঙ্কও আছে। তিনি অফ স্পিনার মঈন আলী। যদিও দুইজনই প্রস্তুতি ম্যাচে কিছুই করতে পারেননি। মঈন ৭ ওভারে ৪১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন। আর আদিল রশিদ ১০ ওভারে ৭৬ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। উপমহাদেশে স্পিন বোলাররা সাফল্য পান। সেই সাফল্যে বাংলাদেশ বরাবরই শক্তিশালী দলগুলোকে হারিয়ে দেয়। বিপাকেও ফেলে দেয়। আর তাই যখনই কোন দল বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলতে আসে, তখন দলে স্পিন নির্ভরতা বাড়িয়েই নিয়ে আসে। ইংল্যান্ড দলও তাই করেছে। এক, দুই নয়; তিনজন স্পিনার তাই দলে রেখেছে ইংল্যান্ড। শুক্রবার যে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দল ঢাকায় পা রাখে, এ দলে তিন স্পিনারের মধ্যে আছেন একজন অফ স্পিনার মঈন মুনির আলী, আরেকজন লেগ স্পিনার আদিল উসমান রশিদ, তৃতীয়জন লেগ স্পিনার লিয়াম এ্যান্ড্রু ডওসন। মঈন ক্রিকেট বিশ্ব কাঁপাচ্ছেন বলা চলে। বল হাতে দলকে সহযোগিতা করার সঙ্গে ব্যাট হাতেও পারদর্শী। অলরাউন্ডার হিসেবে মঈনের বিকল্প এখন ইংল্যান্ড দলে নেই। বিশেষ করে স্পিন অলরাউন্ডার হিসেবে। ওয়ানডেতে ৪৩টি ম্যাচ খেলে ৪২টি উইকেট নিয়েছেন। পাকিস্তান বংশদ্ভূত ইংলিশ এ অলরাউন্ডার ব্যাট হাতে আরও তুখোড়। ২টি শতক, ৩টি অর্ধশতক আছে তার। সর্বশেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে যে জিতেছিল ইংল্যান্ড, সেই ম্যাচে ২ উইকেট নেয়ার সঙ্গে অপরাজিত ৪৫ রানও করেছিলেন। তার মানে শুধু স্পিনই নয়, ব্যাটেও আতঙ্ক ছড়াতে পারেন মঈন। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে মঈনকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশ্য বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি ম্যাচই খেলেছেন। ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানো এ অলরাউন্ডার ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে হারা ম্যাচটির সাক্ষীও তিনি। সেই ম্যাচে ১৯ রান ও ১ উইকেট নিতে সক্ষম হন। এশিয়ার মাটিতে মঈনের বোলিং-ব্যাটিং দুটিই দুর্দান্ত। দুটি শতকের একটি এশিয়ার মাটিতেই। তাও আবার অভিষেক ওয়ানডেতেই। ২০১৪ সালের নবেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোয় ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেই ১১৯ রানের ইনিংস খেলেন মঈন। এশিয়ার মাটিতে ১১টি ওয়ানডে খেলে গড়ে প্রতিম্যাচেই ১ উইকেট করে আছে মঈনের। যদিও ওয়ানডের চেয়ে টেস্টেই (৩০ ম্যাচে ৩টি শতক, ৭টি অর্ধশতক ও ৭৭ উইকেট নিয়েছেন) বেশি সুনাম কুড়িয়েছেন। ২০১৫ সালের উইজডেন এ্যালমানেকের বর্ষসেরা ক্রিকেটারও হয়েছেন। এরপরও মনে করা হচ্ছে, এর আগে ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে ও বিপিএলে একবার দুরন্ত রাজশাহীর হয়ে খেলে যাওয়া এ স্পিনার বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে উঠতে পারেন। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামবেন। তাতে যেন রোমাঞ্চিত মঈন। আগেই বলেছেন, ‘বাংলাদেশের কন্ডিশন আমার খেলার ধরনের সঙ্গে বেশি মানানসই বলে আমিও মনে করি। আমার দলের সিরিজ জয়ে বড় ভূমিকাই রাখতে পারব। স্পিন ওখানে (বাংলাদেশে) বড় নিয়ামক।’ মঈন থাকলেও স্পিন আক্রমণের মূল দায়িত্ব থাকছে রশিদের হাতেই। তিনি যে পুরোদস্তুর স্পিনার। ৩৪ ওয়ানডেতে ৪১ উইকেট নেয়া এ স্পিনারকেই আসল ভয়। কারণ তিনি যে লেগ স্পিনার। লেগ স্পিনে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে নড়বড় হয়ে গেছে। আফগানদের রশিদ খানই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের বেশি ভুগিয়েছেন। আফগানরা যে প্রথম দুই ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলেছে, আবার দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে নিয়েছে; সেটি স্পিনারদের দুর্দান্ত বোলিংয়েই। স্পিনারদের মধ্যে আফগান রশিদতো বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ছন্নছাড়াই করে দিয়েছেন। দ্বিতীয় ওয়ানডে পর্যন্ততো আফগানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫ উইকেটও নেন রশিদ। প্রথম ওয়ানডেতে ২ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩ উইকেট নেন রশিদ খান। লেগ স্পিনে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরাও যে দুর্বল, তা বোঝা গেছে। আর তাই ইংল্যান্ডের আদিল রশিদকে নিয়ে বেশি আতঙ্ক। তিনিও যে একজন লেগ স্পিনার। সাম্প্রতিক সময়ে আবার আদিল রশিদ দুর্দান্ত বোলিংও করছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ যে ইংল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজে জিতল, সেই সিরিজে চার ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ৮ উইকেট নিয়েছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে এখনও কোন ম্যাচ খেলা হয়নি আদিল রশিদের। বাংলাদেশের মাটিতেও খেলা হয়নি। গতবছর নবেম্বরে যে পাকিস্তানের বিপক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সিরিজ খেলল ইংল্যান্ড, সেই সিরিজের মাধ্যমেই শুধু এশিয়ার মাটিতে চার ম্যাচ খেলেছেন। সবমিলিয়ে ৪ উইকেটও নিয়েছেন। এ স্পিনারের ওয়ানডে অভিষেক ২০০৯ সালে হলেও সেই সময় ৫ ওয়ানডে খেলে বিশেষ কিছু করে দেখাতে পারেননি। আর তাই সাড়ে চার বছর তাকে দলে নেয়া হয়নি। আবার ফিরেছেন। ফিরে ভালই করছেন। ২০০৯ সালে পাঁচ ম্যাচে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। আবার ২০১৫ সালে ফিরে ২৯ ম্যাচে ৩৮ উইকেট নিয়ে ফেলেছেন। সাবেক স্পিনার গ্রায়েম সোয়ানের পর মঈনই দলের স্পিন বিভাগকে আলোকিত করে রেখেছিলেন। রশিদ এসে আলো আরও বাড়িয়ে দেন। এ দুই স্পিনারের বামহাতি ডওসনও আছেন। তবে মঈন-রশিদ জুটিকে মাত দিয়ে একাদশে সুযোগ করে নেবেন, তা বোধহয় সম্ভব নয়। মঈন কিংবা রশিদ যদি খুব বেশি খারাপ বোলিং না করেন; তাহলে মাত্র ১ ওয়ানডে খেলেই ২ উইকেট নেয়া এ স্পিনারকে একাদশে রাখার সুযোগ কমই। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে আসার আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের ফল ৪-০ হয়ে যাওয়ার পর মঈন ও রশিদকে বিশ্রাম দেয়া হয়। সেই সুযোগে পঞ্চম ওয়ানডেতে অভিষেক হয় ডওসনের। ২ উইকেট নিতে গিয়ে আবার ৮ ওভারেই ৭০ রান দেন। ইংল্যান্ডও ম্যাচটি হেরে যায়। তবে ডওসনকে নিয়ে কোন দুঃশ্চিন্তা নেই। প্রস্তুতি ম্যাচে যে রকম বোলিংই করেন, ওয়ানডেতে আসলে মঈন-রশিদ জুটিই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের জন্য আতঙ্ক হয়ে উঠতে পারেন।
×