ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফতুল্লায় প্রস্তুতি ম্যাচে ৫১ রানের ইনিংস

অবশেষে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত মুশফিকের

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৫ অক্টোবর ২০১৬

অবশেষে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত মুশফিকের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তিনি মিডলঅর্ডারের স্তম্ভ, আস্থা নিয়ে তার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকে দল। কিন্তু সেই আস্থাটা যেন ক্রমেই অবিশ্বাসের কালো মেঘে ছেয়ে যেতে শুরু করেছে। এজন্য মুশফিকুর রহীমের সাম্প্রতিক সময় দুরবস্থার জন্যই দায়ী হয়ে উঠেছে। দলের অপরিহার্য ও নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হিসেবে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ খ্যাতি পেয়ে গেলেও সেটার প্রতিদান দিতে অবিরাম ব্যর্থ হয়ে চলেছেন মুশফিক। ব্যাট হাতে টানা ব্যর্থতার ছাপটা তার উইকেটরক্ষক হিসেবে দায়িত্বটার ওপরও বড় প্রভাব ফেলেছে। সম্প্রতিই সফরকারী আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে নিজের দুটি দায়িত্ব ও কর্তব্যই ভালভাবে পালন করতে পারেননি তিনি। নিজেকে ক্রমেই এক অমানিশার মধ্যে হারিয়ে ফেলছিলেন মুশফিক অনুশীলন আর প্রচেষ্টায় চরম পেশাদারিত্ব দেখানোর পরেও। এ কারণেই তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে শেষ মুহূর্তে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মঙ্গলবারের প্রস্তুতি ম্যাচে মুশফিককে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফতুল্লায় অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে দারুণ ব্যাট করে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ৪ নম্বরে নেমে ৫৭ বলে ৫ চারে ৫১ রান করেছেন তিনি। আফগানদের বিরুদ্ধে সদ্য সমাপ্ত তিনম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে মুশফিক রান করেছেন ৬, ৩৮ ও ১২ রান। অথচ এ তিনটি ম্যাচেই তার সুযোগ ছিল বড় ইনিংস উপহার দেয়ার। কিন্তু দলের আস্থার প্রতীক হয়েও সেটা করতে পারেননি। এমনকি উইকেটকিপিংয়েও করেছেন অমার্জনীয় কিছু ভুল। অথচ তিন ফরমেট মিলিয়ে বাংলাদেশের এখন সেরা ব্যাটসম্যানদের বিবেচনা করলে তিনজনের নামই আগে চলে আসে। সর্বাধিক রান করার তালিকায় ক্রমানুসারে নাম তিনটি হচ্ছেÑ তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মুশফিক। কিন্তু টানা ১৯ আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুশফিক ১৭ ইনিংস ব্যাট করে ১২.৫৬ গড়ে করতে পেরেছেন মাত্র ২০১ রান! নেই কোন অর্ধশতকও। এর মধ্যে ১৬ ম্যাচই ছিল ক্ষুদ্র ফরমেটের টি২০ ক্রিকেটে। অথচ গত বছরটা ওয়ানডেতে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন মুশফিক। ২০০৬ সালে ওয়ানডে অভিষেক হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সেরা সময়টা গত বছরই। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে সাফল্যময় বছরটিতে মুশফিকও ছিলেন দুর্দান্ত- ৪টি অর্ধশতক ছাড়াও দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ১৮ ওয়ানডের ১৬ ইনিংসে ব্যাট করেছেনÑ ৫১.১৩ গড়ে করেছেন ৭৬৭ রান। আর কোন একটি বছর এত বেশি গড়ে রান করতে পারেননি মুশফিক। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামার আগে বাংলাদেশ সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছিল গত বছর ১১ নবেম্বর। সে ম্যাচে ২৮ রান করেছিলেন মুশফিক। তখন থেকেই সময়টা খারাপ মুশফিকের? না, খরাটা শুরু হয়েছিল আগেই। টেস্ট ক্রিকেটেও দারুণভাবে ব্যর্থ হচ্ছিলেন একের পর এক। ১১ টেস্ট ইনিংসে ব্যর্থতার পর অবশেষে গত বছর জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একটি অর্ধশতক হাঁকাতে পেরেছিলেন। আর জিম্বাবুইয়ের বিরদ্ধে তিনম্যাচের সিরিজের প্রথমটিতে ১০৭ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস খেলে রানে ভালভাবে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে তিনি ২১ ও ২৮ রান করেন। এরপর আর কোন ওয়ানডে কিংবা টেস্ট খেলেনি বাংলাদেশ দল। খেলেছে শুধু টি২০। এবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেটে লীগে বেশ ভাল ব্যাটিং করেছেন টানা ১৬ টি২০ ম্যাচে চরম বাজে নৈপুণ্য দেখানো মুশফিক। ১৬ ম্যাচে ৪৫.৮৪ গড়ে একটি সেঞ্চুরি ও ৫টি হাফসেঞ্চুরিসহ ৫৯৬ রান করে তালিকার আট নম্বরে ছিলেন। কিন্তু সবমিলিয়ে তিন ফরমেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই ব্যাট হাতে চরম বাজে সময় যাচ্ছিল মুশফিকের। সেটা কাটাতে পারেননি আফগানদের বিরুদ্ধেও। এ কারণেই তিনি বিসিবি একাদশের হয়ে অনুশীলন ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেন। সফরকারী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘোষিত ১৩ সদস্যের বিসিবি একাদশে ছিলেন না, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ সিরিজকে সামনে রেখে মুশফিককে পরখ করে দেখতে চেয়েছে বিসিবি। সেইসঙ্গে যাতে কিছুটা ব্যাটিং করে নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পান। সেটা বেশ ভালভাবেই করতে পেরেছেন মুশফিক। দারুণ এক অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলেছেন ইংলিশ পেস ও স্পিন আক্রমণের বিরুদ্ধে। ৫৭ বলে ৫১ রানের এ ইনিংসটাই এখন আসন্ন সিরিজে তাকে অনুপ্রেরণা দেবে।
×