ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নাইটিংগেল মেডিক্যাল ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৫ অক্টোবর ২০১৬

নাইটিংগেল মেডিক্যাল ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও শিক্ষা উপকরণ না থাকায় আশুলিয়ার বেসরকারী নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা সরকারী ব্যবস্থাপনায় অন্য মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে কলেজটির শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানান। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ইনস্টিটিউটের মর্যাদা দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তারা। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা শিক্ষামন্ত্রী ও অধিদফতরের মহাপরিচালক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ছাত্রীদের আন্দোলনে। সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের কলেজটির বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোন অনুমোদন নেই। এখানে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, একাডেমিক কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে, নেই ন্যূনতম সংখ্যক শিক্ষক। কলেজে বায়োকেমিস্ট, ইএনটি, এ্যানেসথেসিয়ালোজি, ইমেজিংয়ের মতো বিভাগগুলো সম্পূর্ণ শূন্য। ল্যাব টেকনেশিয়ান, পর্যাপ্ত গ্যালারি, শিক্ষা উপযোগী সুযোগ-সুবিধা নেই। হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে রোগীর সংখ্য নগণ্য। এ্যাম্বুলেন্স, অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ, এনআইসিইউ, ল্যাপরোস্কোপি, এন্ডোস্কোপি, ইমেজিং মেশিন, সিটিস্ক্যানসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম, মাহবুবা জান্নাত, তুষার আহমেদ ও আরিফুল ইসলাম জানান, তাদের কলেজটিতে ৩৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। যাদের ৫০ জনের বিদেশী শিক্ষার্থী। ভর্তির সময় প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০-২৫ লাখ টাকা নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভর্তির পর দেখা যায়, সেখানে নেই শিক্ষক ও মেডিক্যাল শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ। সপ্তম ব্যাচের (ফাইনাল/সেশন ২০১১-১২) শিক্ষার্থী আশরাফুজ্জামান বলছিলেন, নিবন্ধন না থাকায় আমরা পাস করে কোথাও শিক্ষানবিস চিকিৎসক হয়ে কাজ করতে পারব না। যে কারণে আমাদের কারও চিকিৎসা পেশায় যাওয়ার সুযোগ নেই। আরেক শিক্ষার্থী শাহরিন সুলতানা বলেন, ২০১১-১২ সেশনে ভর্তির সময় আমার কাছ থেকে এককালীন ১১ লাখ টাকা নিয়েছে। গত সেশনে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তারা ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা করে নিয়েছেন। আবার ছয় মাস পর পর ৬০ হাজার টাকা সেশন ফি ও তিন মাস পর পর বেতন বাবদ আরও ৩৩ হাজার টাকা কলেজ কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়। কিন্তু সেখানে পড়াশোনা হয় না। তাদের অন্য কোন বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে রাজধানীর আজিমপুর সরকারী গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইনস্টিটিউট করার দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ করেছে ওই কলেজের ছাত্রীরা। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে তারা এ আন্দোলন করে। এ সময় নিউমার্কেট ও আজিমপুর মোড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রচ- যানজটের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অবরোধ কর্মসূচী তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর আগে সকাল ৯টার দিকে কলেজের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীতে মাউশির মহাপরিচালক ওয়াহেদুজ্জামান আসেন। কলেজের শিক্ষার্থীরা মহাপরিচালককে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট করার দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা তার কাছে জানতে চেয়েছেন ইনস্টিটিউট করা হবে কি না। মহাপরিচালক শিক্ষার্থীদের বলেছিলেন উর্ধতন কর্তকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বলা যাবে। এতে ছাত্রীরা কলেজের মধ্যেই বিক্ষোভ করে এবং মহাপরিচালকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে। অবরোধের কারণে নীলক্ষেত মোড়ের আশপাশের রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় তারা গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইনস্টিটিউট করার দাবিতে বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকে। একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের প্রবেশপত্র, সার্টিফিকেট সব কিছুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে অথচ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় দিতে পারছি না। আমরা অনেকেই ইয়ার লস দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মনে করে আজিমপুর সরকারী গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু আজকে আমরা ঢাবির পরিচয়ে পরিচিত হতে পারছি না। তারা আরও বলেন, আমাদের এখনও এসএসসি ও এইচএসসি লেভেলের বই পড়তে হয়। শিক্ষকরা আমাদের শুধু বাংলা পড়ার নির্দেশ করেন। তারা বলেন, বাংলা মাতৃভাষা বাংলাতেই পড়া ভাল। এ সময় তারা সহশিক্ষার দাবিও তোলেন। অবরোধ কর্মসূচী শেষ করে ছাত্রী ইসরাত জাহান সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট না করার পর্যন্ত আমার এই আন্দোলন চলবে। আন্দোলন চালাকালে আজ বুধবার ও বৃহস্পতিবারে পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে কলেজের মূল ফটকে তালাবদ্ধ করে রাখা হবে। আমরা শহীদ মিনার গিয়ে আলোক প্রজ্বলন করব। বুধবার সকাল ১০টা থেকে নীলক্ষেত মোড়েই আমাদের অবরোধ কর্মসূচী পালন করব যতদিন দাবি পূরণ হচ্ছে না ততদিন এই অবরোধ কর্মসূচী চলবে। নিউমার্কেট থানার ওই আতাউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউটের দাবিতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করেছে। তবে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অবরোধ তুলে নেয়। ফলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
×