ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতিদের অবসর ভাতা বৃদ্ধির বিল পাস

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৫ অক্টোবর ২০১৬

রাষ্ট্রপতিদের অবসর ভাতা বৃদ্ধির বিল পাস

সংসদ রিপোর্টার ॥ বিরোধী দল জাতীয় পার্টির বিরোধিতার মুখে অবসরে যাওয়া রাষ্ট্রপতিদের ভাতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ‘রাষ্ট্রপতির অবসর ভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইন-২০১৬’ নামে একটি বিল পাস করা হয়েছে। এ বিলের বিধান অনুযায়ী বর্তমান রাষ্ট্রপতি অবসরে গেলে ৪৫ হাজার ৯০০ টাকা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত তিন সাবেক রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ, জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অবসর সুবিধা পাবেন না। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। বিলটি পাসের বিরোধিতা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা। তারা ‘সর্বোচ্চ আদালত ঘোষিত অবৈধ রাষ্ট্রপতিরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন’ এ বিধান রাখার বিষয়ে কঠোর আপত্তি জানান। অবশ্য তাদের আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। বিলটি পাসের ফলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কোন অবসর ভাতা পাবেন না। বিলটির ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে ফখরুল ইমাম বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার জন্য জাতীয় পার্টি তিনবার সহযোগিতা করেছে। তাই তারা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নিতে পারে না। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, একটি মামলার রায়ে সুপ্রীমকোর্ট এরশাদের ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শাসন আমলের বৈধতা দিয়েছে। ফলে এইচএম এরশাদকে বঞ্চিত করা ন্যায়সঙ্গত হবে না। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির তালিকায় খুনী মোশতাকের নাম থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান। জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, যার মনে যা, লাফ দিয়ে ওঠে তা। এ বিলে কোথাও কোন রাষ্ট্রপতির নাম নেই। তারপরও তারা কেন তাদের দুর্বলতার দিক নিয়ে এলেন? নিজেরাই প্রকারান্তরে স্বীকার কররেন মার্শাল ল’ দিয়েই এরশাদ সাহেব ক্ষমতায় অভিষিক্ত হয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্র ও মার্শাল ল’ একসঙ্গে চলতে পারে না। জাতীয় পার্টি গণতান্ত্রিক দিক মেনেই সংসদে ভূমিকা পালন করে আসছে। বন্দুকের নল দিয়ে অবৈধ ক্ষমতা দখলের পথ চিরতরে কবর দিতে তিনি এ বিলে সমর্থন জানানোর জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানান। পাস হওয়া বিলে রাষ্ট্রপতির পেনশন ভাতা ধরা হয়েছে মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ। বর্তমান রাষ্ট্রপতির ৬১ হাজার ২০০ টাকা বেতন হিসেবে অবসর ভাতা হয় ৪৫ হাজার ৯০০ টাকা। আনুতোষিকের পরিমাণ এক বছরের জন্য প্রদেয় অবসর ভাতা ততগুণ হবে, যত বছর কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আর অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন এ্যাটেন্ডেন্ট এবং দাফতরিক ব্যয় পাবেন। এছাড়া একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসা সুবিধা, সরকারী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিনামূল্যে যানবাহন ব্যবহার, টেলিফোন সংযোগ, কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং দেশের অভ্যন্তরে সার্কিট হাউস ও রেস্ট হাউস ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। বিলে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ছয় মাস রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এমন ব্যক্তি এ সুযোগ-সুবিধা পাবেন। আর অবসর ভাতা গ্রহণ করে কোন রাষ্ট্রপতি মৃত্যুবরণ করলে তাঁর বিধবা স্ত্রী বা ক্ষেত্রমতে বিপতœীক স্বামী মাসিক অবসর ভাতা দুই-তৃতীয়াংশ হারে আমৃত্যু মাসিক ভাতা পাবেন। তবে নৈতিক স্খলন বা অন্য কোন অপরাধে আদালতে দ-িত হলে কোন রাষ্ট্রপতি অবসর ভাতা পাবেন না। এছাড়া সুপ্রীমকোর্ট কর্তৃক অসাংবিধানিক পন্থায় অবৈধ উপায়ে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন বা হয়েছিলেন মর্মে ঘোষিত কোন ব্যক্তি অবসর ভাতা বা অন্যান্য সুবিধা লাভের অধিকারী হবেন না বলেও প্রস্তাবিত আইনে বিধান রাখা হয়েছে।
×