ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে এশিয়ার বৃহত্তম বর্ণাঢ্য পূজামণ্ডপ, ৬০১ প্রতিমা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৫ অক্টোবর ২০১৬

বাগেরহাটে এশিয়ার বৃহত্তম বর্ণাঢ্য পূজামণ্ডপ, ৬০১ প্রতিমা

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ রং তুলির আঁচড়ে সুনিপুণ ভাস্কর্য। এক মণ্ডপে ৬০১ প্রতিমার অনন্য স্থাপন। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি যুগের সনাতন ধর্মীয় কৃষ্টি-কালচার, পৌরাণিক কাহিনী ও পার্বণের ভিন্ন ভিন্নœ দৃশ্যের পাশাপাশি সামাজিকভাবে মানুষকে সচেতন করার অনন্য আয়োজনে প্রতিমা নির্মাণ। অপরূপ সাজসজ্জা আর আলোর খেলায় তা হয়ে উঠছে মনোমুগ্ধকর। ম-পের সামনে বিশাল জলাধারে কৈলাস পর্বতের চূড়ায় ধ্যানমগ্ন মহাদেব। তারই জটায় মা গঙ্গা ঝর্ণারূপে নেমে আসছে। পাদদেশে রাম, সীতা, লক্ষণ আর ভক্ত হনুমান। পর্বতের চূড়ায় মেঘের ভেলা। পুকুরে ভাসমান পদ্ম আর হংসের নান্দনিক উপস্থাপন। ডিজিটাল আলোকসজ্জার অসাধারণ আবহ শিল্প মাধ্যমের অপূর্ব সংযোজন। এভাবেই শারদীয়া দুর্গোৎসবে এশিয়ার বৃহত্তম ম-প তৈরি হয়েছে বাগেরহাটের হাকিমপুর গ্রামে ডাঃ দুলাল শিকদারের বাড়ির বিশাল প্রাঙ্গণে। সর্ববৃহৎ এ দুর্গাম-পে ভাস্কর, মৃৎ শিল্পীরা এখন রং তুলির শেষ আঁচড়ে আরও সুনিপুণ কারুকাজ ফুটিয়ে তুলতে মহাব্যস্ত। প্রতিটি প্রতিমাকে আরও কত আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। একদিন পরই মায়ের পূজা শুরু। মনোরম উপস্থাপন। বাহারি সাজসজ্জা আর আলোর খেলায় প্রাণবন্ত করে তোলা হচ্ছে। ফুসরত নেই শিল্পীদের। দীর্ঘ সাত মাস ধরে ১৫ জন শিল্পী দিনরাত্রি কসরত করে ৬০১ প্রতিমার এই ম-প তৈরি করেছেন। ৬০১ প্রতিমার পাশাপাশি এবার শিকদার বাড়ির পূজার বিশেষ আকর্ষণ জলাধারে নির্মিত ত্রিমাত্রিক শিল্প উপস্থাপনা, যা দুর্গাম-পে নতুন চর্চার শুরু। এই ইনস্টলেশন আর্টে উপস্থাপিত হয়েছে কৈলাস পর্বতের চূড়ায় ধ্যানমগ্ন মহাদেব ও তার জটায় মা গঙ্গার ঝর্ণা রূপে নেমে আসা। তারই পাদদেশে রাম, সীতা, লক্ষণ ও রাম ভক্ত হনুমান। পর্বতের চূড়ায় মেঘের ভেলা এবং সামনে ভাসমান পদ্ম ও হংস এই উপস্থাপনায় নান্দনিক পূর্ণতা এনেছে। ডিজিটাল আলোকসজ্জার এক অসাধারণ আবহ এই শিল্পমাধ্যমের নতুন সংযোজন। লিটন শিকদার ও তাঁর সহধর্মিণী পূজা শিকদারের এই অসাধারণ শিল্পচিন্তার রূপদান করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র দিব্যতনু দাস, যা বাস্তবায়ন করেছেন ভাস্কর আমিনুল ইসলাম আশিক ও তার দল। এক কথায় ভক্ত দর্শনার্থীদের বিমোহিত মুগ্ধতায় ভরে তোলার যেন সব আয়োজনই করা হয়েছে এই ম-পে। ব্যক্তি উদ্যোগে এ আয়োজন অভূতপূর্ব। এখানে শারদীয়া দুর্গোৎসব যেন নতুন মহিমায় আবির্ভূত হয়েছে। প্রতিমা দর্শন করতে করতে আপন মনে গুঞ্জরিত হয়, ‘ও নিরুপম-সুন্দরতম, ও রূপ দেখে সাধ মেটে না আরও দেখার সাধ জাগে..।’ ধর্মপ্রাণ দুলাল ও রমা শিকদার দম্পতি ২০১০ সালে ১০১টি প্রতিমা নিয়ে এই মন্দিরে দুর্গাপূজা শুরু করেন। সময়ের পরিক্রমায় এ বছর তা ৬০১টিতে স্থান পেয়েছে। এ প্রতিমা তৈরির প্রধান শিল্পী খুলনার কয়রা উপজেলার বিজয় বাছাড় জনকণ্ঠকে জানান, পনেরো জন শিল্পী সাত মাস ধরে এই ম-পে অবস্থান করে মূর্তি গড়ছেন। ৬০১ প্রতিমা নিয়ে এবার বৃহত্তর এ ম-প সাজানো হয়েছে। এটি তার জীবনের অবিস্মরণীয় কাজ বলে তিনি উল্লেখ করেন। সরেজমিন পূজা মন্দিরে গিয়ে দেখা গেছে, সত্য-ত্রেতা-দ্বাপর-কলি যুগের সনাতন ধর্মের নানান কাহিনীর অপূর্ব অবতারণা করা হয়েছে। পাশাপাশি ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাজের অন্যায়, অবিচার ও কুসংস্কার দূর করার নানান প্রতিকৃতি নির্মাণ করা হয়েছে। আয়োজক লিটন শিকদার ও তার সহধর্মিণী পূজা শিকদার বলেন, সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি যুগের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রতিস্থাপন করে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। বহুমূর্তি নিয়ে আঙ্গিক ও বৈচিত্র্যে অসাধারণ মন্দির দর্শন করে মানুষ উজ্জীবিত হবে। নান্দনিক এ আয়োজন দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তিন লক্ষাধিক ভক্ত এখানে আসবেন বলে আয়োজকেরা আশা করেন। আগামী শুক্রবার মহাষষ্ঠীর দিনে এ মন্দিরে শারদীয়া উৎসবের উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। পুজোর পাঁচ দিন এই নির্জন হাকিমপুর শিশু-যুবা-বৃদ্ধার পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে। মিলবে বাহারি আয়োজনে গ্রামীণমেলা। নিরাপত্তার চাদরে থাকবে ঢাকা। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার পঙ্কজ কুমার রায় জানান, প্রতি বছরের মতো এ বছরও আনন্দঘন পরিবেশে দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে। সার্বজনীন দুর্গোৎসবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন ও পুলিশ সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
×