ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চম-প্রয়াস জয়নুলে

নানা মাধ্যমে সমকালীন চিন্তা, দহন শঙ্কা স্বপ্নের বিস্তার

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৫ অক্টোবর ২০১৬

নানা মাধ্যমে সমকালীন চিন্তা, দহন শঙ্কা স্বপ্নের বিস্তার

মোরসালিন মিজান ॥ অনেক আগে পাস দিয়েছেন। ছেড়ে গেছেন চারুকলা। এর পর একেকজন একেকদিকে। তবে মনের টানটা ছিল। অদৃশ্য সেই সুতোর টানে আবারও সবাই একত্রিত হয়েছেন। যার যে মাধ্যম, সেই মাধ্যমে শিল্পকর্ম গড়েছেন। এখন চলছে দলীয় প্রদর্শনী। চারুকলার জয়নুল গ্যালারিতে আয়োজিত প্রদর্শনীর শিরোনাম- আমরা পঞ্চম। অনার্স পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী সবাই। এ কারণেই এমন নামকরণ। একই সময়ের শিল্পী। তবে চিন্তায় ভিন্নতা আছে। প্রদর্শনী ঘুরে তাই বেশ লাগে। অনেকেই মুগ্ধ হয়ে দেখছেন। প্রদর্শনীর শিল্পীসংখ্যা অনেক। প্রায় ৪০ জনের মতো। জায়গা সে তুলনায় কম। জয়নুল গ্যালারির একটি মাত্র কক্ষ। এখানেই যতটা সম্ভব নিজেদের সময়কে মেলে ধরা। বিভিন্ন মাধ্যমের কাজ দিয়ে সাজানো হয়েছে গ্যালারি। কাঠের ওপর চমৎকার রিলিফ ওয়ার্ক করেছেন পিন্টু চন্দ্র দেব। লো রিলিফ। নিখুঁত কাজ। মনে হয় পেন্সিল দিয়ে আঁকা! একটিতে কাস্তে হাতে কৃষক। গলায় মস্তবড় তাবিজ ঝুলছে। মাথায় পরিচিত ঢঙে গামছা প্যাঁচানো। পাশেই আরেকটি রিলিফ ওয়ার্ক। সেখানে কৃষানি। দুজনেরই মাথার ওপর ঘন হয়ে আছে বৃক্ষ। পায়ের নিচে উর্বর ভূমি। ফসলে সমৃদ্ধ। মিষ্টি দেখতে ‘কাপল’ একই সঙ্গে সোনার বাংলার স্বপ্নকে যেন উর্ধে তুলে ধরে। সুমন বসাকের ক্যানভাসে বাংলার প্রকৃতি। তেলরঙে আঁকা ছবিতে নদীর ছোট ছোট ঢেউকে এমনভাবে ধরা হয়েছে যে, তাকিয়ে থাকতে হয় কিছু সময়। নদীসংলগ্ন তীর, সবুজের সমারোহ নিপুণ হাতে আঁকা। শিবানন্দ অধিকারীও নিসর্গপ্রেমী। সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গী হয় তার ইলাস্ট্রেশন। নিসর্গের প্রতি শিল্পীর যে প্রেম, এ্যাক্রেলিক মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। তার ইলাস্ট্রেশনে যে সুন্দরবন দৃশ্যমান হয় সেখানে সুন্দরের ছিটেফোঁটা নেই। প্রাণহীন বিবর্ণ একটি রূপ। সেখানে বৃক্ষেরা ভাল নেই। সব পাতা ঝরে গেছে। প্রাণের বিপরীতে কাগুজে বাঘ হরিণ কুমির বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এভাবে নিজের শঙ্কার কথা বলার প্রয়াস। নামিরা ইসলামও একই রকম সমকালীন। ইলাস্ট্রেশন করেছেন। তার মিক্সড মিডিয়ায় ধর্মের নামে রক্তপাত। এই রক্তপাতের যুদ্ধের সহিংসতার বিরুদ্ধে শান্তির বাণী প্রচারের প্রয়াস নেন শিল্পী। ধ্বংসের মৃত্যুর বিপরীতে উড়িয়ে দেন শান্তির পায়রা। রানিয়া আলম নারীর স্বাধীনতা ও স্বপ্নকে মূর্ত করেছেন। সুন্দর একটি কাজ। চমৎকার উড লিথো। মিক্সড মিডিয়ায় আরেকটি ভাল কাজ উর্মীলা শুক্লার। কয়েকটি মাধ্যম ব্যবহার করে তিনি বলেছেন ‘ঝরাপাতা’র গান। সন্জীব কান্তি দাসের ডিজিটাল মিডিয়া। সেখানে কান্দজি মন্দির। বেশ লাগে এই পোস্টার। প্রদর্শনীর একাধিক শিল্পী সিরামিক বিভাগের। মৃৎশিল্পের ভাষায় নিজের ভাবনার কথা বলেছেন। হেদায়েতুল ইসলাম অপুর পটারি নান্দনিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি স্বতন্ত্র শিল্পভাষা তৈরি করেছে। তুষার কান্তি দাস একই মাধ্যমে ডাক দিয়েছেন ঐক্যের। একটু নিষ্প্রাণ মনে হলেও ডাকটি কানে আসে। এভাবে নানা ধরনের নীরিক্ষা। হরেক চিন্তার বিস্তার। প্রদর্শনীর অন্য শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন রাশেদ কামাল রাসেল, আব্দুস সাত্তার তৌফিক, শামীমা সুলতানা দিপু, সুজাতা সেন, সাঈদা মনিরা হাসান পায়েল, জেসমীন আক্তার, এএসএম রাশিদুল আলম, শাহরীয়ার আলম, শারমীন হক সঙ্গীতা, তানভীর ইসলাম। শিল্পকর্ম গড়েছেন সাইফুল আজম চৌধুরী, আরিফুজ্জামান, হেলেনা আক্তার লাকি, সখিনা আক্তার সিমু, ভদ্রেশু রীটা, নামিরা ইসলাম হাসমি, শক্তিপদ হালদার, মইদুল হাসান, দিদার উল আলম, গোলাম মোস্তফা সবুজ, মিথুন সরকার, জুনায়েদ মোস্তফা, মেহেদী হুসাইন শৈবাল, তুষার কান্তি দাস, হেদায়েতুল ইসলাম অপু। তাহসিনা নাজনিন সূচি, লাকীয়া আলপনা, হাবীবা আক্তার পাপিয়া, এএফএম শাহনেওয়াজ সুধি, জগবন্ধু অধিকারী রঞ্জু, শামসুন্নাহার নাসরিন, জ্যোতির্ময় বিশ্বাস, আসাদুজ্জামান সোহেলের কাজও বলছে শিল্পীদের হয়ে। সবাই মিলে নিজের বিশ্বাস দহন শঙ্কা স্বপ্ন তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছেন। রবিবার শুরু হওয়া প্রদর্শনী আগামী শনিবার পর্যন্ত চলবে।
×