ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে আইএসের হয়ে মার্কিন সেনা হত্যার পরিকল্পনা, বাংলাদেশী গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৫ অক্টোবর ২০১৬

যুক্তরাষ্ট্রে আইএসের হয়ে মার্কিন সেনা হত্যার পরিকল্পনা, বাংলাদেশী গ্রেফতার

বিডিনিউজ ॥ যুক্তরাষ্ট্রে জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হয়ে মার্কিন সেনা সদস্যদের হত্যার জন্য সহযোগিতার পরিকল্পনা করার অভিযোগ আনা হয়েছে বাংলাদেশী এক তরুণের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, ভুয়া পরিচয় দিয়ে নিলাশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফাঁদে ফেলে গত সেপ্টেম্বরে তাকে গ্রেফতার করে এফবিআই। যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নিলাশের বিরুদ্ধে ১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগ দাখিলের পর সোমবার তাকে গ্রিনবেল্ট জেলা আদালতে হাজির করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তারা নিলাশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আদালতে পড়ে শোনান। বাকি শুনানির জন্য ৬ অক্টোবর দিন ধার্য করে বিচারক ওই সময় পর্যন্ত আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এই বাংলাদেশী তরুণের ২০ বছরের কারাদ- হতে পারে। ২৪ বছর বয়সী নিলাশ মোহাম্মদ দাস ১৯৯৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে বসবাস করছেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আইএসকে সমর্থন এবং প্যারিসসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার প্রশংসা করার কারণে গত বছর থেকে তিনি এফবিআই গোয়েন্দাদের নজরে ছিলেন। প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছর সেপ্টেম্বরে নিলাশ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আইএসের প্রতি তার সমর্থনের কথা প্রকাশ করেন এবং প্যারিস ও বাল্টিমোরে হামলার প্রশংসা করেন। পরের মাসে তিনি ট্যুইটারে একজনের ছবি প্রকাশ করেন, যিনি আমেরিকার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চান। নিলাশ ট্যুইটারে ওই ছবির সঙ্গে লেখেন, এই ব্যক্তি মুসলমানদের হত্যা করতে উৎসাহ দিচ্ছে। এরপর গত জানুয়ারিতে ওই বাংলাদেশী তরুণ একটি একে-৪৭ রাইফেলের ছবি ট্যুইটারে প্রকাশ করে লেখেন, এটা কেবল একটি বন্দুক নয়, এটা জান্নাতের টিকেট। তিন মাস পর ৩০ এপ্রিল প্রিন্স জর্জেস কাউন্টিতে তিনি অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন। পরের পাঁচ মাস তিনি ফায়ারিং রেঞ্জে শূটিং অনুশীলন করেন এবং অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আঙ্গুলের ছাপ দেন। চলতি বছর মে মাসে এফবিআইয়ের এক ছদ্মবেশী তথ্যদাতার সঙ্গে নিলাশের যোগাযোগ হয়। নিলাশকে ধারণা দেয়া হয়, সেই ব্যক্তি তার মত একই মতাদর্শ লালন করেন। এরপর জুলাই মাসে তিনি ওই এফবিআইয়ের ওই চরকে বলেন, তিনি সেনাবাহিনীর এক সদস্যকে হত্যা করতে চান, যার ব্যক্তিগত তথ্য তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আইএস এর ছেড়ে দেয়া তথ্যের মধ্যে পেয়েছেন। কিন্তু পরে ওই সেনা সদস্যের তথ্য আর ইন্টারনেটে না পেয়ে এ বিষয়ে আইএসের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব কি না- তা জানতে চান। এফবিআইয়ের সেই তথ্যদাতা এরপর এক সেনা সদস্য সম্পর্কে ভুয়া তথ্য সরবরাহ করেন নিলাশকে। সেই সঙ্গে তাকে বিকল অস্ত্রও সরবরাহ করা হয়। নিলাশকে বিশ্বাস করানো হয়, এই হত্যাকা- চালানোর জন্য আইএসের কাছ থেকে ৮০ হাজার ডলার পাওয়া যাবে। এরপর তারা দুজন সেই অস্ত্র নিয়ে কাল্পনিক টার্গেটকে হত্যা করতে গাড়িতে করে বের হন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে সময় এফবিআই নিলাশকে আটক করে। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল জন পি কার্লিন সোমবার আদালতকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো হামলা চালানোর আগেই বিপজ্জনক সন্দেহভাজনদের ধরে ফেলা। আমেরিকার জনগণ আমাদের কাছে এটাই আশা করে। এফবিআই ও যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসীবিরোধী কর্তৃপক্ষ এভাবে ফাঁদ পেতে ‘জঙ্গী ভাবাপন্নদের’ ধরার নাম দিয়েছে ‘স্টিং অপারেশন’। এর আগে ২০১২ সালে একই কায়দায় কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস নামে আরেক বাংলাদেশী তরুণকে গ্রেফতারের পর ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার ও আল কায়েদাকে সহযোগিতা করার অভিযোগে সাজা দেয়া হয়।
×