ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রহস্যময়ী নারী জঙ্গী জেবুন্নাহার শীলা এখন কোথায়?

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৫ অক্টোবর ২০১৬

রহস্যময়ী নারী জঙ্গী জেবুন্নাহার শীলা এখন কোথায়?

শংকর কুমার দে ॥ রহস্যময়ী নারী জঙ্গী জেবুন্নাহার ইসলাম শীলা। দশ মাস বয়সী এক শিশু সন্তান নিয়ে আজিমপুর জঙ্গী আস্তানা থেকে উধাও। তারপর থেকে তার আর হদিস নেই। অন্য কোন জঙ্গী আস্তানায় তার ঠিকানা? নারী জঙ্গীদের প্রশিক্ষক জেবুন্নাহার শীলা। মিরপুরের রূপনগরে পুলিশ অভিযানে নিহত হয়েছে তার স্বামী মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মেজর মুরাদ। আজিমপুর জঙ্গী আস্তানায় পুলিশ অভিযানের সময়ে তার এক মেয়ে পিংকীকে উদ্ধার করার পর আদালতের নির্দেশে হেফাজতে নিয়ে গেছে তার স্বজনরা। আজিমপুর জঙ্গী আস্তানা থেকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয়ে হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন তিন নারী জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্তকারীরা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সূত্র জানায়, রাজধানীর মিরপুরে মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার ইসলাম শিলাকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্তকারীদের কাছে তথ্য রয়েছে, অন্য জঙ্গীদের স্ত্রীদের সঙ্গে সমন্বয় করতেন এই শিলাই। নিহত জঙ্গী মেজর জাহিদ ও তার পলাতক স্ত্রী শিলা দম্পতির মেয়ে জুনাইরা ইসলাম ওরফে পিংকিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে আদালতের নির্দেশে তাদের হেফাজতে নিয়ে গেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। আজিমপুর জঙ্গী আস্তানা থেকে গ্রেফতার তিন নারী জঙ্গীর চিকিৎসা চলছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। আজিমপুর জঙ্গী আস্তানায় পুলিশ অভিযানের সময়ে আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন নারী জঙ্গীরা হচ্ছে, পলাতক শীর্ষ জঙ্গী নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি, জামান ওরফে চকলেট ওরফে বাসারুজ্জামানের স্ত্রী শায়লা আফরিন ও নিহত জঙ্গী তানভীর কাদেরীর স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে আজিমপুর জঙ্গী আস্তানায় পুলিশ অভিযানের আগেই দশ মাস বয়সী শিশু সন্তানকে নিয়ে তিনি অন্য কোন জঙ্গী আস্তানায় চলে যাওয়ার কারণে গ্রেফতার হওয়া থেকে রক্ষা পেয়ে যায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন নারী জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। তিন নারী জঙ্গীর মধ্যে আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজার স্বামী আবদুল করিম ওরফে তানভীর কাদেরী নিহত হয় আজিমপুর জঙ্গী আস্তানায়। অপর দুই নারী জঙ্গীর স্বামী পলাতক মারজান ও বাশারুজ্জামান। শুধু শীলারই যে হদিস নেই তা নয়, আহত অবস্থায় গ্রেফতারকৃত তিন নারী জঙ্গীর মধ্যে দুই নারী জঙ্গীর পলাতক স্বামীরা কোথায়? নারী জঙ্গী শীলা কি তাহলে পলাতক জঙ্গী মারজান ও বাশারুজ্জামানের সঙ্গেই আছেন? নাকি অন্য কোন জঙ্গী আস্তানায় আছেন তিনি? তাহলে কি আরও জঙ্গী আস্তানা রয়েছে, যেখানে তারা লুকিয়ে আছে ? নানা ধরনের প্রশ্ন নিয়ে এগুচ্ছে তদন্তকারীরা। তদন্ত সূত্র জানান, নিহত জঙ্গী মেজর জাহিদের স্ত্রী শিলাকে ধরার চেষ্টা চলছে। শিলা জেএমবির নারী ইউনিটের কোন সদস্যের আস্তানায় লুকিয়ে থাকতে পারে। শিলা তার স্বামী মেজর জাহিদ মিরপুর রূপনগরে নিহত হওয়ার আগে কিছুদিন সেখানেও ছিলেন। মিরপুর রূপনগর থেকেই স্বামীর সঙ্গে আজিমপুরের জঙ্গী আস্তানায় চলে যান। আজিমপুর থেকে মিরপুরে কিছুক্ষণের জন্য জঙ্গী সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাজে এসে পুলিশের অভিযানে মারা পড়েন মেজর জাহিদ। তারপর থেকে মেয়ে পিংকী ও দশ মাস বয়সী শিশু নিয়ে আজিমপুরে ছিলেন শীলা। কিন্তু পুলিশ অভিযানের আগেই সেখান থেকে চলে আসায় ধরা পড়া থেকে রক্ষা পেয়ে যান তিনি। তারপর থেকেই গা-ঢাকা দেন শীলা। তাকে ধরতে পারলে নব্য জেএমবি ও নিহত মেজর জাহিদ সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তদন্তকারীরা। তদন্ত সূত্র জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে আজিমপুর ২ নম্বর বিডিআর গেটসংলগ্ন ২০৯/৫ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ জঙ্গী আস্তানার আবিষ্কার করে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। এই জঙ্গী আস্তানা থেকে তিন নারী জঙ্গী শারমীন, খাদিজা ও শায়লাকে আহত অবস্থায় গ্রেফতারের পর চিকিৎসা চলছে ঢামেক হাসপাতালে। এদের মধ্যে শারমিন মারজানের স্ত্রী, খাদিজা নিহত জঙ্গী তানভীরের স্ত্রী আর রাহুলের স্ত্রী শায়লা। শারমিন অভিযানের সময় পুলিশকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন বলে জানা গেছে। হাসপাতালের সামনে চারজন পুলিশ সতর্ক পাহারা দিচ্ছেন তিন নারী জঙ্গীকে। তিন নারী জঙ্গীর প্রহরায় দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য বলেন, ২৪ ঘণ্টা নজরদারির মধ্যে রেখে এসব নারী জঙ্গীর চিকিৎসা চলছে। কারণ, একদিকে তারা দুর্ধর্ষ জঙ্গীদের স্ত্রী, অন্যদিকে তারা নিজেরাও নব্য জেএমবির আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য। এদের ছিনিয়ে নেয়ার আতঙ্ক যেমন রয়েছে, তেমন এরা হাসপাতালে থেকেও যে কোন ধরনের অঘটন ঘটাতে পারেন। চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ ছাড়া জঙ্গীদের কেবিনে ঢুকতে হলে অনুমতি প্রয়োজন হয়। সাংবাদিকদেরও প্রবেশ নিষেধ। এই তিন নারী জঙ্গী নিজেরা অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা এবং পিস্তল ও মরিচের গুঁড়া দিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছিলেন। পুুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢামেকে চিকিৎসাধীন তিন নারী জঙ্গীকে পলাতক নারী জঙ্গী জেবুন্নাহার শীলা, তাদের স্বামী মারজান, বাশারুজ্জামান ও অন্য জঙ্গীদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে জেবুন্নাহার ইসলাম শীলাকে গ্রেফতার করা গেলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে নিহত মেজর জাহিদের সঙ্গে কোন কোন জঙ্গী নেতার ঘনিষ্ঠতা ছিল, জাহিদ কীভাবে জঙ্গীবাদে জড়ালেন, জাহিদের কথামতো শিলাও কেন জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হন, নব্য জেএমবি নারী জঙ্গী সদস্য কতজন এমন আরও অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে। এ বছরের গত এপ্রিলে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুই সন্তান নিয়ে পুরোপুরি জঙ্গীবাদের সঙ্গে মিশে যান এই দম্পতি। আজিমপুর জঙ্গি আস্তানা থেকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার হওয়া তিন নারী জঙ্গিকে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিন নারী জঙ্গী সুস্থ হলে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে।
×