ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণে তৈরি হচ্ছে ‘রূপকল্প ২০৪১’

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৫ অক্টোবর ২০১৬

উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণে তৈরি হচ্ছে ‘রূপকল্প ২০৪১’

এম শাহজাহান ॥ ভিশন-২১’র পর এবার উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্নপূরণে তৈরি হচ্ছে ‘রূপকল্প-২০৪১’। এজন্য নতুন অর্থনৈতিক রূপরেখা তৈরি করছে সরকার। আগামী ২০৪১ সাল সামনে রেখেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সব অর্থনৈতিক কর্মসূচী গ্রহণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুর্নীতি কমানো এবং সর্বক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করা। মূলত এগুলোকে ঘিরে ভবিষ্যত অর্থনৈতিক কর্মসূচী গ্রহণ করবে সরকার। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্নপূরণে দিকনির্দেশনা ও এ সংক্রান্ত পরিকল্পনার কথা জানাবেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। জানা গেছে, রূপকল্প-৪১ বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়ানো হবে। বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক স্থাপনে জোর দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এদিকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক এ মূল্যায়ন সরকারের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যেই চূড়ান্তভাবে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়া যাবে। গত ২০১২ সালে দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করার মধ্য দিয়ে দেশের অতি দারিদ্র্যের হার দ্রুত কমে আসছে। জানা গেছে, ২০২১ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুত চাহিদা ২০ হাজার মেগাওয়াট ধরে উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী বছরের মধ্যে নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা, ২০২১ সালের মধ্যে সব মানুষের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা, বেকারত্বের হার বর্তমান ৪০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ওই সময়ের মধ্যে কৃষি খাতে শ্রমশক্তি ৪৮ থেকে ৩০ শতাংশে নিয়ে আসা, দারিদ্র্যের হার ৪৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পরই রূপকল্প-২১ ঘোষণা করে। এ ঘোষণার মূল লক্ষ্য ছিল- দারিদ্র্য কমিয়ে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া। একই সঙ্গে জাতিসংঘ ঘোষিত মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বা এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ঘোষণা অনুযায়ী, এমডিজির অধিকাংশ লক্ষ্যমাত্রা বিশেষ করে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, শিক্ষা ও স্যানিটেশনে দ্রুত সফলতা এসেছে। বেড়েছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও মাথাপিছু আয়। যার কারণে বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়নে বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। এবার রূপকল্প-২১ এর হাত ধরে এবার রূপকল্প-৪১ প্রণয়ন করবে সরকার। জানা গেছে, এসব পরিকল্পনার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গেই দেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে কিছু কাজ করা হয়েছে। সরকারের চলতি মেয়াদে প্রণয়ন করা হবে পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০৪১’। এ পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে, আগামী ২৬ বছরের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশের কাতারে দেশকে নিয়ে যাওয়া। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে সরকার। এ পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ গঠন এবং সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগে গতিশীলতা আনয়ন। এজন্য বিদ্যুত, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতের অবকাঠামোগত সমস্যা দূরীকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারীভাবে এসব পদক্ষেপের ফলে ঘোষিত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে শামিল হতে সক্ষম হবে। সরকারের এ পরিকল্পনার বিষয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেটে দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধির সোপানে আরোহণ এবং মাথাপিছু আয়ের ধারাবাহিক উত্তরণ ঘটিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশের কাতারে শামিল হওয়া সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে চারটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছেÑ জিডিপিসহ মাথাপিছু জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, উচ্চতর আয়ের সুফল সাবর্জনীন করা, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের অর্থনীতি, যেখানে মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৪৫ ডলারের ওপরে কিন্তু ৪ হাজার ১২৫ ডলারের নিচে। উচ্চ মধ্যম আয়ের অর্থনীতির দেশ হতে হলে মাথাপিছু জাতীয় আয় হতে হবে ৪ হাজার ১২৫ ডলারের ওপরে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলারের নিচে। আর উচ্চ আয়ের অর্থনীতির দেশ হতে মাথাপিছু জাতীয় আয় হবে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলারের ওপরে।
×