নারীর প্রতি সহিংসতা শীর্ষক বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ প্রকাশিত হয়েছে। বিবাহিত নারীদের শতকরা আশি ভাগই তার পরিবারের, আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার। এ কথার সরল অর্থ দাঁড়াচ্ছে প্রতি দশজন বিবাহিত নারীর ৮ জনই নির্যাতিত। আরও খোলাসা করে দেখলে এই সত্য আর লুকোনো যাবে না যে, আমাদের নিজেদের কিংবা আশপাশের সিংহভাগ পরিবারেই নারী নির্যাতনের ধারা বহাল রয়েছে। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক বিবাহিত নারীই নয়, বাল্যবিবাহের শিকারসহ মেয়ে শিশুরাও ওই নির্যাতনের বাইরে নয়।
সমাজে নারীরা এগিয়ে চলেছেন। অথচ হঠাৎ হঠাৎ নারী নির্যাতনের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, সেগুলোর প্রকৃতি ও অন্তর্নিহিত নির্মমতার পরিচয় পেয়ে আমাদের বিবেক যেন বিবশ হয়ে পড়ে। এখনও স্বামীর হাতে স্ত্রীর মানসিক ও শারীরিক নিগ্রহের ঘটনা ঘটে চলেছে। তবে এটাও অস্বীকারের কোন উপায় নেই যে আমাদের সমাজে যে পরিমাণে নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘটে তার বড় অংশই গণমাধ্যমে অপ্রকাশিত থেকে যায়। বহু নারী মুখ বুজে সর্বংসহা হয়ে লাঞ্ছনা ও পীড়ন সহ্য করে যান।
প্রতি বছর নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের আওতায় হাজার হাজার নতুন মামলা দায়ের করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতনের যত ঘটনা ঘটে তার মাত্র শতকরা ১০ ভাগ মামলা হয়ে থাকে, বাকি ৯০ ভাগ ঘটনার মামলা সামাজিক কারণে বা চক্ষুলজ্জার জন্য হয় না।
নারী নির্যাতন একটি সামাজিক ব্যাধি, বাংলাদেশে এই ব্যাধি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সমাজের যে কোন স্থানে, যে কোন শ্রেণীতে, যে কোন বয়সী নারী যে কোন সময় এই ব্যাধির শিকার হচ্ছেন। বাইরে নারীরা নিরাপদ নয়, তেমনি ঘরেও তারা নির্যাতনের শিকার হন। অনেক ক্ষেত্রেই বিবাহিতরা স্বামী ছাড়াও শ্বশুরবাড়ির লোকজন যেমন শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ, দেবর কর্তৃক নির্যাতিত হন।
বাংলাদেশে আছে শিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইন, যে আইন বার বার সংস্কার করতে হয়েছে। কারণ দেখা গেছে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে গেছে, আবার নির্দোষ অনেককে এই আইনের ফাঁদ পেতে কেউ কেউ নিজের স্বার্থ হাসিল করছে। নড়াইলে নারী নির্যাতনের যে বর্বর ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কেউ কেউ মনে করে থাকে স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা স্বামীর অধিকার। এ মানসিকতার পরিবর্তন করলেই নারী নির্যাতন অনেকখানি বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু আইন দিয়ে নারী নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়। বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সমাজ আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। এমনকি এখন বাল্যবিবাহের ঝুঁকির ভেতর রয়েছে এমন অল্পবয়সী মেয়ে নিজের বিয়ে ঠেকিয়ে দিচ্ছে সমাজে এমন দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে। তারপরও দেশ থেকে এসব নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। দেশে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে বাল্যবিবাহের হার তথা মেয়েদের ওপর নির্যাতন কমে আসবে বলে ধারণা করা যায়। এ জন্য নারী নির্যাতনের সকল ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দরকার অধিকতর সামাজিক সচেতনতা।