ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে তারুণ্যের সাইবার ক্রাইম

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ৪ অক্টোবর ২০১৬

বাড়ছে তারুণ্যের সাইবার ক্রাইম

আহাদ মল্লিকের নামে একটি মেইল এলো। নাইজিরিয়ার এক বিশাল বড়লোকের এতিম কিন্তু বিপদগ্রস্ত নাবালক ছেলের অভিভাবক হবার অনুরোধ জানিয়ে লেখা। প্রাপ্তবয়স্ক হলে ছেলের নামে টাকা হস্তান্তর হবে ও তার দেশের বাইরে আসার ব্যবস্থা করতে হবে কিন্তু এসবের জন্য একজন বিদেশী পার্টনার দরকার এবং অনেক খোঁজখবর করে আহাদকে সে এই দ্বায়িত্ব দিতে আগ্রহী। তিনি স্বভাবতই আপ্লুত হয়ে সাহায্য করতে চান -রিপ্লাই দিলেন। টাকার অঙ্কটাও ছিল মাথা ঘুরিয়ে দেবার মতো। এরপরে ট্রান্সফার ট্যাক্স, কাগজপ্রাপ্তি, নোটরাইজেশন, আইনী জটিলতা, উৎকোচ প্রদান, খাবার, থাকার জায়গা ইত্যাদি অজুহাতে টাকা নেয়া হতে থাকে তাঁর কাছ থেকে। প্রতিবারই টাকার পরিমাণ খুব কম হওয়ায় আহাদ টাকা পরিশোধ করতে থাকেন এই আশায় যে ভবিষ্যতে তাঁর পারিশ্রমিক হিসেবে বড় অঙ্কের টাকা অপেক্ষা করছে। কিন্তু তা আর আসে না। ততদিন পর্যন্ত নানা বাহানায় টাকা নেয়া হতে থাকে যতদিন পর্যন্ত না আহাদের মতো মানুষদের দেবার মতো টাকা শেষ না হয়ে যায় অথবা হতাশ হয়ে তাঁরা নিজেরাই দেয়া বন্ধ করে দেন। ঘটনা ২- আইরিন জাহানের কাছে একটি চমৎকার ইলেকট্রনিক গ্রিটিং কার্ড এসেছে। কে পাঠাল? তিনি যুগপৎ উল্লসিত ও কৌতূহলী হলেন। কার্ডের নোটিফিকেশন এসেছে ফ্রেন্ডসগ্রিটিংসকোম্পানি.কম নামের একটি কোম্পানি থেকে। তাতে লেখা যে, কার্ডটি দেখতে চাইলে তাঁকে একটিভএক্স কন্ট্রোল নামে একটি প্রোগ্রাম ইন্সটল করতে হবে। তারপর আসলো একটি ইউজার এগ্রিমেন্টের লম্বা লিস্ট। আজকাল ইইউএলএ অথবা এন্ড ইউজার লাইসেন্স এগ্রিমেন্ট কথাটার সাথে অনেকেই পরিচিত। ইন্টারনেট দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াবার সময় বহুবার পরের ধাপে এগুবার জন্য এই টার্মগুলোর সাথে ‘অনুমতি দিচ্ছি’ চিহ্নিত বক্সের পাশে টিক দিতে হয়। এ সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যা হয়, না পড়েই আইরিন সম্মতিতে চাপ দিয়ে ফেললেন। তারপরেই শুরু“ হলো বিপত্তি। এগ্রিমেন্টে লেখা ছিল যে তিনি আসলে তাঁর কম্পিউটারে স্পাইওয়্যার স্থাপনের অনুমতি দিচ্ছেন যা সেটা থেকে নির্দিষ্ট সময় পর পর গ্রিটিং কার্ড স্পন্সর কোম্পানিকে ডাটা পাঠাবে। শুধু তাই না চুক্তিঅনুসারে একই সফটওয়্যার তাঁর ইমেইল এড্রেসবুকে থাকা প্রতিটি ঠিকানায় একই বার্তা পাঠাবে, অর্থাৎ এখন তাঁর সাথে তাঁর বন্ধুপরিচিতরাও আক্রান্ত হবে। না জেনেই একটি ভাইরাস ছড়ানোয় তিনি শামিল হয়ে পড়ছেন।সাইবারক্রাইম বলতে অনেকেই বোঝেন শুধু আপত্তিকর ছবি, আক্রমণাতœক মেসেজ থ্রেট কিংবা ওয়েবসাইট হ্যাকিং। এছাড়াও অনেক নতুন নতুন ধরনের সাইবার অপরাধ দেখা যাচ্ছে। বিস্তৃত হচ্ছে এর সংজ্ঞা। কতভাবে যে অন্তর্জালে ঘোরা ব্যবহারকারীর ক্ষতি করছে অপরাধীরা তার ইয়ত্তা নেই। লটারিতে আইফোন জেতার মেইল খুব পরিচিত একটি অপরাধ কৌশল। প্রলুব্ধ হয়ে কিছু টাকা খসালেই প্রতারিত হতে হয়। বড় প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির ওয়েবসাইটের আদলে ওয়েব পেজ তৈরি করে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের সময় তাতে ব্যাংকিং ও ব্যক্তিগত তথ্য, পাসওয়ার্ড চেয়ে নিচ্ছে অপরাধীরা। না বুঝে দিয়ে ফেললেই অনলাইন মানিব্যাগ এ্যাকাউন্টটি থেকে সব টাকা গায়েব। স্পর্শকাতর ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি তো আছেই। আছে স্প্যাম বিজ্ঞাপনবন্যা। এমতাবস্থায় সাইবার অপরাধ থেকে নিরাপদ থাকতে সতর্কতার কোন বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে পাওয়া কিছু পদক্ষেপ আপনাকে নিরাপদ থাকতে অনেকটা সাহায্য করবে। ১। খুব সতর্কতার সাথে ওয়েবঠিকানা চেক করে তারপর সাইটে ব্যক্তিগত তথ্য দিন। একান্ত ব্যক্তিগত ছবি, তথ্য অনলাইনে শেয়াার করা একেবারেই অনুচিত। ২। এ্যাকাউন্টগুলোতে সংখ্যা ও অক্ষর চিহ্নের সমন্বয়ে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। প্রতি এ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড দিন। নির্দিষ্ট সময় পরে পরে সেগুলো বদল করুন। দুইস্তরবিশিষ্ট ভেরিফিকেশন ও প্রবেশ সুযোগ যেখানে যেখানে আছে সেই সুবিধা নিলে আরও ভাল সুরক্ষা পাওয়া যাবে। ৩। কোথাও সম্মতি দেবার আগে ভাল করে যাচাই করে নিন। যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত নয় এমন কোম্পানির ওয়েবসাইট ব্যবহারে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। ৪। এছাড়াও অনলাইনে কোথায় কোন অবিশ্বাস্য লোভনীয় অফারে যাচাই বাছাই না করে সাড়া দেয়া বা বার্তা প্রেরণ করা ঠিক না। কোন কিছু ডাউনলোড বা কোন লিঙ্কে ক্লিক করার আগে বুঝে শুনে তারপরে ক্লিক করতে হবে। তাই অপ্রত্যাশিত লিঙ্কে ক্লিক করা ঠিক না, কোন স্থান এসেছে না জেনে মেইল খোলাও অনুচিত। ৫। শক্তিশালী ফায়ারওয়াল ব্যবহার করুন। খুব স্পর্শকাতর ব্যবসায়িক তথ্যের সুরক্ষায় কম্পিউটারে তথ্যের কোডকরণ বা এনক্রিপশন খুব কাজে দেয়। শক্তিশালী এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা ও হালনাগাদকরণও খুব জরুরী। সবশেষে বিপত্তি এড়াতে তথ্যের একটি ব্যাকআপ রাখা আবশ্যক যাতে করে কোন কারণে হারিয়ে গেলেও তার পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়। ডিপ্রজন্ম ডেস্ক
×