ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইয়াকুব ভূঁইয়া

স্বপ্নের কারিগর

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ৪ অক্টোবর ২০১৬

স্বপ্নের কারিগর

প্রথমে তাকে বিশ্বাস করতে পারেনি কেউ। এমন কি তার বন্ধুরাও। গতানুগতিক চিন্তা ভাবনার মধ্যেই সীমিত ছিল তার বন্ধুরা। তারা তাকে বলত আমাদের বয়স খুবই কম। এখন আমাদের উচিত একাডেমিক ডিগ্রী অর্জন করা। যার মাধ্যমে আমাদের সফলতা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু তিনি কিছুতেই বন্ধুদের কথা কানে নেয়নি। তার বিশ্বাস তিনি পারবে। বয়স কোন বিষয় নয় কেবল মাত্র মনের জোরেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব। নিজের প্রতি বিশ্বাস থেকেই সকল কাজের শুরু। বর্তমানে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। যদি সেদিন প্রতিবেশী আর বন্ধুদের কথা কানে নিত তাহলে হয়ত আর আজকের দিনটা দেখতে পারত না। শুরুর গল্পটা এমনি ছিল মার্কিন তরুণ উদ্যোক্তা এ্যাডাম হরিয (ধফধস যড়ৎরিঃু)। এ্যাডাম হরিয ১৯৯১ সালে আমেরিকার লসাঙ্গলসে জন্মগ্রহণ করেন। বয়স যখন পনেরো তখন তিনি লসাঞ্জলেসের প্যাসিফিক পালিসাদেসের (ঢ়ধপরভরপ ঢ়ধষরংধফবং) হাইস্কুলের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া একজন ছাত্র। তখন তার এক সহপাঠী ভৌতিক একটি ব্লগ প্রতিষ্ঠা করে। যা পরবর্তী সময়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরিণামে তার সহপাঠীকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ঘটনাটি উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। কিন্তু নাছোড়বান্ধা এ্যাডামের মনে ঘটনাটি দুশ্চিন্তার পরিবর্তে নতুন ভাবনারই তৈরি করল। তিনি সফলতার জন্য বেছে নিলেন ইন্টারনেটকে। কেবল মাত্র ইন্টারনেটের মধ্য দিয়েই জীবনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। যেই ভাবনা সেই কাজ এ্যাডাম প্রতিষ্ঠা করলেন একটি ওয়েবসাইট। যার মাধ্যমে তিনি শহরের মানুষকে মিউজিকের দ্বারা বিনোদন প্রদান আর শহরের বিভিন্ন স্থান খুঁজে বের করতে সহায়তা করতেন। পাশাপাশি তিনি তার ওয়েবসাইটের সহায়তায় কিছু কাপড়-চোপড় বিক্রি করতেন। শহরের আট শ’ মানুষকে তিনি তার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সেবা প্রদান করতেন। অল্প দিনেই তিনি কিছুটা সফলতা অর্জন করেন। কিন্তু হঠাৎ এক অজানা কারণে তার ব্যবসাটি বন্ধ হয়ে যায়। এই ব্যর্থতা কি নিভিয়ে দেবে এ্যাডামের আশার প্রদীপ? না তিনি মোটেই তা বিশ্বাস করতেন না। তিনি নতুন করে ভাবতে শুরু করেন তার অতীতের ভুলগুলো নিয়ে। তিনি বিশ্বাস করতেন কেবল ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। মূলত এখান থেকেই তার সফলতার গল্প শুরু। তিনি খুলে ফেলেন নতুন একটি শিক্ষামূলক ওয়েববসাইট। যার মাধ্যমে কিভাবে অনলাইনে সফল হওয়া যায় তা শিক্ষা দিতেন। বর্তমানে পনেরো থেকে শুরু করে যে কোন বয়সের মানুষ তার এই ওয়েবসাইট থেকে সেবা গ্রহণ করে থাকেন। তার অনলাইন সেবাসমূহ হলো সেল ফোন ট্রেসার (পবষষ ঢ়যড়হব ঃৎবধংঁৎব), ডুড আই হ্যাট মাই জব (ফঁফব ও যধঃব সু লড়ন), মোবাইল মনপলি (সড়নরষব সড়হড়ঢ়ড়ষু), মোবাইল মাস্টারমাইন্ড (সড়নরষব সধংঃবৎসরহফ)। শুরুর দিকে তিনি সেল ফোন ট্রেসার ও মোবাইল মনপলি এই দুটি কোর্স নিয়ে কাজ করেন। সেল ফোন ট্রেসার এই কোর্সটির মাধ্যমে তিনি মানুষকে শিখাতেন কিভাবে সেল ফোনের দ্বারা অর্থ উপার্জন করা যায় আর মোবাইল মনপলি কোর্সটির দ্বারা তিনি নিজের পণ্য দ্রব্যসমূহ কিভাবে বাজারজাত করতে হয় সেসব উপায় শিখাতেন। কোর্স দুটির মাধ্যমে তিনি খুবই অল্প সময়ে এক লাখ ডলার উপার্জন করেন। পাশাপাশি তিনি তার অন্যান্য কোর্স নিয়ে কাজ শুরু করতে থাকেন। মাত্র আঠার বছর বয়সে তিনি ওডি এ ফাইভ মডেলের গাড়িটি ক্রয় করেন তার উপার্জিত অর্থের মাধ্যমে। নিজের কর্মের সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কর্তৃক প্রণীত প্রথম এক শ’ তরুণ সফল উদ্যোক্তার তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেখানে বয়সের স্বল্পতা সকলের সমস্যা সেখানে তিনি এই অপ্রাপ্ত বয়সকেই কাজে লাগিয়েছেন তার কাজের হাতিয়ার হিসেবে। তিনি তার কাজের জন্য নির্বাচন করেন একদল তরুণকে। যারা তার ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ গ্রহণ করে উপকৃত হতে পারবে। তিনি তাদের বুজিয়ে ছিলেন আমাদের বয়স এখন খুবই কম। আমরা চাইলে কিছু একটা করতে পারি যার সহায়তায় আমরা সফল হতে পারব। যদি তুমি প্রথমে ব্যর্থ হও তাতে তেমন কি আসে যায়। জীবনে যা কিছুই ঘটুক সব কিছুই সহজভাবে নিতে হয়। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে অবশ্যই সব কিছু সহজে মেনে নেয়ার মানুসিকতা থাকতে হবে। রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার ভাবনা ত্যাগ করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে অন্যের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। তিনি মনে করেন যেহেতু আমরা তরুণ তাই আমাদের হারানোর কিছু নেই। এখনও আমরা একই গৃহে পিতা-মাতার সঙ্গে বসবাস করছি। রেস্তরাঁর পঞ্চাশ ডলারের বিল প্রদান করতে বলা হচ্ছে না আমাদের। যদি আমরা কোন কাজে ব্যর্থ হই তাতে দুশ্চিন্তার কি? এখনও আমরা ¯স্কুল পড়ুয়া ছাত্র। আমরা কেবল ব্যর্থতাকে ছেলে মানুসিকতা হিসেবে ধরে নিতে পারি। যদি আমরা কাজকে উপভোগ করতে পারি আর কাজের প্রতি মনোযোগী হই তাহলে সফলতা অবশ্যই আসবে। এভাবেই হাজারও তরুণ উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিয়ে আসছেন এ্যাডাম। ‘সৃষ্টির জন্য দশবার ব্যর্থতা মেনে নিতে পারার মানুসিকতাই একজন সফল উদ্যোক্তার জন্ম দেয়’।
×