ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইলিশ আহরণ এবার ৫ বছরের রেকর্ড ছাড়াবে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৪ অক্টোবর ২০১৬

ইলিশ আহরণ এবার ৫ বছরের রেকর্ড ছাড়াবে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সাগরে রুপালি ফসল খ্যাত ইলিশে সয়লাব হয়ে গেছে এবারের মওসুম। মওসুম শেষ হতে সময় এখনও বাকি। এরই মধ্যে এই ইলিশ জেলে সম্প্রদায় ও ভোজন রসিকদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখার পাশাপাশি রফতানির মাধ্যমে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ সুগম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নবেম্বর ২২ দিন ইলিশ ধরা বিক্রি ও মজুদ নিষিদ্ধ করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে আগামী মওসুমে এই ইলিশ দেশের জন্য বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে আসবে বলে মৎস্য বিভাগীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রসমূহে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, এবারের মওসুমে আহরিত ইলিশ পরিমাণে যেমন গত কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙ্গেছে, তেমনি আকারেও বড় হয়েছে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম এবং সীতাকু- হয়ে সন্দ্বীপ চ্যানেল এবং চাঁদপুরসহ দেশের সর্বত্র ইলিশের ছড়াছড়ি। প্রতিদিন সাগর থেকে জেলেরা টনে টনে ইলিশ আহরণ করছে। ঘাটে ঘাটে ফিশিং বোট ও ট্রলার থেকে ইলিশের চালান চলে যাচ্ছে পাইকারদের গদিতে। সেখান থেকে বিক্রির জন্য চলে যাচ্ছে খুচরা বাজারে। এবার ইলিশের আহরণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রি মূল্যও কমেছে। ফলে সব শ্রেণী পেশার মানুষ এবার ইলিশের স্বাদ নিতে পেরেছে। মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবারের মওসুমে ইলিশের আহরণের পরিমাণ গত ৫ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। ইতোপূর্বে ২০১২ সালে সাগর থেকে আহরিত ইলিশের পরিমাণ ছিল ১৩ সহস্রাধিক টন। পরের বছরগুলোতে ইলিশ আহরণে ভাটা পড়ে। জেলেরা দলে দলে ইলিশ ছাড়াই সাগর থেকে ফিরে আসার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ইলিশ মওসুমে মাত্র ২ সহস্র্রাধিক টন ইলিশ আহরিত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স এন্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, সরকার ইলিশের প্রজনন মওসুমকে গুরুত্ব সহকারে দেখভাল করার পদক্ষেপ নেয়ায় এবং জাটকা ধরা বন্ধে কঠোর হওয়ায় মা ইলিশের প্রজনন বেড়েছে। এর পাশাপাশি জাটকা নিধন অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় এর আকার বেড়েছে। প্রসঙ্গত, ইলিশের প্রধান প্রজনন মওসুম ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর হয়ে থাকে। এ সময়ে আইন অমান্য করে মা ইলিশসহ ছোট বড় এবং জাটকা ধরার কাজে নিয়োজিত থাকে জেলেরা। সরকার পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার ঘটনা রয়েছে বিগত মওসুমগুলোতে। ফলে আইন অমান্য করে ইলিশ আহরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ না হলেও অনেকাংশে হ্রাস পাওয়ায় এবারের মওসুমে তার প্রতিফলন ঘটেছে। সামুদ্রিক মৎস্য অধিদফতরের পরিসংখ্যা অনুযায়ী বছরে যে পরিমাণ ইলিশ উৎপাদিত হয়ে থাকে তা সাগরে উৎপাদিত মোট মাছের পরিমাণের ১১ থেকে ১২ শতাংশ। ইলিশ মূলত সাগরকেন্দ্রিক। কিন্তু প্রজনন মওসুমে মা ইলিশ চলে আসে মিঠা পানিতে। চাঁদপুর এলাকায় এর আধিক্য রয়েছে। মৎস্য বিভাগ ও সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণার প্রণীত রিপোর্ট অনুসারে সরকার গত কয়েক বছরে ইলিশ নিয়ে কড়া নজরদারি আরোপ করেছে। এ দফতরগুলো সূত্রগুলো দাবি করছে, প্রজনন মওসুম ও জাটকা নিধন বন্ধে ইতিবাচক প্রভাব বয়ে আসায় এবারের মওসুমে ইলিশে সয়লাব হয়ে গেছে। সূত্রমতে, সরকারের এ পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা জরুরী। এতে করে ইলিশের প্রজনন সুবিধায় এর পরিমাণ যেমন বাড়বে তেমনি বাজারে অন্যান্য মাছের সঙ্গে ইলিশের আকাল দেখা যাবে না। চট্টগ্রামের ফিশারি ঘাট, সীতাকু-, সন্দ্বীপ চ্যানেল এবং চাঁদপুরে এবারের মওসুমের শুরু থেকে সাগরে ফিশিং বোটগুলো টনে টনে মৎস্য আহরণ করছে। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নবেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ বন্ধের বিষয়টি নামমাত্র যেন না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের নজরদারি হতে হবে কঠোর। মৎস্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যেহেতু মাছের রাজা ইলিশ, সেহেতু সেই ইলিশ যাতে কোন অবস্থাতে নিধনের কবলে না পড়ে তাতে জেলে সম্প্রদায়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এবারের মওসুমে ব্যাপক পরিমাণে ইলিশ আহরিত হওয়ার কারণে বাজারে এর দাম আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। আহরিত ইলিশ আড়তে যাওয়ার আগে এর চালান দেখলেই বোঝা যায় কি পরিমাণ ইলিশ প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা অনুযায়ী এবারের মওসুমে এত বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ার একমাত্র কারণ এর বিচরণ ক্ষেত্রে এবং প্রজনন ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থান থাকা। উল্লেখ্য, সরকার প্রথম দিকে ১২ দিন পরবর্তীতে ১৫ দিন এবং এবার ২২ দিন সাগরে ইলিশ আহরণ বন্ধ, বিক্রি, মজুদ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। যা আগামীতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব বয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
×