ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্থগিত প্রাইম মুভার ধর্মঘট নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত আজ

কন্টেনার জট কমাতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ হিমশিম

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৪ অক্টোবর ২০১৬

কন্টেনার জট কমাতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ হিমশিম

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রাইম মুভার ধর্মঘটে সৃষ্ট কন্টেনার জট স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে রীতিমতো হিমশিম অবস্থা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের। কর্মসূচী স্থগিত হওয়ার তিনদিন অতিবাহিত হলেও বন্দর অভ্যন্তরে কন্টেনারের স্তূপ। দিন-রাত কন্টেনার ডেলিভারি দিয়েও যেন ইয়ার্ড হালকা করা যাচ্ছে না। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, যদি স্বাভাবিক গতিতে কাজ চলে তাতেও অন্তত দশ দিন লাগবে। তবে আজ মঙ্গলবার আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠকে সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। সমস্যার আপাত সমাধানে বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্বস্তি এলেও উৎকণ্ঠা পুরোপুরি কাটেনি। প্রাইম মুভার মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা লাগাতার ধর্মঘট স্থগিত হয় গত শুক্রবার দুপুরে। মাত্র সাড়ে চারদিনের এ কর্মসূচীতে নজিরবিহীন কন্টেনার জট সৃষ্টি হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। প্রায় অচল হয়ে যায় বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। কারণ কন্টেনার ডেলিভারি না হওয়ায় জাহাজ থেকে নামানো পণ্য রাখার স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। সেই জট দূর করতে এখন চলছে দিবা-রাত্র ব্যস্ততা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালেও ইয়ার্ডে কন্টেনার ছিল ৪০ হাজারের বেশি। অথচ ধারণক্ষমতা ৩৬ হাজার টিইইউএস। তবে দিনশেষে কন্টেনারের পরিমাণ ৩৮ হাজারের নিচে নেমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমদানি-রফতানির বাইরে অনেক খালি কন্টেনারও রয়েছে, যা ইয়ার্ড দখল করে আছে। বেসরকারী আইসিডি এ্যাসোসিয়েশনের সচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, সোমবার ১৬টি অফডকে রফতানির কন্টেনার ছিল ৫ হাজার ৭০০। অফডকে আসার অপেক্ষায় বন্দর ইয়ার্ডে আমদানির কন্টেনার রয়েছে ৪ হাজার ১৭০ টিইইউএস। আইসিডিগুলোতে আমদানি-রফতানি ও খালি কন্টেনার মিলে সোমবারের ফিগার ৫৫ হাজার ৭০০ টিইইউএস। তিনি জানান, কর্মসূচী স্থগিত হওয়ার পর থেকে দ্রুততার সঙ্গে কন্টেনার পরিবহন হচ্ছে। তবে আমদানি-রফতানিকারকদের উৎকণ্ঠা এখনও কাটেনি। কারণ মঙ্গলবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয় তার ওপর নির্ভর করছে সংকটের সুরাহা হলো কি-না। পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মইনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু বলেন, ধর্মঘটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পোশাক শিল্প। জাহাজীকরণ হয়নি ৩ হাজার কন্টেনারের। প্রচুর অর্ডার বাতিল হয়েছে। এছাড়া আমদানির কন্টেনার বন্দরে আটকে থাকায় উৎপাদনও ব্যাহত হয়েছে। তিনি জানান, দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে সোমবার তারা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কর্তৃপক্ষ আমদানিকারক, রফতানিকারক ও বন্দর ব্যবহারকারী সকল পক্ষের সহযোগিতা চেয়েছে। সমন্বিতভাবে কাজ করে সংকট উত্তরণ ঘটাতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিজিএমইএ’র এই নেতা। বন্দর সূত্রে জানা যায়, সাড়ে চারদিন কন্টেনার পরিবহন না হওয়ায় এখন আমদানিকারকদের চাপ পড়েছে। স্বাভাবিক দিনের চেয়ে বেশি হারে কন্টেনার ডেলিভারি হচ্ছে। এই হারে চলতে থাকলে পরিস্থিতি নরমাল হবে। তবে অন্তত দশদিন লাগবে আগের পর্যায়ে ফিরে যেতে। ঈদের লম্বা ছুটিতে বন্দর খোলা থাকলেও শিল্প কারখানাসহ দেশের প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানই বন্ধ ছিল। তখন পণ্য উঠানামা ঠিক থাকলেও আমদানিকারকরা ডেলিভারি নেন না। ফলে সকল ছুটিতেই কন্টেনারের স্তূপ বড় হয়। এক পর্যায়ে স্বাভাবিকও হয়ে যায়। কিন্তু এর মধ্যে প্রাইম মুভার ধর্মঘট বন্দর এবং পুরো আমদানি-রফতানি সেক্টরকে বেকায়দায় ফেলে দেয়। প্রসঙ্গত, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি এলাকায় স্থাপিত ওজন স্কেলে ৩৩ টন বেশি ওজনের পণ্য বহনের দায়ে জরিমানা এবং চালক ও শ্রমিকদের হয়রানির প্রতিবাদে এই লাগাতার কর্মসূচী শুরু করেছিল প্রাইম মুভার মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সোমবার শুরু হওয়া এ ধর্মঘট চলে ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত। আর মাত্র সাড়ে চারদিনের ধর্মঘটে অনেকটাই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে। তবে সড়ক ও সেতু বিভাগ সর্বনিম্ন ওজন ৩৩ টন থেকে বাড়িয়ে ৪২ টন করতে যাচ্ছে বলে আভাস মিলেছে। আজই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে এমনই আশা করছেন মালিক-চালক এবং আমদানি-রফতানিকারকরা।
×