ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিটিআরসির অভিযান চলবে

নকল মোবাইল সেটে বাজার সয়লাব, প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৪ অক্টোবর ২০১৬

নকল মোবাইল সেটে বাজার সয়লাব, প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতা

ফিরোজ মান্না ॥ বাজারে নকল মোবাইল হ্যান্ডসেটের ছড়াছড়ি। নকল মোবাইল সেট আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশের পর গত বুধবার থেকে নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে সারাদেশেই অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ওই দিনই রাজধানীর হাতিরপুল এলাকায় মোতালেব প্লাজায় অভিযান চালিয়ে কয়েক কোটি টাকার নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট জব্দ করেছে বিটিআরসি। বিটিআরসি অভিযান পরিচালনায় র‌্যাব ও পুলিশের সহযোগিতা নিচ্ছে। অভিযান চলমান থাকবে বলে বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এসব মোবাইল সেট কিনে একদিকে গ্রাহক প্রতারণার শিকার হচ্ছে। আবার সরকার বিরাট অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। এখন আবার এই মোবাইল সেট ব্যবহার করে জঙ্গী তৎপরতাও চালানো হচ্ছে বলে খবর মিলেছে। দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এমন কাজ করতে দেয়া হবে না বলে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, দেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহক প্রায় ১২ কোটি। এই গ্রাহকের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নকল মোবাইল সেট ব্যবহার করছেন। এতে গ্রাহকরা যেমন প্রতারিত হচ্ছে-অন্যদিকে সরকার বিরাট অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। বিটিআরসির অনুমোদন নিয়েই হ্যান্ডসেট আমদানি করা হলেও প্রতিনিয়ত লাখ লাখ নকল মোবাইল সেট দেশে আসছে। চিহ্নিত কিছু ব্যবসায়ী এই সেটগুলো দেশে এনে দ্বিগুণ-তিন গুণ দামে বিক্রি করছে। নামীদামী মোবাইল কোম্পানির নামে এই হ্যান্ডসেটগুলো বাজারে চলছে। বেশিরভাগ গ্রাহক কোনটা আসল আর কোনটা নকল এটা না জেনেই সেট কিনছেন। অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে বিটিআরসি মুক্তি না খুঁজে অদৃশ্য কারণে তাদের মোবাইল আমদানির সুযোগ দিচ্ছে। নকল মোবাইল সেট চিহ্নিত করার জন্য বিটিআরসির কমিটি এবার শক্ত হাতেই নেমেছে। কোন প্রকার ছাড় দেবে না তারা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, টেলিযোগাযোগ খাত থেকে অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করা হবে। বিভিন্ন উপায়ে যারা দেশে নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট আনছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবেই। তারা একদিকে গ্রাহক ঠকাচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এটা করতে দেয়া হবে না। দেশের নিরাপত্তার জন্যও নকল মোবাইল সেট ঝুঁকিপূর্ণ। বিটিআরসি বলছে, তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকার নকল মোবাইল সেট দেশে আনা হচ্ছে। এই মোবাইলগুলো নামীদামী কোম্পানির মনোগ্রাম লাগানো। কেউ দেখে বুঝতেই পারবে না এসব মোবাইল সেট নকল। চীনের তৈরি এসব নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানিকারককে শনাক্ত করেছে বিটিআরসি। তাদের বিরুদ্ধে কয়েক দিনের মধ্যে অভিযান চালানো হবে। এ বছরের গোড়ার দিকে চারটি আমদানিকারকের ৮৪ হাজার নকল মোবাইল সেট বিমানে আটকের পর বেশকিছু দিন নকল মোবাইল আমদানি বন্ধ ছিল। বর্তমানে নকল মোবাইল দিয়ে বাজার ছয়লাব হয়ে গেছে। এই সেক্টরে বড় ধরনের অনিয়ম হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গ্রাহকদের দাবির পরও মোবাইল ইন্টারনেটের বিল কোনভাবেই কমাননি। নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি। এই সেটগুলোর আইএমই নম্বর ভুয়া। এগুলো যেভাবেই হোক বন্ধ করতে হবে। আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে যত ধরনের আইনী পদক্ষেপ আছে সেগুলো প্রয়োগ প্রয়োজন। তাছাড়া নকল মোবাইল বিক্রি মানেই হচ্ছে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করা। অন্যদিকে প্রশ্ন উঠেছে বিটিআরসির যে জায়গা থেকে নকল মোবাইল সেট আমদানি বন্ধ করার নির্দেশ আসবে সেই জায়গায় গলদ রয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর মোতালেব প্লাজায় বেশিসংখ্যক নকল মোবাইল বিক্রি হয় বলে বিটিআরসির কাছে খবর রয়েছে। কয়েকজন আমদানিকারককে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে বিটিআরসি ও র‌্যাবের সমন্বয়ে গঠিত অভিযান পারিচালনা কমিটি যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেছে। কিন্তু পরে আর কোন অভিযান চলেনি। যদিও এখানে কয়েকটি শোরুমে আমদানি করা নতুন ব্র্যান্ডের মোবাইল সেটগুলোর কোন নাম নেই। নকিয়া ও স্যামসাংয়ের আলাদা স্টিকার করে আমদানি করা সেটগুলোতে লাগিয়ে বাজারে বিক্রি করছে দেদার। সেটগুলো অল্প দিনের মধ্যে অকেজো হয়ে যাচ্ছে। ঠকছেন সাধারণ গ্রাহক। এখান থেকে গ্রাহকদের মুক্তি দিতে বাজার থেকে নকল মোবাইল সেট সরিয়ে নেয়া বিটিআরসির দায়িত্ব। বিটিআরসি জানিয়েছে, এবারের অভিযান অন্য যে কোন বারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। কারণ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি নকল সেট যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার জন্য কঠোর অবস্থান রয়েছে। এবার কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
×