ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিউইয়র্কে সেমিনারে অর্থমন্ত্রী মুহিত

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের নিচে নামবে না

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৪ অক্টোবর ২০১৬

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের নিচে নামবে না

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে ॥ ‘অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমি বলতে পারি যে, এখন থেকে বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার কখনই ৭ শতাংশের নিচে নামবে না। রাজনীতিকদের মধ্যে বর্তমানে যে শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে বাংলাদেশের সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে’-অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ অভিমত পোষণ করেছেন নিউইয়র্কে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন-অভিযাত্রা এবং প্রবাসীদের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক এক মুক্ত আলোচনায়। ২ অক্টোবর রবিবার রাতে নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডে গুলশান টেরেসের মিলনায়তনে এ আলোচনার আয়োজন করে ‘আমেরিকা-বাংলাদেশ বিজনেস এ্যালায়েন্স’। অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘রাজনীতির নামে জ্বালাও-পোড়াওকে বাংলাদেশের মানুষ সমর্থন দেয়নি। এটি অত্যন্ত ভাল একটি উদাহরণ। একইভাবে ধর্মের নামে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সমগ্র জনগোষ্ঠী অঘোষিত একটি ঐক্য রচনা করেছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আহ্বানে।’ অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের এগিয়ে চলার ঘটনাক্রম আলোকপাতকালে বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, ‘আমাদের যুবসমাজ হচ্ছে সবচেয়ে বড় অবলম্বন। তাদের মেধা এবং কর্মনিষ্ঠার প্রশংসা সর্বত্র। এই যুবসমাজকে সঠিক ট্র্যাকে রাখতে অভিভাবককে আরও যত্নবান হওয়া দরকার। দেশ অথবা বিদেশে নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ে ভাল রেজাল্ট দিচ্ছে বলেই নিশ্চিন্ত থাকা উচিত হবে না। তারা কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, কোন ধরনের রাজনৈতিক অথবা ধর্মীয় মতবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা জরুরী। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকার গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রবীণ রাজনীতিক মুহিত বলেন, ‘সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় রাখতে হবে। খোলামেলা কথা বলতে হবে। তাহলে সন্তানেরা সঠিক ট্র্যাকেই থাকবে।’ ‘গুলশান হামলাসহ বিভিন্ন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন মহলে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এটি বাংলাদেশের জন্যে ভয়ঙ্কর একটি অবস্থা তৈরি করেছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বে সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে গোটা জাতি যে ঐক্য দেখিয়েছে, যেভাবে জঙ্গী দমনে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তার ফলে সব শঙ্কা দূর হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জঙ্গী দমনে বাংলাদেশীদের ঐক্যের ঘটনা এখন প্রশংসিত হচ্ছে’-উল্লেখ করেন মুহিত। তিনি প্রবাসীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘জঙ্গীবাদের কোন ঠাঁই নেই বাংলাদেশে। সমগ্র জনগোষ্ঠী জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ-এ কথা বিদেশী বন্ধুদের জানাতে হবে।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন প্রবাসীদের বিনিয়োগের সহায়তা উদার। এ সুযোগ গ্রহণ করা জরুরী।’ এ আলোচনায় আরও অংশ নেন মার্কিন কংগ্রেসে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত কমিটির প্রভাবশালী সদস্য কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান, সাবেক ব্যাংকার ড. আহমেদ আল কবীর, প্রবাসের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নেতা সাঈদ রহমান মান্নান, ইউএস সুপ্রীমকোর্টের এ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সালেহ আহমেদ, ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, শাহনেওয়াজ প্রমুখ। কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রবাসীদের অবদানের প্রশংসা করে বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে প্রবাসীরাও স্বস্তিতে থাকেন এবং আমরাও কংগ্রেসের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ পাব।’ প্রবাসে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের পথিকৃত সাঈদ রহমান মান্নান তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ‘স্বপ্নের দেশে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের অভিজ্ঞতায় মাতৃভূমিকে সেবা দিতে আগ্রহী অনেকেই। এ ব্যাপারে সরকারকে আরও উদারতা প্রদর্শন করতে হবে।’ অপর বক্তারা বলেন, ‘প্রবাসীরা সোচ্চার রয়েছেন বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয় থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে।’ প্রবাসের ব্যবসায়ী নেতারা উল্লেখ করেন, ‘রাজনীতির নামে জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ থাকলে, হরতাল-অবরোধের নামে জনগণকে জিম্মি করার মতো অসহনীয় পরিস্থিতির অবতারণা না হলে বহু প্রবাসী বাংলাদেশে বিপুল অর্থ বিনিয়োগে দ্বিধা করবে না।’ ব্যবসায়ী ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গ এ আলোচনায় অংশ নেন। সকলেই এ আয়োজনের প্রশংসা করেন এবং বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে প্রবাসীরা ব্যাপক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে আগ্রহী।
×