ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আস্থা এবং ভালবাসায় সিক্ত আরাকান রাজ্যের বাণিজ্য প্রতিনিধি দল

বহুমাত্রিক সীমান্তবাণিজ্যের দ্বার খুলছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৪ অক্টোবর ২০১৬

বহুমাত্রিক সীমান্তবাণিজ্যের দ্বার খুলছে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রাখাইন প্রদেশের উচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে ঘুরে, বৌদ্ধ বিহার, পর্যটন স্পট, বিভিন্ন কলকারখানা পরিদর্শন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক ও এদেশীয় ব্যবসায়ীদের আতিথেয়তা পেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন। বাংলাদেশে ঘাপটি মেরে থাকা আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ (আরএসও) বিচ্ছিন্নতাবাদী দলসহ জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি এবং প্রশাসনের অধিক তৎপরতার তথ্য জেনে অত্যন্ত খুশি হয়েছেন মিয়ানমারের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল। স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সময় টেকনাফ স্থলবন্দর ঘাটে বর্তমান সরকারের প্রশংসা করে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশে এসে আমাদের ধারণা পাল্টে গেছে। এখানে স্থানীয় বাঙালী জাতির সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের এতো যে সুন্দর এবং মধুর সম্পর্ক আছে- তা আমাদের ধারণা ছিল না। বৌদ্ধ বিহার-মন্দির পরিদর্শন শেষে রাখাইন প্রদেশের প্রতিনিধিদল স্থাপত্যশৈলীতে দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহারসহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। রাখাইন রাজ্যের উচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসে আস্থা এবং ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ফিরে গেলেন স্বদেশে। মিয়ানমারের বাংলাদেশ দূতাবাসের সার্বিক সহযোগিতায় ৯ সদস্য বিশিষ্ট রাখাইন প্রদেশের উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসেন। এ সময় মিয়ানমার সীমান্ত পথে কক্সবাজার আগমন করলে স্থানীয় প্রশাসন এবং কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদল তাদের উষ্ণ অভিনন্দন জানান। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে ২৬ সেপ্টেম্বর তারকামানের হোটেলে ওশান প্রাডাইসে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত বাণিজ্য উন্নয়ন শীর্ষক দ্বি-পাক্ষিক সংলাপের আয়োজন করা হয়। ওই বৈঠকে মিয়ানমারের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে তাদের একটি বন্ধুপ্রতীম দেশ। তাদের দেশে যথেষ্ট পরিমাণ বিভিন্ন উৎপাদিত পণ্য রয়েছে। তবে সে পরিমাণ ক্রেতা সেখানে নেই। ইয়াঙ্গুন রয়েছে প্রায় ৮শ’ মাইল দূরে। বাংলাদেশ হচ্ছে মিয়ানমারের সন্নিকটের দেশ। তারা এদেশের সঙ্গে ব্যাপকভাবে বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে চায়। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা পাঠালে তারা (মিয়ানমার) অগ্রাধিকার দেবে। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে রাখাইন প্রদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের প্রতিনিধিত্ব করেন রাখাইন এ্যাস্টেট চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান টিন অং উ। রাখাইন প্রদেশের বাণিজ্যের সুযোগ এবং সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেন রাখাইন প্রদেশের ভুক্তা সংরক্ষণ বিষয়ক এবং মিয়ানমার ট্রেড প্রমোশনের পরিচালক শো পেং রাখাইন। দীর্ঘদিন পর মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরের বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেন সিটওয়ের বাংলাদেশ কনসাল এবং হেড মিশন শাহে আলম খোকন। প্রতিনিধিগণ কক্সবাজার অবস্থানকালে স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময়সহ বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করেন। কক্সবাজার ছাড়াও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও মহিলা চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে সংলাপ করেন। চট্টগ্রাম অবস্থানকালে বিভিন্ন শিল্প কারখানা এবং চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন-টেকনাফ হয়ে রাখাইন প্রদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল মিয়ানমার যাওয়ার প্রাক্কালে আগামী নবেম্বরে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদলকে বৈঠকে বসতে (মিয়ানমারে) আমন্ত্রণ জানান।
×