জাপান সরকার ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা সুভাষ চন্দ্র বসুর মৃত্যু নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক অবসানে সহায়তা করতে সম্প্রতি আর্কাইভে থাকা নথি প্রকাশ করেছে। এসব নথি অনুযায়ী, নেতাজী সুভাষ বসু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।
জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিপ্লোমেটিক আর্কাইভ মিনাতো ওয়ার্ডে রাখা এসব নথি সম্প্রতি জনসাধারণ সহজেই দেখতে পারছে। অনেক ভারতীয় বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা বিশ্বাস করে, নেতাজী এখনও বেঁচে আছেন। আর এই ধারণার কারণেই জাপানের হাতে থাকা নেতাজীর দেহাবশেষ ফিরিয়ে দেয়া দেশটির জন্য কঠিন করে তুলেছে। নেতাজীর পরিবারের একাংশ আশা করছে, নথি প্রকাশের ফলে দেহাবশেষ ভারতে ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, বসু ১৯৪৫ সালের আগস্টে বিমান দুর্ঘনায় মারা যান। কিন্তু অনেক ভারতীয় বিশেষ করে তার জন্মভূমি কলকাতার বাসিন্দাদের জোর দাবি, ওই দুর্ঘটনা সাজানো নাটক এবং নেতাজী আসলে যুদ্ধের পর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে থাকতে গিয়েছিলেন। তারা জাপানের নথির সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি দাবি করে নেতাজীর দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনার বিরোধিতা করেন। ভারত সরকার অতীতে এ ঘটনায় তিনটি সরকারী পর্যায়ের তদন্ত করেছে। ২০০৬ সালে ভারত জানায় যে, বিমান দুর্ঘটনা ও দেহাবশেষের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার রেকর্ড দেখাতে পারেনি। ভারত ১৯৫৬ সালে জাপান সরকারকে তাদের নিজস্ব সার্ভে চালাতে অনুরোধ করেছিল। সেই সার্ভের প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশ করা হয় এবং নেতাজীর শোকাহত পরিবারের কাছে দেয়া হয়। নেতাজীর মৃত্যুর সময় যে প্রত্যক্ষদর্শী ও সামরিক চিকিৎসকরা তার পাশে ছিলেন তাদের সাক্ষ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে বলা হয়, ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইপে থেকে চীনের দালিয়ান শহরের উদ্দেশে একটি বিমান উড্ডয়নের অল্প সময় পর দুপুর একটা ৪৫ মিনিটে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় নেতাজীর সারা শরীর পুড়ে যায় এবং তাকে তাইওয়ানের সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়। সে সময় তিনি অন্যদের আগে চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাকে প্রথমে চিকিৎসা দেয়া হয় এবং একই দিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি মারা যান। নথিগুলোতে বলা হয়, কিভাবে তার দেহাবশেষ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জাপানে পাঠানো হয়। নেতাজীর একমাত্র মেয়ে অনীতা বসু পাফ (৭৩) বর্তমানে জার্মানিতে থাকেন। তিনি বলেন, তিনি আশা করছেন- সম্প্রতি প্রকাশিত নথি বিতর্কের অবসান ঘটাবে এবং তার পিতার দেহাবশেষ ভারতে ফিরিয়ে আনা হবে। পাফের আত্মীয় সাংবাদিক আশীষ রায়- নেতাজীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করেছেন। তিনি বলেন, নেতাজী এখনও বেঁচে আছেন- এই ধারণা তার নিজ শহরের মানুষের এবং তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই জিইয়ে রাখা হয়েছে। তিনি আশা করেন, নথি প্রকাশে নেতাজী যে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন- তা আরও অনেক মানুষকে বিশ্বাস করাতে সহায়ক হবে। -এনডিটিভি