ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের ফোনে আলাপ

উত্তেজনা প্রশমনে সম্মত

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৪ অক্টোবর ২০১৬

উত্তেজনা প্রশমনে সম্মত

ভারত ও পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা শেষপর্যন্ত একে অপরের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা চালাতে একমত হয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রায় তিন সপ্তাহ পর এ আলোচনা হলো। পাকিস্তানের জিও টিভি সোমবার এ কথা জানায়। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। জিও টিভি জানায়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ নিশ্চিত করেছেন যে, অজিত দোভাল ও তার পাকিস্তানী প্রতিপক্ষ নাসির খান জানজুয়া ফোনে সাম্প্রতিক সময়ের ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের বিপজ্জনক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন। সরতাজ আজিজ বলেন, উভয় কর্মকর্তাই নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর উত্তেজনা হ্রাস করতে যোগাযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নিউজ ইন্টারন্যাশনাল এ কথা জানায়। সোমবার দোভাল ও জানজুয়ার কথা বলার খবর ওই সংস্থাই জানায়। একই সময়ে আজিজ বলেন, যখন পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর উত্তেজনা সীমিত করতে চায়, তখন ভারত বিপরীতটি চায়Ñ কাশ্মীরের অসন্তোষ থেকে মনোযোগ ভিন্নদিকে সরিয়ে নিতে চায়। তিনি স্বীকার করেন যে, পাকিস্তান কাশ্মীরের দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করতে চায়। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর উত্তেজনা কমাতে এবং কাশ্মীরের প্রতি দৃষ্টি দিতে চায়। তিনি আরও জানান যে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সম্প্রতি তার যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়ে দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনাজনিত ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। আজিজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী একেবারে স্পষ্টভাবে আভাস দিয়েছেন যে, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সীমান্তে উত্তেজনা চলতেই থাকবে। গত সপ্তাহে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে সন্ত্রাসীদের অনেক আস্তানায় সার্জিক্যাল স্টাইক চালায় বলে জানায়। এতে সন্ত্রাসীদের পক্ষে অনেকে হতাহত হয়। তারা ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য ও কয়েকটি বড় শহরে হামলা চালানোর জন্য ভারতে অনুপ্রবেশ করতে সেখানে অপেক্ষা করছিল। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ঘটনার কয়েক দিন আগে পাকিস্তানী সন্ত্রাসীরা কাশ্মীরের উরিতে এক সেনাঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ১৯ জন সৈন্যকে হত্যা করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, উরি হামলাকারীরা শাস্তি না পেয়ে পার পাবে না। পাকিস্তান বৃহস্পতিবার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ঘটার কথা অস্বীকার করে। পাকিস্তান একে সীমান্তের উভয় পাশে গুলিবর্ষণের ঘটনা বলে অভিহিত করে। রবিবার রাতে সন্ত্রাসীরা ভারতীয় কাশ্মীরের এক সেনাক্যাম্প ও সংলগ্ন বিএসএফের একটি ক্যাম্পে হামলা চালায়। এতে এক বিএসএফ সদস্য নিহত এবং অন্যজন গুরুতরভাবে আহত হয়। সন্ত্রাসীরা ঝিলাম নদী পার হয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল বলে মনে করা হয়। ওই ঘটনায় দু’সন্ত্রাসীও নিহত হয়। এ উত্তেজনার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং পাকিস্তান সংলগ্ন আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। ওই সব সীমান্তের ১০ কিলোমিটার ভেতরের লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ফের গুলিবিনিময় ॥ ডন জানায়, সোমবার ভোরে পাকিস্তানী ও ভারতীয় সৈন্যরা নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর নতুন করে গুলিবিনিময় করে। ইসলামাবাদে আইএসপিআরের এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় সৈন্যরা আজাদ কাশ্মীরের ইফতিখারাবাদ শহরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় মধ্যরাতের পর বিনা উস্কানিতে গুলিবর্ষণে আবারও লিপ্ত হয় এবং পাকিস্তানী সৈন্যরা এর উপযুক্ত জবাব দেয়। কোন পক্ষে কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। সেপ্টেম্বরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সীমান্তের উভয় পাশে গুলিবর্ষণের এক শোচনীয় ঘটনায় অন্তত দু’পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। তখন ভারতীয় সৈন্যরা প্রথম প্রতিরক্ষা রেখায় গুলিবর্ষণ করে। ভারত বিরোধপূর্ণ সীমান্ত পেরিয়ে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর কথা দাবি করে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ওই দাবি উড়িয়ে দেয়। পরে জানা যায় যে, পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে এক ভারতীয় সৈন্য আটক হয়। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গুলিবর্ষণের ঘটনায় কয়েক ভারতীয় সৈন্যও নিহত হয়।
×