ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আব্দুল মালেক

দ্বিতীয় বিতর্কের আগে হিলারির কোর্টে বল ও আলেপ্পো মোমেন্ট

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৪ অক্টোবর ২০১৬

দ্বিতীয় বিতর্কের আগে হিলারির কোর্টে বল ও আলেপ্পো মোমেন্ট

মার্কিন নির্বাচনী প্রথম দফা তর্কযুদ্ধ সমাপনীর পর ময়দানে এখন রণংদেহী মূর্তিমান প্রার্থী দুজন পুনঃ পুনঃ হুঙ্কার ছাড়ছেন দ্বিতীয় বিতর্ককে সামনে রেখে। সেই সঙ্গে আবার চলছে নানা রকম ‘ইট পাটকেল’ ছোড়াছুড়ির পালা। ট্রাম্প বলা শুরু করেছেন হিলারি তার স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত নন। আর হিলারি বলছেন, মহিলা ও ল্যাটিনোদের প্রতি ডোনাল্ডের অশ্রদ্ধাটি প্রকট হয় যখন প্রাক্তন মিস ইউনিভার্সকে অভিহিত করেন ‘মিস পিগি’ ‘মিস হাউস কিপিং’ হিসেবে। প্রথম বিতর্ক ডোনাল্ড এবং হিলারি উভয়েই লড়বেন সমান তালে। শুরুর প্রাক্কালে এমন ধারণা কারও কারও ছিল বৈকি! কিন্তু সেই সময়টিতে হাস্য মুখ পরিহাস তরল হিলারির বিপরীতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের গোমড়া মুখের উপমা যেন ছিল সুকুমার রায়ের ‘বোম্বাগড়ের রাজা’র! গণমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া ও ডেমোক্র্যাট দল থেকে বলা হয়েছে, ক্লিনটনই বিতর্কে বিজয়ী আর ট্রাম্প তো মুখবাজিতে কখনও হারবার পাত্রই নন! তার দাবি বিতর্কের মডারেটর লেস্টার হল্ট তাকে ঘায়েল করার জন্য ডোনাল্ডের ট্যাক্স রিটার্ন, ওবামার জন্মস্থানের মতো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন অথচ পররাষ্ট্র মন্ত্রিত্বকালে হিলারি পার্সোনাল সার্ভার সেটআপ করে কেন ৩৩ হাজার ই-মেইল মুছে দিলেন সে বিষয়ে ছিলেন নীরব। তাছাড়া কেনইবা তাকে এক ত্রুটিযুক্ত মাইক্রোফোন দেয়া হয়েছিল? হিলারির বিতর্ক জয়ের পর ডেমোক্র্যাটদের ধারণা হয়েছিল আনডিসাইডেড ভোটারদের একটা বড় অংশ দাঁড়িয়েছে তার পক্ষে। কিন্তু বিতর্ক সমাপনের পর পাওয়া প্রথম সমীক্ষাগুলোর ফলে তাদের সে প্রত্যাশা ততটা পূরণ হয়নি। গত পয়লা অক্টোবর প্রকাশিত ফক্স নিউজের সমীক্ষায় হিলারি ৪৩% ও ট্রাম্প ৪০%। এলএ টাইমস/ইউএস ট্রাকিং ট্রাম্প ৪৭% ও ক্লিনটন ৪২% পয়েন্টস। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হবে সাধারণত সিদ্ধান্তহীন ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভোটারগণ এ ব্যাপারে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ান। এবার মনে হচ্ছে বিজয়ী বা পরাভূত কোন প্রার্থীই এদের মন বদলাতে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। কারণ বেকারত্বের হার হ্রাসে, কর্মসংস্থান ও সন্ত্রাসবাদ দমনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন পরিকল্পনা দিতে পারেননি উভয়েই। বিতর্কে জয়ী হয়েছেন বলে ডোনাল্ড যতই বাগাড়ম্বর করুন না কেন তিনি যে সেখানে পরাজয় বরণ করেছেন সে কথা বিলক্ষণ জানেন নিজেও। এবার তাই তার শিবিরে চলছে বিতর্কপূর্ব সাজ সাজ রব। এ জন্য অনেক আগে থেকেই হিলারির অনুকরণে হোম ওয়ার্ক শুরু করেছেন তিনি। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো প্রেসিডেন্ট ওবামাও গত ’১২ সালে প্রথম নির্বাচনী ডিবেটে রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয়টিতে তিনি হয়েছিলেন বিজয়ী। তার পরেও যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়া হিলারির মতো অভিজ্ঞ প্রতিপক্ষকে স্টেজে মেরে দিয়ে বাজিমাত করা সম্ভব নয় এটাই প্রথম বিতর্ক থেকে ডোনাল্ডের শিক্ষা। নিউ জার্সির গবর্নর ক্রিস কৃষ্টি যিনি এবারের রিপাবলিকান দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তার কাছ থেকেই শুরু করলেন ছবক নেয়া। সেন্ট লুইসে অবস্থিত ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে ৯ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আমেরিকার প্রাক-প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দ্বিতীয় বিতর্ক অনুষ্ঠান। টাউন হল স্টাইলের এই ডিবেটে উপস্থিত থাকবেন গ্যালোপ অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে নির্বাচিত কোন দলের কাছে দায়বদ্ধ নয় এমন একটি ভোটার দল। সেখানে প্রার্থীদের অর্ধেক প্রশ্ন করবেন মডারেটর ও বাকি অর্ধেক প্রশ্ন থাকবে উপস্থিত ও অনলাইনের ভোটারগণ। এবারের মডারেটর হিসেবে থাকছেন এবিসি নিউজের সিনিয়র সাংবাদিক মার্থা রডরিগেজ। প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল, ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সসহ সম্পূর্ণ ডেমোক্র্যাটিক স্টাবি শমেন্ট হিলারির পক্ষে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা চষে বেড়াচ্ছেন রাজ্যে রাজ্যে। পক্ষান্তরে প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ডের পাশে নেই রিপাবলিকান পার্টির বড় অংশটি। এমনকি সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জে. কলিন পাওল ও মিট রমনীর মতো দলের শীর্ষ স্থানীয়রা প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন তারা তাদের দলীয় প্রার্থীকে ভোট দেবেন না। এবারের নির্বাচনে ডোনাল্ডের ট্যাক্স রিটার্ন প্রকাশ না করার মতো স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে হিলারি বারবার উচ্চকিত হয়েছেন। হিলারির স্বপক্ষে দ্বিতীয় বিতর্কের আগেভাগে নিউইয়র্ক টাইমস ফাটিয়ে দিল যেন একটি বম্বশেল- বিলিওনিয়র ট্রাম্প সাহেব ১৯৯৫ সালে ৯১৬ মিলিয়ন ডলার লোকসান দেখিয়ে আইনগতভাবে ফেডারেল ট্যাক্স অব্যাহতি নিয়েছেন। যেটি চলতে পারে ১৮ বছর পর্যন্ত। তাহলে কি বলতে হবে বিতর্কের বল এখন হিলারির কোর্টেই? অবশ্য এ প্রসঙ্গে ট্রাম্পের অন্যতম উপদেষ্টা নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র জুলিয়ানি মিডিয়াকে বলেছেন তার এই কর্মকা- একজন জিনিয়াস স্মার্ট বিজনেসম্যানের মতোই। কারণ আইনগত প্রয়োজনের অতিরিক্ত কর পরিশোধ না করে তিনি তার ব্যবসা, পরিবার ও কর্মচারীদের প্রতিপালন করেছেন বিশেষ দায়িত্বে। এ ব্যাপারে নিউইয়র্ক টাইমসকে ট্রাম্প শিবির অভিহিত করেছে হিলারি, ডেমোক্র্যাটিক দল ও তাদের বিশেষ স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবে। কিন্তু এমন সাফাই মানুষের কাছে গ্রহণীয় হবে বলে মনে হয় না। কারণ আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে গ্রহণ করা এমন সুবিধা ওয়ার্কিং ক্লাসের মানুষ প্রতিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই দেখবে। থার্ড পার্টি সংবাদ ও আলেপ্পো মোমেন্ট কমিশন অন প্রেসিডেনসিয়াল ডিবেট (সিপিডি) কোন তৃতীয় পক্ষীয় প্রার্থীকে বিতর্ক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানায়নি। এবারে দুজন থার্ড পার্টি ক্যান্ডিডেটের উভয়েই পড়ে গিয়েছিলেন এমন অনাহূত ক্যাটাগরিতে। এ বিষয়ে একটি বিবৃতিতে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল লিবারটারিয়ান নমিনি গ্যারি জনসন এবং গ্রীন পার্টির নমিনি জিল স্টেইন দুজনেই পোল রেজাল্টে রয়েছেন হতশ্রী চেহারা নিয়ে। ডিবেটে যাওয়ার জন্য যেখানে প্রয়োজন ১৫% সেখানে তাদের অবস্থান হলো জনসন ৮.৪% এবং স্টেইন ৩.২%। কিন্তু বিতর্কে ডাক না পেয়ে মিডিয়ায় এ নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই দুই প্রতিযোগীর। তারা প্রতিবাদী হয়ে বলে চলছেন সিপিডি হলো ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান পার্টির আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান। সে যাই হোক সংবাদ মাধ্যমে এখন ভেসে বেড়াচ্ছে একজন থার্ড পার্টি প্রার্থী যিনি দু’দুবারের প্রাক্তন নিউ মেক্সিকো স্টেটের গবর্নর ও বর্তমানে গাঁজা কোম্পানির সিইও সেই গ্যারি জনসনকে নিয়ে ভাসছে ‘গ্যারি জনসন’স ‘আলেপ্পো মোমেন্টস’ রঙ্গরস। ‘সেই মোমেন্টসটা এসেছিল যখন কিছুদিন পূর্বে এমএসএনবিসির ‘মর্নিং জো’র প্যানেলিস্ট মাইক বার্নিকল কর্তৃক যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ান নগর আলেপ্পো সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করা হলো ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আলেপ্পো নিয়ে তার কী ভাবনা?’ ইন্টারেস্টিংভাবে হতবাক হতে দেখা গিয়েছিল রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী গ্যারিকে। কারণ জীবনে আলেপ্পো নগরের নামটি পর্যন্ত শোনেননি তিনি! এরপর পুনরায় এমএসএনবিসি টাউন হলের সাম্প্রতিক আর এক অনুষ্ঠানে হোস্ট ক্রিস ম্যাথুস গ্যারির কাছে জানতে চাইলেন ‘এই বিশ্বের বর্তমান নেতাদের মধ্যে তার কাছে পছন্দনীয় ব্যক্তি কে? তখন ঘটল আরও মজার ব্যাপার। এর জবাবটিও দিতে না পেরে বিব্রত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী আমতা আমতা করে বলে উঠলেন ‘আই গেজ আই এ্যাম হ্যাভিং এ আলেপ্পো মোমেন্ট!’ লেখক : আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক [email protected]
×