ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পূজার খাবার

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৩ অক্টোবর ২০১৬

পূজার খাবার

বাংলায় একটি কথা হয়ত আপনি শুনতে পাবেন, ‘ধর্ম যার যার, আনন্দ সবার।’ এ কথাটি বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা দেখি না। কারণ ঈদ-পূজা, বড়দিন বা বৌদ্ধ পূর্ণিমাতে এ দেশের সকলেই একত্রে ছুটি কাটায়। রীতি-নীতি, ধর্মীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠানের বিষয়ে বাঙালী জাতি অনন্য। প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম পালনের বাইরে আর যে জিনিসটি সবার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে খাবার। আজ সে বিষয়ে কথা বলতে চাই। গত কোরবানির ঈদের খাবার প্রসঙ্গে অনেক লেখা ছাপা হয়েছে। এবার পূজার খাবার। শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা হলেও এ সময় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই উপভোগ করে অনুষ্ঠান এবং খাবার। ঠিক যেমন ঈদের আনন্দ দেখা যায় সবারই মাঝে। বারো মাসে তের পার্বণ, তার মধ্যে বড় পার্বণ দুর্গাপূজা। তার পরপরই থাকছে লক্ষ্মীপূজা। হিন্দু বাড়িতে এ সময় মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরির ধুম পড়ে। দুধের সন্দেশ, বাহারি লাড্ডু, নাড়ু, খঁই, বিভিন্ন রকমের মোয়া, পাটালি, পায়েস ইত্যাদি অন্যতম। এসকল খাবার তৈরিতে যে উপাদানগুলো ব্যবহার করা হয় তা হচ্ছে দুধ, চিনি, গুড়, নারকেল, চিড়া, মুড়ি, তিল, সুজি-ময়দা ইত্যাদি। ঘর-দুয়ার, জিনিসপত্র, পোশাকসহ সবকিছুই পরিষ্কার করা হয়। মনেও থাকে আনন্দ, দরকার শুধু কিছু টাকা। একটু গ্রামের দিকে গেলে দেখা যায় আরও কিছু শুকনো খাবারের মেলা, যেখানে পাওয়া বিভিন্ন রকমের চানাচুর, কটকটি-নিমকি, বাদাম, পাপড়, রসগোল্লা, দই-চমচম, কালাইয়ের আমৃত্তি ইত্যাদি। নারকেল-গুড়ের নাড়ু, দুধ-চিনি-নারকেলের নাড়ু, চিড়ার নাড়ু, তিলের নাড়ু, বাদাম-গুড়ের নাড়ু, তিলের মটকা, অনেক নাড়ুর সমাহার এই পূজার সময়। নানান রকমের পিঠার মধ্যে রয়েছে ভাঁপা পিঠা, চিতৈ পিঠা, বড়া পিঠা, মালপোয়া-দুধের পাটিসাপটা। সুস্বাদু এই খাবারগুলো তৈরি করতে বাড়ির মা-বোনদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়। ছোটো কিংবা বড়, শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী অথবা পুরুষ, এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল যে কিনা এ খাবার পছন্দ করে না। সবাই অপেক্ষায় থাকে শরতের এই দিনগুলো ফিরে পাওয়ার জন্য। কয়েক দিনের ছুটিতে পরিবাবের সকলে মিলে আনন্দ করবেÑএমনটাই মন চায় সবাই। আর সেই সাথে চাই এই জাতীয় মিষ্টি খাবার। কোন মা-বাবা হয়ত সন্তানদের ছেড়ে দূরের জেলায়, আবার কোন সন্তান হয়ত মা-বাবাকে ছেড়ে কাজে অথবা লেখাপড়ায়। এ সময় সবার মাঝেই বাড়ি ফেরার প্রবণতা দেখা যায়। অনেকের হয়ত অনেক দিন মায়ের হাতের খাবার খাওয়া হয়নি। অনেকেই হয়ত ভাবছেন, কতদিন পর পরিবারের সকলের সাথে দেখা হবে, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ানোও হতে পারে। পূজার সময় হিন্দু পরিবারে মাংসের থেকে মাছের দিকে বেশি আকর্ষণ থাকে। সবজি জাতীয় খাবার পাশাপাশি তো থাকছেই। পূজার খাবারের মধ্যে আরও কিছু চমকপ্রদ খাবার আছে। যেমন কষানো, মুগডালের ভুনাখিচুড়ি, আলুর দম, আমড়ার চাটনি, লাবড়া, বুটের ডাল, সরষে পটোল, পোস্ত বেগুনি, চিতল মাছের কোপ্তা কারি, ভাঁপে ইলিশ, নারকেল দিয়ে ছোলার ডাল, রসমালাই আরও অনেক প্রকারের সুস্বাদু খাবার। এইতো চলছে ইলিশের সময়, মায়ের হাতের সরষে ইলিশ, ইলিশ পোলাও, ভাজাপোড়া, মুড়িঘণ্ট ডাল-গরম ভাত, পিঠা কিংবা খিচুড়ির সাথে ভাজা ইলিশ, এগুলোই তো পূজার খাবারের বড় আকর্ষণ। বাড়িতে বাড়িতে ভাসবে তেলে ভাজা মাছের সুঘ্রাণ। বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নও যেন পূজারই অংশবিশেষ। শুনেছি এসময় কেউ হিন্দু বাড়িতে গেলে খালি হাতে ফেরে না। কালে-কালে, যুগে-যুগে হিন্দু বাড়িতে নাড়ু-মুড়ির প্রচলনও বাংলার ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে।
×