ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ইংল্যান্ড পরীক্ষা টাইগারদের

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৩ অক্টোবর ২০১৬

এবার ইংল্যান্ড পরীক্ষা টাইগারদের

মিথুন আশরাফ ॥ আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশের। এ পরীক্ষায় ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারায় ফুলমার্ক পায়নি মাশরাফিবাহিনী। এবার বাংলাদেশের সামনে ইংল্যান্ড পরীক্ষা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে নামার মিশন অপেক্ষা করছে। পারবে বাংলাদেশ এ সিরিজে ফুলমার্ক অর্জন করতে? আর মাত্র চারদিন পরই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে নামতে হবে বাংলাদেশকে। শুরুতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হবে। এরপর দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হবে। ৭ অক্টোবর প্রথম ওয়ানডে দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে। এরপর ৯ অক্টোবর দ্বিতীয় ও ১২ অক্টোবর তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। ওয়ানডে সিরিজ শেষে ২০ অক্টোবর চট্টগ্রামেই প্রথম টেস্ট শুরু হবে। ২৮ অক্টোবর শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। এ সিরিজের জন্য অবশ্য প্রস্তুতিটা ভালই হয়েছে বাংলাদেশের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ভুলত্রুটিগুলো ঝালিয়ে নেয়া গেছে। ১০ মাস পর ওয়ানডে খেলতে নেমে আফগানদের বিপক্ষে প্রথম দুটি ওয়ানডেতে ভুগেছে। ব্যাটসম্যানরা সঠিক কাজগুলো করতে পারেননি। আর তাই প্রথম ওয়ানডেতে কোনরকমে ৭ রানে জেতা গেলেও, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২ উইকেটে হারতে হয়েছে। লজ্জা মিলেছে। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে যদি জয় না হতো তাহলে ‘মান-সম্মান’ই যেত। প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে নেমে তা থেকে রক্ষা মিলেছে। শেষ পর্যন্ত স্বস্তি মিলেছে। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হওয়ার আগে আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ হওয়াতে বাংলাদেশই লাভবান হয়েছে। কিভাবে? প্রথমত, ১০ মাস ধরে যে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেনি বাংলাদেশ, সেই জড়তা কেটেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে না খেলে যদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামত বাংলাদেশ, তাহলে ইংলিশরা জেঁকে বসতো। এখন আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ জেতায় যে আত্মবিশ্বাস মিলেছে, তা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে কাজে লাগানো যাবে। ফুরফুরে মেজাজেই ক্রিকেটাররা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে খেলতে নামতে পারবে। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ সময় ধরে যে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেনি বাংলাদেশ, তাতে করে দলের কম্বিনেশনেও সমস্যা হয়েছে। সেই সমস্যা এখন দূর করা গেছে। তিন ওয়ানডেতে অনেক ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা’ও করা গেছে। তাতে ভুলগুলো শুধরে নেয়া গেছে। একটি সঠিক কম্বিনেশনও তৈরি করা গেছে। আফগানদের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে যে সাব্বির রহমান রুম্মনকে তিন নম্বরে খেলানো হয়েছে, তাতে করে শুরুতে ব্যাটিংয়ে সাফল্যও মিলেছে। সাব্বির ৬৫ রান করার সঙ্গে ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গে ১৪০ রানের বড় জুটিও গড়েছেন। এটি বাংলাদেশ দলের জন্য অনেক সুবিধা হয়েছে। আবার স্পিনার মোশাররফ হোসেন রুবেলকে ঝালিয়ে নেয়া হয়েছে। সাড়ে আট বছর পর আবার ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েই মোশাররফ বাজিমাত করেছেন। ৩ উইকেট নিয়েছেন। একজন ভাল স্পিনারও পাওয়া গেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ না হয়ে যদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হতো, তাহলে হয়তো কম্বিনেশন ঝামেলার সুযোগ নিয়েই ইংল্যান্ড সিরিজ নিজেদের কবজায় করে নিত। তৃতীয়ত, আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটি সহজ হয়নি। কঠিনই হয়েছে। তাতে করে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যেও একটা বোধোদয় হবে। আফগানদের বিপক্ষেই এতটা কঠিনভাবে সিরিজ জিততে হয়েছে, তাহলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেতো আরও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়া হতে পারে। আর এই ভেবে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররাও সাবধান হয়ে যাবে। আরও দায়িত্ববান হয়ে উঠবে। হেলা ভাবও দূর হয়ে যাবে। আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ না হয়ে যদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সরাসরি সিরিজ হতো; তাহলে এই হেলা ভাব কাটতে কাটতেই হয়তো বিপত্তি ঘাড়ে চেপে বসত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটি তাই সবদিক দিয়ে বাংলাদেশের জন্য ভাল কিছুই বয়ে এনেছে। এখন সামনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের মিশনই অপেক্ষা করছে। যে সিরিজে খেলতে এরইমধ্যে ঢাকায় এসে রবিবার দুপুরে প্রথমদিনের অনুশীলনও সেরেছে তারা। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার মিশন শুরু করে দিয়েছে। বাংলাদেশ দলতো সেই প্রস্তুতি আফগানদের বিপক্ষে সিরিজেই সেরে নিয়েছে। ২০১০ সালের পর সাড়ে ৬ বছর পর আবার বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে এসেছে ইংল্যান্ড। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেললেও, সিরিজ খেলা হয়নি। এ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনবার দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। প্রতিবারই সিরিজে হারে। ২০০৩ সালে একবার ও ২০১০ সালে দুইবার দুই দলের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজ হয়। প্রথম দুইবার বাংলাদেশে হওয়া সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। আর ২০১০ সালের জুলাইয়ে শেষ সিরিজটি হয় ইংল্যান্ডের মাটিতে। সেই সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ের আশাই তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এরপরতো ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পায়নি ইংল্যান্ড। সর্বশেষ বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ২ উইকেটে হারের পর ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচেও ১৫ রানে ধরাশায়ী হয় ইংল্যান্ড। দুই দলের মধ্যকার ২০১১ সালের আগে ১৪টি ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ইংল্যান্ড ১৩টি ম্যাচেই জিতেছিল। বাংলাদেশ জিতেছিল ১টি ম্যাচ। এরপর ২০১১ সালের পর সর্বশেষ টানা দুই ওয়ানডে ম্যাচেই জিতে বাংলাদেশ। ৭ অক্টোবর যখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ, তখন সর্বশেষ দুই ওয়ানডেতে জেতার আত্মবিশ্বাসতো থাকবেই। সেই সঙ্গে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে যে ২০১৫ সালের বাংলাদেশকেই মিলেছে, সেটিও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে মাশরাফিদের উজ্জীবিতই করে রাখছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে আর টেস্টই আছে। নেই কোন টি২০ ম্যাচ। তবে টেস্টে বাংলাদেশ যাই করুক, সেটা নিয়ে বিশাল কোন ভাবনা নেই। সেটার চেয়ে সবার ভেতর, ওয়ানডেতে বাংলাদেশ কি করবে, সেটি নিয়েই ভাবনা আছে। টেস্টে এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। দুই দলের মধ্যকার চারটি টেস্ট সিরিজে দুটি করে ৮টি ম্যাচ হয়। প্রতিটি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। এরমধ্যে দেশের মাটিতে ২০০৩ ও ২০১০ সালে এবং ইংল্যান্ডের মাটিতে ২০০৫ ও ২০১০ সালে সিরিজ খেলে হারে। প্রতিটি ম্যাচেই আবার ‘গো-হারা’ হারে বাংলাদেশ। ইনিংস ব্যবধানে তিনটি হারতো আছেই। সঙ্গে ১৮০ রান কিংবা ৭ উইকেটের নিচে ব্যবধানে কোন হার নেই। তবে এখন বাংলাদেশ দল অনেক পরিণত। টেস্টেও ভাল দল হয়ে উঠছে। সেইদিকে অবশ্য এ মুহূর্তে সবার মনোযোগ কমই। ২০১৫ সালে ওয়ানডেতে টানা জিম্বাবুইয়ে, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার পর আবার জিম্বাবুইয়েকে সিরিজে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেই ধারাবাহিকতা ২০১৬ সালের প্রথম ওয়ানডে সিরিজে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও বজায় রেখেছে। এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরীক্ষায় নামার পালা। আফগানদের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতে টালমাটাল অবস্থায় থাকলেও তৃতীয় ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মাশরাফিরা। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ইংল্যান্ডওতো সিরিজে হারতে পারে। সেই সঙ্গে সর্বশেষ টানা দুই ওয়ানডে ম্যাচেই যে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ, সেই জয়গুলো থেকে প্রেরণাওতো মিলবে। সেই প্রেরণা নিয়েই এখন সিরিজ জয় এবং ইংল্যান্ড বধের মিশনে নামবে বাংলাদেশ। সেই মিশন সামনে অপেক্ষা করছে।
×