ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশ ঝুঁকিতে টেকনাফের সৈকত

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৩ অক্টোবর ২০১৬

পরিবেশ ঝুঁকিতে টেকনাফের সৈকত

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ টেকনাফে পরিবেশ অধিদফতরের পাঁচ বছর ধরে রয়েছে শুধু অফিস। ওই অফিসে পরিবেশের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। ফলে বিভিন্ন স্থানে পরিবেশ মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তৎমধ্যে পৌরসভার বিভিন্ন করাতকল, বেকারি কারখানা, বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ, যেখানে-সেখানে বাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ, বনের গাছ ও পাহাড় কেটে ঘর তৈরি, সমুদ্রের চরে শামুক-ঝিনুক কুড়ানো, প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে বহুতল ভবন নির্মাণ, কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ আহরণ, বিভিন্ন প্রজাতির পোনা নিধন ইত্যাদি রোধকল্পে পরিবেশ অধিদফতরের বিশেষ নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু টেকনাফ উপজেলায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত পরিবেশের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী না থাকায় উল্লিখিত বিষয়সমূহে কোন তদারকি নেই। টেকনাফ সদর ইউনিয়নের কেরুনতলীর পরিবেশের কার্যালয় পরির্দশনে দেখা যায়, সরকারী বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মাণ করা পরিবেশের কার্যালয়টি বন্ধ রয়েছে। পরিবেশের কার্যালয় ও ডরমেটরির দরজার তালাগুলোয় জ্যাম ও মরিচা ধরেছে। স্থানীয় লোকজন জানায়, গত পাঁচ বছর আগে অতি ধুমধামে পরিবেশের কর্মকর্তাদের জন্য অত্যাধুনিক কার্যালয় ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়। শেষে পরিবেশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদচারণাও হয়েছিল। তারা টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে পরিবেশের ওপর ভাল কাজ করে প্রশংসা কুড়িয়েছিল। ২-৩ বছরের মাথায় হঠাৎ করে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী চলে যায় অন্যত্র। শূন্য হয়ে পড়ে কার্যালয় ও আবাসিক ভবন। বর্তমানে ওই ভবনগুলো দেখার জন্য রশিদ নামে স্থানীয় একজন বৃদ্ধ লোক রয়েছে। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে কক্সবাজার থেকে শরিফুল স্যার আসেন, আবার চলে যায়। এদিকে, সবচেয়ে পরিবেশের ঝুঁকিতে রয়েছে টেকনাফের বিভিন্ন নদ-নদী, সমুদ্র সৈকত ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। নদ-নদীগুলোতে বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে রোহিঙ্গারা। এছাড়া প্রতিদিন সেন্ট মার্টিনগামী ৬-৭টি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করার সময় নাফ নদীতে অসংখ্য বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপ করা হয়ে থাকে। এতে পরিবেশ মারাত্মক দূষিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রতিদিন পর্যটকদের ব্যবহৃত বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ করে ফেলা হচ্ছে সাগরে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বাড়িঘর ও অট্টালিকা নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও ইদানীং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলছে বহুতল ভবণ নির্মাণের কাজ। দ্বীপের লোকজন জানিয়েছেন, সেন্ট মার্টিনে পরিবেশের লোকজন না থাকায় দ্বীপে থাকা প্রবাল পাথর ভেঙ্গে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। কেটে সাবাড় করা হচ্ছে ছিরা দ্বীপের গাছপালা। পরিবেশ অধিদফতরের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী না থাকায় নির্বিচারে উত্তোলনের ফলে দেশের প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক চুনাপাথরও ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের মন মাতানো নিদর্শন, নারিকেল জিঞ্জিরা নামে খ্যাত প্রবাল ও চুনাপাথরের জন্য বিখ্যাত বিশ্বের অন্যতম প্রবালদ্বীপ এ সেন্ট মার্টিন। এ দ্বীপের বালিতে রয়েছে বহুমাত্রিক মূল্যবান খনিজ পদার্থ। গবেষকগণের মতে, দ্বীপটিকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে প্রবাল, শৈবাল, চুনাপাথর, প্রাকৃতিক বস্তুকণার গুরুত্ব অপরিহার্য। কিন্তু পরিবেশ কর্মকর্তাদের নজরদারি না থাকায় প্রবালদ্বীপ থেকে ক্রমে প্রবাল, কেয়াবন, চুনাপাথর ইত্যাদি বস্তু নির্বিচারে উত্তোলন এবং ধ্বংস করার ফলে বিলুপ্তি হতে চলেছে। যত্রতত্র হোটেল-মোটেল তৈরি করায় পরিবেশেরও চরম ব্যাঘাত ঘটছে। পুরো দ্বীপের মধ্যে বেশি চুনাপাথর রয়েছে দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশে। পরিবেশকর্মীদের চরম উদাসীনতার কারণে পরিবেশের এ করুণ অবস্থা বলে মনে করেন দ্বীপের বাসিন্দাগণ। দ্বীপে কোটি টাকা মূল্যের অবকাঠামো ভবন থাকলেও পরিবেশকর্মীদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ জনকণ্ঠকে বলেন, দ্বীপের সামগ্রিক ভারসাম্য রক্ষার্থে প্রবাল, চুনাপাথর, কেয়াবনের কোন বিকল্প নেই। তিনি এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
×