ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাটপণ্য নিয়ে ষড়যন্ত্র!

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩ অক্টোবর ২০১৬

পাটপণ্য নিয়ে ষড়যন্ত্র!

সোনালি আঁশ পাটের গৌরবোজ্জ্বল অতীত যখন সরকারী উদ্যোগে ফিরিয়ে আনার নানামুখী প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে, তখনই এর বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্র। আর এর পেছনে রয়েছে সরকারেরই একটি সংস্থা বিজেএমসি বা বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন। এর একটি উদাহরণ মেলে সম্প্রতি সুদানে সাড়ে তিন শ’ কোটি টাকার পাটপণ্য রফতানির বাজার হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা থেকে। দেশের একটি কোম্পানি সুদানে এই পরিমাণ অর্থের পাটপণ্য বিশেষ করে পাটের বস্তা রফতানির কার্যাদেশ পেয়েছে। সুদানে বিবিধ কৃষিজাত পণ্যের মোড়ক হিসেবে ব্যবহারের জন্য পাটের বস্তার সবিশেষ কদর রয়েছে কৃষকদের কাছে এবং তা সরকার থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশীয় কোম্পানিটি কার্যাদেশ পেয়ে যথাসময়ে পাটের ব্যাগ সরবরাহের জন্য বিজেএমসিকে ৫০ কোটি টাকা অগ্রিমও দিয়েছে। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। তবে এর পর থেকেই শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্র। বিজেএমসিরই একটি স্বার্থান্বেষী মহল লেগেছে এর পেছনে। তারা দেশীয় সংস্থাটিকে পাস কাটিয়ে সরাসরি যোগাযোগ করেছে সুদানের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে, যিনি এক সময়ে সুদানে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে এই নিয়োগ দেয়া হয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার ব্যবসায় ভাটা পড়তে থাকে স্বভাবতই। অতঃপর তিনি একের পর এক অপতৎপরতা চালাতে থাকেন বাংলাদেশী পাটপণ্যের বিরুদ্ধে। আর এতে ইন্ধন যোগাচ্ছে বিজেএমসিরই এক শ্রেণীর আমলা ও কর্মকর্তা। ফলে শেষ পর্যন্ত সুদানে গত কয়েক বছর ধরে চলমান পাটের বস্তা রফতানির এই বৃহৎ বাজারটি শেষ পর্যন্ত হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে এবং তা চলে যেতে পারে অন্য দেশের হাতে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে একাধিক অভিযোগপত্র জমাও পড়েছে। দ্রুত এর সমাধান না হলে হুমকির মুখে পড়বে দেশীয় পাটশিল্প। দেশে পাট চাষসহ পাটপণ্য উৎপাদনে সরকার কয়েকটি কৃষিজাত পণ্য অভ্যন্তরীণভাবে পরিবহন ও বিপণনের জন্য পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে আইন পাস করেছে। পাটপণ্যকে কৃষিজাত বিবেচনায় কৃষককে ভর্তুকি দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। ফলে স্বভাবতই পাট উৎপাদন ও বিবিধ শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনও রফতানিতে একটি তেজীভাব বিরাজ করছে। বিজেএমসির অধীনে ২২টি পাটকলও ভালই চলছে। সে অবস্থায় এই সংস্থারই কোন মহলের কারসাজিতে যদি পাটপণ্য রফতানি ব্যাহত ও বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে আশঙ্কা জাগে বৈকি! রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কাঁচাপাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি কিছুটা বাড়লেও কমেছে পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়। সরকার তথা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় জরুরী ভিত্তিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলেই প্রত্যাশা। ঘরের ইঁদুর যাতে বেড়া না কাটে, সেদিকে সর্বক্ষণ লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয় বৈকি!
×